কালো – কতটা কালো

Nov 5, 2009

লোকে বলে চাদের গায়ের দাগগুলি নাকি চাদের কলংক বিজ্ঞানীরা বলেন এমন কলংক সুর্যের গায়েও রয়েছে সুর্য্যের তেজ বেশি বলে আমরা খালি চোখে দেখি না আর ইতিহাসবিদ বলেও ইতিহাসেও রয়েছে কলংক ঘটনা যখন ইতিহাস হয় তখন তার তেজ কমে যায় চাদের কলংকের মতই তা দেখা যায় চেঙ্গিস খা মধ্যপ্রাচ্যে কতলক্ষ মানুষ মেরেছিলেন সেকথা বলতে ভয়ের কিছু থাকে না সাথে একথাও মনে করিয়ে দেন, সেটা শুধু মানুষ হত্যাই ছিল না, ছিল একটা সভ্যতাকে ধ্বংশ করা কারন তাদের জ্ঞানের যাকিছু সঞ্চয় তা নষ্ট করা হয়েছিল সবগুলি গ্রন্থাগার পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল

চেঙ্গিস খা নিজে অশিক্ষিত ছিলেন তার সময়ে তার দেশে তরবারির ভাষাই ছিল একমাত্র ভাষা এই ভাষায় কথা বলে টিকে থাকতে হত তিনি শুধু টিকে থাকায় বিশ্বাসী ছিলেন না তার হাতে নাকি জন্মগত এমন চিহ্ন ছিল যা বুঝায় তিনি সারা বিশ্ব শাসন করবেন নিজের জীবনের শেষপ্রান্তে এসে যখন বুঝলেন এক জীবনে সেটা সম্ভব না তখন সন্তানকে সে দায়িত্ব দিয়ে গেলেন

সেটা এখন ইতিহাস মায়া, এজটেক, ইনকার মত সভ্যতাও ধ্বংশ হয়েছে শুধু মানুষ মেরে, ধনসম্পদ লুট করেই থামেনি স্পেনিয়রা, ধ্বংশ করেছে সভ্যতা, জ্ঞানের ভান্ডার সবশেষ উদাহন এই দেশেই স্বাধীনতার ঠিক আগ মুহুর্তে খুজে বের করা হয়েছে জ্ঞানের পথযাত্রীদের একটা জাতিকে ধ্বংশ করার জন্য এদের খুজে বের করাই ছিল যথেষ্ট

এখন আমরা বাস করি সভ্যতার সবচেয়ে উচু সিড়িতে আগে কখনোই মানুষ এত জ্ঞানী ছিল না, এত সভ্য ছিল না প্রাচীন সভ্যতা নিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করতেই পারি কিন্তু তারা কখনোই আমাদের চেয়ে উন্নত ছিল না গনতন্ত্র, মানবাধিকার, জনগনের সমান অধিকার থেকে শুরু করে সম্ভাব্য সব ধরনের ভাল গুনের ব্যাখ্যা আমরা পুংখানুপুংখভাবে জানি অতীতের কেউ কখনোই আমাদের চেয়ে ভাল হতে পারে না পারলে এসে দেখিয়ে যাক-

দীর্ঘ্য এই বক্তৃতা দিতে হল একটি সামান্য কারনে একেবারেই তুচ্ছ কারনে রবীন্দ্রনাথের সামান্য ক্ষতির মত সামান্য ঘটনা ঘটায় কাকতালীয়ভাবে এখানেও আরেক রবীন্দ্র রয়েছে

সোনারগায়ে রয়েছে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের গ্রন্থাগার তাদের কিছু বই পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে এমন খবর চাপা থাকে না যখন প্রকাশ পায় বইগুলির দাম ৫ লক্ষ টাকার মত অন্তত টাকার মুল্য তো আছে কেজিদরে বেচলে টাকাগুলো কাজে লাগত

কাজেই ব্যাখ্যা দিতে তাদেরকে মুখ খুলতে হল পরিচালক রবীন্দ্র গোপ (এমন নামের সৌভাগ্য সকলের হয় না) জানালেন আসলে বিষয়টি কি তিনি বললেন, কিছু পুরনো কাগজপত্র এবং অপ্রয়োজনীয় বই আমার উপস্থিতিতে পোড়ানো হয়েছে

