ইংরেজিতে বলে ফার-ক্রাই। অন্যদের অগোচরে কাঁদা। বাংলায় একেবারে কাব্যিক। নির্দিষ্ট করে বলে দেয়া, বনবাসী হয়ে কাঁদবেন। বক্তব্য অবশ্য একটাই, তাতে কোন লাভ নেই। যার কারনে আপনার দুঃখ-কষ্ট তাকে যদি না শোনান তাহলে কাঁদায় কোন ফল ফলবে না। বনের পশুপাখি-গাছপালা আপনার কান্নার গুরুত্ব বুঝবে না।
যদি সেকথাও মানতে চান, মনের দুঃখে বনে যেতে চান তাহলে-
বলতেই হচ্ছে বন বলে কিছু নেই। সুন্দরবন চোর-ডাকাতের আড্ডা। সরকার আইন করে দিয়েছে সেটা সংরক্ষিত এলাকা। যাওয়া নিষেধ। চোর-ডাকাত না হয়ে সেখানে গেলে জেলে যেতে হবে। আর অন্যকোথাও বন বলে কিছু নেই। যার অর্থ আপনার অরন্যে রোদনের সুযোগ নেই। আপনার এলাকায় আপনি বন্দি।
তাহলে বন্দির পথ অবলম্বন করা যাক। ঘরের মধ্যে থেকে বাইরের মানুষকে কান্না শোনানোর ব্যবস্থা করা যাক। ডিজিটাল বাংলাদেশে, ফেসবুক-গুগল-ওয়ার্ডপ্রেসের কল্যানে সেটা সম্ভব। আপনার কান্না পৌছে দেবেন সারা বিশ্বের মানুষের কাছে। অরন্যে রোদনের চেয়ে তাতে বেশি ফল ফলবে। সারা বিশ্ব সেটাই বলে। ইরানে নির্বাচনের ইন্টারনেট প্রতিবাদ নাকি ইন্টারনেট জগতের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন ১০ ঘটনার একটা। কাজেই-
একটু থামুন।
আপনি বনে কাঁদলে পশুপাখি কৌতুহলী হয়ে উকি দেবে সন্দেহ নেই। ইন্টারনেটে আপনার কাঁদায় আগ্রহ দেখাবে এটা ধরে নিচ্ছেন কেন ? কার শখ হয়েছে নিজের টাকা খরচ করে আপনার কাঁদা শোনার। ইন্টারনেটের জগত বিশাল। আনেন্দর খোরাক সেখানে কমতি নেই। সেগুলি রেখে আপনার কান্না শুনতে যাবে কে ?
কথাটা বকারামকে বলতে হচ্ছে অভিজ্ঞতা থেকে। বকারামের আশা ছিল ইন্টারনেটের অরন্যে রোদনের। কিছু কাকপক্ষি নিশ্চয়ই উকি মারবে। মারেও। রীতিমত নিজের সময় ব্যয় করে আধঘন্টা-একঘন্টা পর্যন্ত সময় কাটায়। তারপরই, সংখ্যায় তাদের চেয়ে অনেক বেশি, একবার চোখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে রওনা দেয়। কোন শব্দ শুনে তাদের আগ্রহ হয়েছিল সেটাও একধরনের পরিচিতি বহন করে বৈকি। রীতিমত বাংলায় কুত্তার বাচ্চা লিখে সার্চ করে। যদিও বকারাম নিশ্চিত করে বলতে পারে এই শব্দটি সে ব্যবহার করে না। বরং এই প্রানীটিকে রীতিমত স্রদ্ধার চোখে দেখে। মানুষে এতটাই বিশ্বস্ত বন্ধু যে দ্বিতীয়বার চিন্তা না করে বন্ধুর জন্য জীবন দিতে পারে। বিশ্বাসভঙ্গের কোন উদাহরন নেই। ছোটবেলায় কিছু ভুল ধারনা ছিল। গোর্কির লেখায় মিখাইলের গান, ‘মিখাইল যদি হত এক ছোট কুকুরের ছানা’ শুনে অবাক হওয়ার বিষয় ছিল। এখন সেটা নেই।
সার্চ করার বিষয় আরো আছে। আমি সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চের কথায় যাচ্ছি না। সেটা সারা বিশ্বের সব যায়গার মানুষই করে। ইন্টারনেটের মুল ব্যবহারই নাকি সেখানে। বরং অন্য কিছু বিষয় অবাক করা। যেমন ‘খাসি’ কিংবা ‘গরু’ কিংবা ‘আমার বউ’ ইত্যাদি ইত্যাদি।
সত্যিকার অরন্য নেই আগেই বলেছি। যদি ইন্টারনেট অরন্যে কাঁদতে চান তাহলেও ভেবে দেখুন।
0 comments:
Post a Comment