জরুরী সরকার হঠাৎ করে ঘোষনা করেছিলেন মোবাইল ফোনের রি-রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে। অর্থাৎ যারা নিজের নাম-ঠিকানা-ছবি জমা দিয়ে, হাজার টাকা দিয়ে সিম নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে ফোন ব্যবহার করছেন তারা আবার নতুন করে ছবি জমা দেবেন। সাথে আইডি, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স এসবের কপি নিয়ে যাবেন। আইডি-র ব্যবস্থা আমরা করছি। একেবারে সরাসরি সেনাবাহিনীর তদারকিতে। আমার নাম ওঠেনি, কার্ড পাইনি এসব কথা চলবে না। কোনরকম সমালোচনা করবেন না।
কাজেই, যারা কয়েক বছর ধরে মোবাইল ফোন ব্যবহারের অপরাধ করছিলেন তাদের ছুটতে হল। এই নাম্বার পরিচিতদের জানা, কাজেই নাম্বার হাতছাড়া করার উপায় নেই। আর যাদের সে বালাই নেই, যারা মোবাইল ব্যবহারে তত পুরনো নন, ফুটপাত থেকে কিনেছেন, কিংবা একটা কিনলে একটা ফ্রি পেয়েছেন তাদের এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। তাদের লাইন ঠিক থাকবে। আর যদি কাটা পরেও তাতেও ভাবনা নেই। ফুটপাত খোলা আছে। যখন খুশি, যত খুশি কিনে নেবেন। ওদেরও ব্যবসা করার হক আছে।
ফল যা হবার তাই হল। কারো কারো ফোন মিলিটারী নিয়মে কাটা পড়ল (আমারটাও। রীতিমত নিজের ছবি, নাম-ঠিকানা দিয়ে বছর পাচেক আগে কেনা। তবে আমি কখনই হতাস নই। ফুটপাত থেকে কেনা সিম চালু আছে। আছে বলিউডের নায়িকার ছবি জমা দিয়ে কেনাটাও।)
মোবাইল ফোন, খুব খারাপ জিনিষ। চাদাবাজির হাতিয়ার। প্রতিদিন চাদাবাজি হচ্ছে মোবাইল ফোনে। যদিও আমি জানিনা টাকাটা পাঠায় কিভাবে। মোবাইল ফোনে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা যখন বন্ধ করে রাখা হয়েছে তখন সেটা হাতেহাতেই দিতে হয়। তখন তারা হাতছাড়া হয় কিভাবে ?
অপ্রয়োজনীয় কথা থাক। চাদাবাজি এড়াতে ফোন বন্ধ করুন। নয়ত চাদাবাজির টাকা তৈরী রাখুন। চাদাবাজি এমনই একটা জিনিষ যা বন্ধ করা যায়না। দলের প্রধানের পদ ছেড়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কই, ছাত্রনেতাদের কীর্তি তো থামেনি, কমেনি। বরং বেড়েছে। এখন মারামারি-খুনাখুনির পক্ষ-বিপক্ষ দুটোই ছাত্রলীগ।
সে যাকগে। বলছিলাম মোবাইল ফোনের কথা। একসময় মানুষকে নিয়ম মেনেই সিম কিনতে হত। তারপর হঠাৎ করেই শুরু হল সেই খেলা। একটা কিনলে একটা ফ্রি। ছবি নেই তাতে কি, আমরাই ষ্টুডিও থেকে ছবি কিনে এলবামে সাজিয়ে রাখব। ষ্টুডিওঅলারাও দুটাকা কামাই করুক।
ষ্টুডিও থেকে ছবি নিয়ে মোবাইল কোম্পানীতে বিক্রি করাও একটা পেশা দাড়িয়ে গেল। এক টাকায় কিনে দুটাকায় বিক্রি। একশ কপিতে একশ টাকা। পাচশ কপিতে পাচশ। ছবির অভাব নেই।
আমি এর বিপক্ষে নই। কাশ্মিরে প্রি-পেইড ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ, সেটা তাদের জন্য যুক্তিসংগত। বাংলাদেশে এই নিয়ম চালু করলে অধিকাংশ মানুষ ফোন ব্যবহার ছেড়ে দেবে। তাদের জন্য দুশো টাকার টকটাইমসহ একশ টাকার সিম মানানসই। আর চাদাবাজির কারনও মোবাইল ফোন না। চাদাবাজি-টেন্ডারবাজি-ছিনতাই-জঙ্গিবাদ সবকিছুর মুল এক যায়গায়। অনিয়ম এবং ভন্ডামি। মানুষ যখন দেখে যে যত বড় চোর তার ক্ষমতা তত বেশি। যে যত ভন্ড সে তত বড় আসনে বসার সুযোগ পায় তখন তার সামনে সেটাই লক্ষ্য হয়ে দাড়ায়। আগের সরকারের সময় মন্ত্রী, গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কি করেছে সেটা যখন মানুষ জানে তখন তাদের উত্তরসুরীরা কেমন অনুমান করে নেয়। নীজের নীতিবোধ লোপ পায়। কেউ সেপথে রওনা দেয়, কেউ সুযোগ না পাওয়ায় আফসোস করে, কেউ বিকল্প খোজে।
আর নীতিবোধ যখন লোপ পায় তখন তাদের সব কাজেই লাগানো যায়। দলের মিছিলেই বলুন, দখলদারিত্বই বলুন, জঙ্গিবাদই বলুন আরে কারো মাথা ফাটানো-খুন করাই বলুন।
0 comments:
Post a Comment