আন্তর্জাতিক মানুষ

Nov 6, 2009

ট্যাক্সির শহর বলে পরিচিত নিউ ইয়র্কে যদি ট্যাক্সি ধর্মঘট হয় তাহলে অবস্থাটা কি দাড়াতে পারে তা তারাই বলতে পারেন। অন্যরা যখন ভিডিওতে পিপিলিকার সাড়ির মত ট্যাক্সির সাড়ি দেখেন, গোলকধাধার মত রাস্তা দেখেন তখন শুধু অনুমানই করতে পারেন। সেটা একটা বিপর্যয়।

সেই বিপর্যয়ের খবরই একবার শোনা গেল। ট্যাক্সি ড্রাইভাররা ঘর্মঘটে যাবেন বলে হুমকি দিয়েছেন। কারন সরকারী সিদ্ধান্ত। সরকার বলেছে তারা যাত্রীর কাছে যাকিছু অর্থ লেনদেন করবে তা ক্রেডিট কার্ডে করতে হবে। ক্যাশ টাকা নেয়া চলবে না। সেটা করলে হিসেবে গড়মিল করার সম্ভাবনা থাকে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে সাথেসাথে সেটা চলে যায় সরকারের হিসেবের আওতায়। ফাকি দেবার কোন পথ নেই।

আমেরিকা নাকি পৃথিবীর একেবারে উল্টোদিকে। উল্টোদিকের মানুষ উল্টো নিয়মে চলবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা বাপু উল্টো নিয়মে চলি না। কম্পিউটারের সামনে বসে টাকা পাচার করবেন, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অর্থ যোগাবেন আর সরকার চুপ করে বসে থাকবে তা হয় না। সরকার এসব বন্ধে বদ্ধপরিকর। কাজেই, ওসব অনলাইন লেনদেন বন্ধ। যা করার ক্যাশ টাকায় করবেন। হিন্দুধর্মে বলে, ইদুর-পিপড়ে এদেরও হক আছে। তাদের জন্য কিছু খাবার ছেড়ে দেবেন। ছিনতাইকারীরও কিছু হক আছে। ওদের জন্য কিছু রেখে তবেই-

তারপর হঠা করেই সরকারী ঘোষনা, ব্যাংকগুলো অনলাইনে লেনদেন করতে পারবে। অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডিজিটাল বাংলাদেশে আপনারাও ডিজিটাল পদ্ধতিতে চলবেন। মাথায় করে ধান নিয়ে হাটে যেতে হবে না। ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাড়াতে হবে না। টাকা নেই একথা বলার কোন সুযোগ নেই, যতইচ্ছে খরচ করার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। এটা এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ, বলছেন প্রযুক্তি জগতের দিকপালরা।

নিয়মগুলো একটু জেনে নিন। চারধরনের লেনদেন অনলাইনে করতে পারবেন। অনলাইনে বিভিন্ন সেবার মুল্য পরিশোধ করতে পারবেন। অন্য কাউকে টাকা দিতে পারবেন, অন্যের কাছ থেকে নিতে পারবেন। অনলাইনে জিনিষের দাম দিতে পারবেন, এবং স্থানিয় মুদ্রায় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন।

প্রথম নিয়মে গ্যাসবিল, ইলেকট্রিক বিল, পানির বিল এসব দেয়ার জন্য লাইনে দাড়াতে হবে না, ঘুষ দিতে হবে না। বিল আপনার হাতে আসুক বা না আসুক, টাকা পরিশোধ করে দেবেন।

দ্বিতীয় নিয়মে, অন্যের কাছে টাকা নেবার বা অন্যকে টাকা দেবার সময় আর ছিনতাইয়ের ভয় করতে হবে না। কম্পিউটারের সামনে বসেই টাকা দিয়ে দেবেন। তবে একটু কথা, তার ব্যাংক এবং আপনার ব্যাংক একই হতে হবে। এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে টাকা পাঠানো অবৈধ।

তৃতীয় নিয়মে, আপনি ঘরে বসেই যাখুশি কিনবেন এবং দাম দিয়ে দেবেন। তখনও একই কথা, সেই দোকান কোন ব্যাংকের একাউন্ট ব্যবহার করে জেনে নেবেন। আর আপনি যদি বিক্রেতা হন তাহলে সব ক্রেতাকে জানিয়ে দেবেন ক্রেতা হওয়ার জন্য কোন ব্যাংকে একাউন্ট থাকতে হবে।

চতুর্থ নিয়মে, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে খরচ করতে পারবেন। মোটেই টাকার হিসেব করতে হবে না। অফুরন্ত খরচ। অন্তত ক্রেডিট কার্ডের বিজ্ঞাপন সেটাই বলে, খরচ করার স্বাধীনতা। পত্রিকায় ছাপা তাদের বিজ্ঞাপন কেটে পকেটে রেখে দেবেন। সেখানে তালিকা দেয়া আছে কোন ফাষ্ট ফুডের দোকান, কোন ফ্যাসান হাউজ, কোন সুপার ষ্টোর তাদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে। কেনার আগে মিলিয়ে নেবেন।

ইন্টারনেটে বসে ডলার পাঠিয়ে একটা এন্টিভাইরাস কিনে ডাউনলোড করে নেবেন, কিংবা সফটওয়্যার সমস্যার সমাধান করে কিংবা ফটোগ্রাফ বিক্রি করে ডলার কামাবেন, সেকথা ভুলে যান। দেশের টাকা বিদেশে পাঠানো বরদাসত করা হবে না। আর সরকারকে ফাকি দিয়ে টাকা আনবেন সেটাও চলবে না।

আর যদি নিতান্তই সেটা করতে চান তাহলে আগে তার যোগ্য হোন। কয়েক কোটি টাকার মালিক হোন আগে। তখন আপনি আন্তর্জাতিক মানুষ। এসব নিয়ম আপনার জন্য না।

0 comments:

 

Browse