৯ এবং ৬ সংখ্যাদুটি কি অপরাধ করেছে আমার জানা নেই। মানুষ কারনে অকারনে এই সংখ্যাদুটিকে গালাগালি করে। লোকে বলে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা অপচয় হয়, অযোগ্য মানুষের হাতে যায়, কাজের নামে টেন্ডারের নামে দলের সমর্থকরা পায়। সরাসরি টাকা কারো হাতে দেয়ার সরকারী নিয়ম নেই। কাগজে কলমে হিসেব দেখাতে হয়। অথচ গালাগালি করার সময় টাকা যার হাতে গেছে, যে দিয়েছে তাদের কারো দোষ নেই। সব দোষ ৯ আর ৬ এর। হিসেবে নাকি নয়-ছয় করা হয়েছে। একেবারে মোল্লা নাসিরুদ্দিনের মত।
মোল্লা নাসিরুদ্দিনের বাড়িতে চুরি হয়েছে। সকালে খবর পেয়ে রীতিমত একটা দলই হাজির তাকে গালাগালি করার জন্য। কেমন মরার মত ঘুমাও, দরজা-জানালা ভাল করে বন্ধ রাখনি কেন, উচু দেয়াল দাওনি কেন, একটা কুকুর পোষনি কেন- এইসব। একসময় মোল্লাকে হাতজোড় করে বলতে হল, ঠিক আছে বাবারা, সব দোষ আমার। যে চুরি করেছে তার কোন দোষ নেই।
যদি হত ইরেজি 9 আর 6 তাহলেও মেনে নেয়া যেত। তারা ডিগবাজি মারলে চেনা যায়না কোনটা কে। চার্লি চ্যাপলিন নাকি গাড়িতে যেতে যেতে দেখলেন পথের ধারে মরা কুকুর। ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বললেন। তারপর নেমে গিয়ে মারলেন সজোরে লাথি। লাথি খেয়ে কুকুরটা ঘুরে গেল। তখন সালাম করে গাড়িতে এসে উঠলেন। ড্রাইভার তো অবাক। রীতিমত গো ধরে বসল, এর কারন সে শুনবেই। লাথি মারাই বা কেন, সালাম করাই বা কেন। বাধ্য হয়ে চ্যাপলিনকে প্রশ্ন করতে হল, আমি কি দেখে নেমেছি ?
ড্রাইভার বলল, DOG
লাথি মারার পর কি হল ?
উল্টে গেল।
DOG যদি উল্টেগিয়ে GOD হয় তখন সালাম না করে উপায় থাকে না। অথচ ইংরেজিতে এধরনের গালাগালির প্রচলন নেই।
মানুষ শুধু ৯ আর ৬ কেন, এদের গুনে যে ৫৪ হয় তাকেও গালাগালি করতে ছাড়ে না। যেন গালাগালি তাদের বংশানুক্রমিক প্রাপ্য। পুলিশ কাকে কারন ছাড়া ধরেছে, হাজতে নিয়ে পিটিয়েছে, মহামান্য বিচারক তিনদফা/চারদফা রিমান্ডে পাঠিয়েছেন, সব দোষ ওই ৫৪ ধারার। যেন সেটা না থাকলে পুলিশ, বিচারক, উকিল সবাই হাত গুটিয়ে বসে থাকত।
যদি সেটাই হয় তাহলে গালাগালি না করে ৫৪ ধারাকে ধন্যবাদ দেয়া উচিত। এতগুলি মানুষকে দিয়ে সময়মত কাজ করাচ্ছে। যেখানে বিচারকরা রায় দেয়ার সুযোগ পান না, একটা মামলা দশকের পর দশক টানতে হয় সেখানে তারা মুহুর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত দিয়ে দিচ্ছেন। চাহিবা মাত্র দিতে বাধ্য থাকিবে-র মত। দিনে নাকি ৩৫টা করে রিমান্ড দেয়া হচ্ছে। বাপরে। এই রেটে বিচার চালালে কি লক্ষ লক্ষ মামলা জমে থাকত!
লোকে বলে সংসদ নাকি আইন তৈরীর যায়গা। ৩০০ জনকে নির্বাচিত করে সেখানে পাঠানো হয় কোথায় কোন আইন প্রয়োজন সেটা ঠিক করবেন। তা তাদের সে সময় কোথায় ? এলাকার উন্নয়ন করবেন না আইন নিয়ে বসে থাকবেন ? তাতে কি দেশ চলবে ?
পুলিশের আইন নাকি ১০০ বছর-দেড়শ বছর আগে তৈরী। ইংরেজরা এই আইন তৈরী করেছিল, পুলিশ বানিয়েছিল খারাপ মানুষকে পেটানোর জন্য। তারা আইন ভাল বোঝে। সারা পৃথিবী শাসন করেছে। তাদের আইন পাল্টানো দরকার কি ? দেশে কি খারাপ মানুষ নেই ?
শোনা যায় ইরেজ আমলে নাকি পুলিশ গুলি খরচ করলে হিসেব দিতে হত, এখন সেটাও হয় না। এটা যুগোপযোগি পরিবর্তন। ক্রশফায়ারের নামে ভয় পায়না কে ?
আর শুধু ক্রয়ফায়ার কেন, পোষাক-চেহারা দেখেই তো ভড়কাতে হয়। কালো কুচকুচে পোষাক, চোখে কালো চশমা, মাথায় কালো রুমাল বাধা, কাধে অস্ত্র। এসব না হলে কি খারাপ মানুষ বাগে আনা যায় ? দেশ চালানো যায় ?
কাজেই ওসব কথাবার্তা বন্ধ করুন। নয়-ছয় সব দেশেই হয়। পৃথিবী চলবে একদিকে আমরা চলব আরেকদিকে তা হয় না। গালাগালি করবেন ৯ আর ৬ কে করুন। যে করেছে তাকে না। করলে টের পাবেন নয়ে-ছয়ে কত হয়।
0 comments:
Post a Comment