বিনা টিকিটের দর্শক

Jul 8, 2011
টিভি দেখতে টিকিট কাটতে হয় না। কোনমতে এটা টিভির সংস্থান করতে পারলে বিনে পয়সায় দেখা যায়। টিভির শোরুমের সামনে দাড়ালে বিশাল টিভিও দেখা যায় বিনে পয়সাতেই। ব্যক্তিগতভাবে নিজে টিভি দেখার ভক্ত নই। এমনকি খবরও না। কখনো টিভির সামনেও যাওয়া হয় না। তারপরও প্রযুক্তি যখন সুবিধে দিয়েছে তখন রাতে ঘুমানোর আগে বিছানায় শুয়ে ল্যাপটপে খোজ করা যায়, কোথাও খেলা সরাসরি দেখাচ্ছে কিনা। বিনে পয়সায় ষ্টেডিয়ামের ভেতর দেখা যায় যখন। আর তখনই, এক চ্যানেল থেকে আরেক চ্যানেলে যাওয়ার পথে অন্য দৃশ্যও দেখা যায় ফাও হিসেবে।

তেমনই এক দৃশ্য। এক বেসরকারী চ্যানেলের প্রতিবেদন। একজন মহিলাকে চেপে ধরে রেখেছে একজন, আরেকজন লাঠি দিয়ে আঘাত করছে পায়ের নিচে। চারিদিকে ষ্টেডিয়ামের গ্যালারীর মত সারি সারি মানুষ। সামনের সারি বসে, তার পরের সারি আরেকটু উচু, তারপর আরেকটু। রীতিমত জমজমাট খেলা হচ্ছে।
ভিডিও রেকর্ড কে করেছেন দেখার ধৈর্য্য হয়নি, যতদুর দেখেছি তাতে একজন প্রতিবেদক একে বর্বরতা বলে বর্ননা করছেন, বিভিন্ন জনের সাক্ষ্য নিচ্ছেন যারা নিজের চোখে বর্বরতা দেখার কথা জানাচ্ছেন। থানার তদন্তকারী অফিসারের সাক্ষাতকার নেয়া হল। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করায় সাক্ষীদের উদাহরন টানা হল। একেবারে মোক্ষম প্রমান, তিনি মাথা নিচু করলেন। সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দিলেন।
আমার যতটুকু দেখার দেখা হয়ে গেছে। ওই দর্শকরা। লর্ডসে ক্রিকেট খেলা দেখছেন। এমন জমজমাট খেলা নিজের চোখে দেখার ভাগ্য সবার হয় না। আহা, কত ভালোই না হত যদি সপ্তাহে একদিন কিংবা দুদিন ঘোষনা দিয়ে এটা করা হত। যদি চান ষ্টেডিয়াম বানানোর জন্য একটু যায়গা ছেড়ে দেই। আরে জীবনে আনন্দ বলে তো কিছু আছে।
এটা এক চ্যানেলের খবর। সত্যিকারের খেলা দেখতে হলে অবশ্যই বিটিভির তুলনা নেই। সেখানে যা দেখা গেল;
একজন পুলিশ অফিসার বিছানায় শুয়ে রয়েছেন। পড়নে পাটকরা পুলিশি পোষাক, কোথাও এতটুকু ভাজ নেই, পায়ে বুট। ডানহাতের কব্জির কাছে সাদা ব্যান্ডেজ জড়ানো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘরে ঢুকছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গেছেন দায়িত্বপালনকালে আহত হওয়ায় তাকে সমবেদনা জানাতে। কারন তিনি আহত হয়েছেন ...
মারাত্মক কারনে। একজন নেতা, যার বয়স সম্ভবত ৫০ পেরিয়ে গেছে, একহাতে ব্যান্ডেজ করা আরেকহাতে মোবাইল ফোন, চারিদিকে বর্ম পড়া রায়ট পুলিশ, সেই পুলিশের ওপর আক্রমন করে তিনি তাকে আহত করেছেন। (বাঘের বাচ্চাই বটে!)
সরাসরি খেলা না থাকলে খেলার চ্যানেলগুলোও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পুরনো খেলা দেখায়। পুরনো খেলা নতুন করে দেখার কি আছে ?
টিভি বন্ধ করেও খেলা দেখা দেখে নিস্তার নেই। দেখা না বলে শোনা বলাই ভাল। ভেসে আসছে পাশের বাড়ি থেকে। সম্ভবত গৃহকর্তা এবং গৃহকর্তৃর খেলা। এই খেলার বর্ননা দেয়া প্রয়োজন নেই। দুজনেই মনে করেন একের কারনে অন্যের জীবন নষ্ট হয়েছে। সেকথা পাড়াপ্রতিবেসীকে স্মরন করিয়ে দেন প্রতিদিন। কখনো কখনো সেটা মাত্রা ছাড়িয়েও যায়। তবে সৌভাগ্য এবারে সেটা ঘটল না। বরং একটা ডায়ালগ ভালোই লাগল, চুপ কর। মানুষকে ঘুমাতে দাও।
(আশেপাশে মানুষ আছে তাহলে! কিংবা দর্শক-শোতা।)
অন্য দেশে মানুষ এসব নিয়ে বেশ মাথা ঘামায়। অনেক দেশে সরল সমাধানও দেয়া হয়। যদি দুজন একসাথে থাকতে সমস্যা হয় শ্রেফ আলাদা হয়ে যাও। জীবনের যে কদিন বাকি আছে সেকদিন অন্তত ভাল থাকো। এদেশে সেটা নিন্দনিয়। সংসারে ঝগড়া তো হবেই, তাইবলে ওইসব খারাপ পথে যেতে হবে! কখনোই না। আরে এটাই তো খেলা। এতেই তো আনন্দ।
ওই মহিলাকে পেটানো দর্শকের মত, আহত পুলিশকে দেখতে যাওয়ার নাটকের মত, পাশের বাড়ির স্বামী-স্ত্রীর নিত্যদিনের ঝগড়ার মত আনন্দ কি অন্যকিছুতে পাওয়া যায়। ক্রিকেটে টেষ্ট শেষ হয় পাচ দিনে, এই টেষ্টের শেষ নেই। এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্ম, চলতেই থাকে।
সবচেয়ে বড় কথা, এসব দেখার জন্য টিকিট কাটতে হয় না। পুরো দেশটাই বিনা টিকিটের ষ্টেডিয়াম।

0 comments:

 

Browse