পরিচালক দায়িত্বশীল ব্যক্তি পুরনো কাগজ পোড়ানোর দায়িত্ব নিতেই পারেন নিজে উপস্থিত থেকে পোড়াতেই পারেন শীত এসে গেছে, কাগজের আগুনে ভাল তাপ পাওয়া যায় গ্যাসের শাস্রয় হয় কিন্তু কোন লাইব্রেরীর কোন বই অপ্রয়োজনীয় সেটা নির্ধারনের দায়িত্ব তাকে দিল কে ? অপ্রয়োজনীয় বই এতদিন সেখানে ছিলই বা কেন ?

কাজেই আরো উত্তর খুজতে হল উত্তর দিলেন গ্রন্থাগারিক দিলরুবা আক্তার তিনি বললেন, জঙ্গিবাদের কিছু বই পোড়ানো হয়েছে

সরকার যখন জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষনা করেছেনই তখন সেটা করা যেতেই পারে সরকারের মংগল, জনগনের মংগল, দেশের মংগল তারা সকলের মংগলের লক্ষ্যে কাজ করেছেন

এই লাইব্রেরীতে রাখা হয় মুলত বিখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে লেখা বই দেশ-বিদেশের লেখক, কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিবীবী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা পর্যন্ত সেখানে জঙ্গিবাদের বই তিনি পেলেন কোথায় সে প্রশ্ন হয়ত করার প্রয়োজন নেই হঠা করেই একদিন মনে হল এগুলি-

যাকগে, এমন খবর যখন প্রচার পায় তখন আগ্রহ দেখায় অনেকেই বই পোড়ানো শব্দটিতে নতুনত্ব আছে অনেকে দেখতে গিয়েছিলেন স্থাণীয় সাহিত্যিকের নাম ছাপা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এবং আওয়ামী লিগ নেতার নাম ছাপা হয়েছে আর বিএনপির মত বিএনপির আদর্শিক নেতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে লেখা বই-পত্রিকা-সাময়িকী পোড়ানো হয়েছে

দেশে সচেতন মানুষের অভাব নেই ঘটনা ঘটার আগেই অনেক সাংবাদিক ছুটে যান টাটকা খবর সাথেসাথে প্রচার করার জন্য এখবরটা কি কেউ খোজ নিয়ে দেখবেন সামান্য কাজ, পোড়ানোর আগের ক্যাটালগ এবং পরের ক্যাটালগ যাচাই করা যা পোড়ানো হয়েছে তার তালিকা প্রকাশ করা

অভিজ্ঞতা বলে, সেটা হবে না এরচেয়ে মেহনাজ-বারীর গল্প বেশি গুরুত্বপুর্ন দিনের পর দিন ছেপে গেলেও মানুষ বিরক্ত হয় না, বরং আনন্দ পায় পত্রিকার কাটতি বাড়ে

আর এই ঘটনা কতটা সত্য তা নিয়েও সন্দেহ আছে নিশ্চয়ই অপপ্রচার ষড়যন্ত্র বিরোধী দলের কাজ তাদের কাজই বিরোধীতা করা সরকারের ভাবমুর্তি নষ্ট করা সুযোগ পেয়ে এসব কুকথা ছড়াচ্ছে যদি সত্যি হয় তাহলে তদন্ত করা হবে প্রকৃত তথ্য বের করা হবে ছাই পরীক্ষা করে বের করা হবে সেগুলি আসলে কি ছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায়, অপরাধী যেই হোক কঠোর শাস্তি দেয়া হবে যদি অপরাধ হয়ে থাকে

কথা হচ্ছে, কাজটি যারা করেছেন শাস্তি পাওয়ার আশায় করেননি এমন কাজ করলে পুরস্কার পাওয়া যায় এটাই তাদের অভিজ্ঞতা দুচারদিন যাক, নতুন কিছু ঘটুক মানুষ এসব তুচ্ছ বিষয় ভুলে যাবে তারপর পুরস্কার মিলবেই এই বিনিয়োগ বৃথা যায় না

অন্ধকার তুমি কালো কতটা কালো ?

0 comments:

 

Browse