একেই কি বলে সভ্যতা

Nov 17, 2009

মধুসুদন দত্ত তার সময়ে এই প্রশ্ন করেছিলেন। তার সময়ে সভ্যতার মাপকাঠি ছিল শিক্ষায়। জ্ঞানীগুনি ব্যক্তিরা সমাজ নিয়ে কথা বলতেন। রাজনৈতিক দলের পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলতেন না। এমনকি বৃটিশদের সম্পর্কে কথা বলার সময়ও যাকিছু দোষ তা তুলে ধরতেন। ভাল কাজের প্রশংসা করতেন। নিজে নেতা বনে যেতেন না। ধরে নেয়া হত রাজনৈতিক নেতা আলাদা আর সমাজ সংস্কারক আলাদা। যে যার কাজ করে যাবেন। তারপরও তাকে প্রশ্ন করতে হয়েছিল, একেই কি বলে সভ্যতা ?

তারপর বহুদিন গত হয়েছে। সভ্যতা অনেকদুর এগিয়েছে। আমরা সভ্যতার স্বর্নযুগে বাস করছি। এখন নিশ্চয়ই এপ্রশ্ন করা যায় না। লেখাপড়া করে যে গাড়িঘোড়া চড়ে সে, এর মধ্যে সভ্যতা থেমে নেই। আরো অনেকের কাছে গাড়িঘোড়া পৌছে গেছে। একসময় গোয়ালভরা গরু যাদের থাকত তাদের প্যারেজভরা গাড়ি। সাংসদরা দেশের সেবা করবেন, দ্রুতগতিতে চলাফেরা করবেন এজন্য বিনাশুল্কে গাড়ি আনার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। গাড়ি তারা এনেছেন। যার যতগুলি খুশি। শুধু নিজেরাই দ্রুতগতিতে চলবেন তাতো হয় না, তারা জনগনের প্রতিনিধি। জনগনের জন্য তাদের কিছু করার থাকে।

গাড়ি কেনার নিয়ম পাল্টানো হয়েছে। বর্তমান নিয়মে সরকারী টাকায় গাড়ি কিনে দেয়া হবে। ২৫ লক্ষ টাকার গাড়ি। কিন্তু তাদের প্রবল আপত্তি। এত সস্তা গাড়িতে চললে সাংসদের মান থাকে না। চাল ব্যবসায়ী চিনি ব্যবসায়ী যখন কোটি টাকার গাড়ি হাকায় তখন তাদের মান থাকেই বা কিভাবে ? দেশে বিএমডব্লিউ-লিমোজিন সবার শোরুম রয়েছে। কিনতে আপত্তি কোথায় ? বাইরে থেকে আনলেই বা সমস্যা কোথায় ? ফরেন কারেন্সির রিজার্ভ যখন আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে তখন সেগুলো জমা রেখে কাজ কি ? সেটা অর্থনীতির জন্য ভাল না। শহরের মর্যাদা বলেও কথা আছে। রাজপথে দামী গাড়ি না থাকলে কি রাজধানী মানায় ? যারা রাজত্ব করবেন তারা দামী গাড়ি চালাবেন নাতো চালাবে কে ?

আর গাড়িগুলোর মেয়াদও ৫ বছরেরই। একেবারে সংসদের মেয়াদের সাথে মিল রেখে। নতুন সরকার আসার সাথেসাথে নতুন করে গাড়ি কিনতে হয়। আগেরগুলো হাওয়া হয়ে যায়।

গাড়ি চড়ার যোগ্য মানুষ কি কম ? এক এলাকায় একাধিক জন। পার্টি অমুককে নেতা বানিয়েছে তাতে কি, আমার কি সমর্থক কম আছে ? দেখবেন ডাকলে কতজন আসে ? আমার এলাকার নেতা আমিই। কথা বাড়ালে শক্তি পরীক্ষা দিতে হবে।

লোকে বলে সুর্য যখন মাথার ওপর থাকে তখন তার সামনে একটাই পথ, নিচের দিকে নামা। আমাদের সে ভয় নেই। উঠতে হবে উচুতে। আরো উচুতে। এই উচ্চতার শেষ নেই। আমেরিকায় নাকি প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে মেডিকেল সার্টিফিকেট, আগের সব রেকর্ড জমা দিতে হয়। আমাদের মৃত্যুও মৃত্যুভয়ও নেই। অর্ধমৃত অবস্থায় হাসপাতালে থাকতে হয়েছে তাতে কি, এখন তো ফিরে এসেছি। ক্ষমতা আমার চাই। আমি না থাকলে আমার ছেলেমেয়ে-ভাগ্নে-ভাতিজা তো আছে। দেখেন না তাদেরকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটিতে রাখার জন্য এলাকার মানুষ বাধ্য করেছে। করকারখানার মালিক হিসেবে দেখার জন্য আন্দোলন করছে।

আলোর উল্টোদিকে নাকি অন্ধকার থাকে। এই সভ্যতার উল্টোদিকে অন্ধকার সামান্যই। উল্লেখ না করলেও চলে।

সততা এবং নীতিবোধ নিয়ে যারা চলেন তাদের মাথা নিচু করে থাকতে হয়।

0 comments:

 

Browse