আমাদের এক মহান রাষ্ট্রপতি আছেন

Jul 20, 2011
বিশেষন ব্যবহারের বেশকিছু রীতি আছে। আমি ব্যাকরনের কথা বলছি না, বাস্তব ব্যবহারের কথা বলছি। যদি ছাত্র উল্লেখ করেন তাহলে বিশেষন হচ্ছে মেধাবী। যদি গ্রামের মানুস উল্লেখ করেন তাহলে উল্লেখ করবেন সহজ-সরল। যদি ধর্নীয় বিষয় হয় উল্লেখ করবেন পবিত্র। সেকথা সংসদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যদি সাংসদ, মন্ত্রী এদের বিষয় থাকে তাহলে বলবেন মাননীয়। আর সবাইকে ছাড়িয়ে যদি রাষ্ট্রপতি পর্যায়ে যান তাহলে বলবেন মহামান্য।
বাংলাদেশে এটাই আইন। আপনি রাষ্ট্রপতি ছাড়া কাউকে মহামান্য বলতে পারেন না।
কাজেই সেই মহামান্য ব্যক্তি মহান হবে এটাই তো স্বাভাবিক। অন্য কারো যে ক্ষমতা নেই সেই ক্ষমতা তার আছে। জজ কোর্ট, হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট যদি হার মানে তাহলে তারকাছে ধর্না দেবেন। অন্তত খুন করেও মৃত্যুদন্ড থেকে বাচার এটা সবচেয়ে নিরাপদ এবং প্রমানিত পদ্ধতি।
সামান্য একটু কিন্তু আছে। আপনাকে অবশ্যই আওয়ামী লীগের কেউ হতে হবে। খুন করতে হবে বিরোধী দলের কাউকে।
আমি ইকবালের প্রকাশ্যে খুন করার কথা বলছি না, শাওনের সংসদ ভবনে খুন করার কথাও বলছি না। তারা মহামান্য না হলেও মাননীয় সংসদ সদস্য, কিংবা ছিলেন। এমনকি গামা নামের সেই বিখ্যাত খুনের কথাও কথাও বলছি না। একেবারে সাম্প্রতিক ঘটনা।
যদি জানা না থাকে তাহলে একটু স্মরন করিয়ে দেই (পত্রিকা থেকে)। খুন হয়েছে ২০০০ সালে, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায়। খুন হয়েছেন তিনি বিএনপি নেতা। নির্বাচনের কয়েক মাস আগে। মামলা করে কোন লাভ হয়নি।
নির্বাচনে জয় হল বিএনপির। কাজেই মামলা আবারো চালু হল। একসময় তার রায়ও হল। ২০০৩ সালে মৃত্যুদন্ড দেয়া হল খুনিকে। কিন্তু তিনি লাপাত্তা।
মাসতিনেক আগে তিনি আদালতে আত্মসমর্পন করলেন। এরপর এই ক্ষমা। মহান রাষ্ট্রপতি তাকে অব্যাহতি দিলেন মৃত্যুদন্ড থেকে।
কারো কারো মহত্ব প্রমানের জন্য হয়ত এক ঘটনাই যথেষ্ট। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির জীবনে একবার হজ করা যথেষ্ট না। নিয়মিত করা প্রয়োজন হয়। কাজেই একাজ তিনি বারবার করছেন। আগামীতে লাইনে যারা আছে তাদেরও করবেন।
করবেনই তো, নইলে খুনের ১১ বছর পর খুনি আদালতে আসে কোন সাহসে!
আওয়ামী লীগ বিএনপি যত গলা ফাটাক, বেশির ভাগ সাধারন মানুষ এই দুদলের বাইরে। ভোটের সময় তারাই বেশি ভোটার। কাজেই তারা সুযোগ পেলে নানারকম ফোড়ন কাটবে এটাই তো স্বাভাবিক। এই ঘটনা নিয়েও চলছে নানারকম কথাবার্তা।
কারো বক্তব্য, আরে এইসব নেতারাই তো ইলেকশনে জেতায়। তাগো হাতে না রাখলে চলব ক্যামনে ?
কারো বক্তব্য, কথা কইয়েন না। জানেন না রাষ্ট্রপতি। দ্যাশের সবচেয়ে বড় সন্মান। তারে অসন্মান করলে শাস্তি পাইতে হয়।
কারো বক্তব্য, যারা যুদ্ধাপরাধী-বঙ্গবন্ধুর খুনি আর ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলাকারীদের বাচাইতে চায় তাগো তাড়াতাড়ি ফাসিতে ঝুলান। নাইলে সরকার বদলাইলে সব খুনি বেকসুর খালাস।
কারো বক্তব্য, এত সহজ না। প্রধানমন্ত্রী ১৫ আগষ্ট তার পরিবার হারাইছে, রাষ্ট্রপতি ২১ আগষ্ট তার বউ হারাইছে। তাগো রক্ষা করা এত সমজ না। শাস্তি তাগো হইবই হইব।
কারো বক্তব্য, শাস্তি দিব ক্যাডা ? যারা এক খুনিরে মাফ করে তারা আরেক খুনিরে শাস্তি দেয় ক্যামনে ? লজ্জাশরম কি দুনিয়া থিক্যা উইঠ্যা গেল।
কারো বক্তব্য, আরে শোনেন নাই প্রধানমন্ত্রী কি কইছে। কানাডা হইল খুনীদের রক্ষার যায়গা। যদি বাচতে চান সেখানে যান।
এই বক্তব্যের শেষ নেই। মুখ যতদিন থাকবে বক্তব্যও থাকবে। এরই মধ্যে মুল বক্তব্য বেছে নিতে পারেন।
ভদ্রমহোদয়গন, যদি কাউকে খুন করতে চান আগে আওয়ামী লীগে যোগ দিন, বিরোধীদলের কাউকে খুন করুন। হয়রানিমুলক মামলা প্রত্যাহার করা হবে। যদি ফাসির রায় হয় তাহলে মহান রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করবেন। আমাদের মহান রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায়ই করুন।
যদি আওয়ামী লীগের না হয়ে অন্য দলের হন তাহলে কানাডায় যাওয়ার পথ খুজুন।

0 comments:

 

Browse