সবসময় গাড়িচড়ার সৌভাগ্য যাদের নেই তারা অন্তত এটা বিষয়ে এগিয়ে। নানারকম অভিজ্ঞতালাভ হয়। নিজের এবং পরের। পরেরটাই শুনুন।
রাস্তায় রিক্সা-গাড়ি থমকে রয়েছে। এটা সাধারন ঘটনা। এখানে ওখানে পুলিশ রয়েছে। এটাও সাধারন ঘটনা। সাথে অতিরিক্ত যোগ হয়েছে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা রায়ের জন্য শতর্কতামুলক নিরাপত্তা। রীতিমত জোরদার করা হয়েছে। যদিও খবরের কাগজ আর টিভির বাইরে এনিয়ে একজনের কাছেও কোন মন্তব্য শুনিনি। আমার ধারনা অধিকাংশ (হ্যা, অধিকাংশ) মানুষ জানেই না বিষয়টি কি। তারপরও, সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে। কাজেই-
রিক্সায় বসে এক ভদ্রলোক। শুধু পোষাকে না, চেহারা, মুখভঙ্গি দেখে ভদ্রলোক ছাড়া অন্যকিছু বলার উপায় নেই। পায়ের কাছে ট্রাভেল ব্যাগ রাখা। উদাসভাবে সামনের দিকে চেয়ে অপেক্ষা করছেন কখন জট নড়বে। হঠাৎ শুনতে পেলেন, ব্যাগ দেখি ?
তাকেই কথাটা বলেছে পাশে দাড়ানো পুলিশ। ঠিক কি বলেছে তিনি বুঝে উঠতে পারেননি তখনো। তখনই শোনা গেল পরবর্তী বাক্য, ওই ##৳!!##%#, ব্যাগ খোল।
তার বুঝতে সময় লাগল না বিষয়টি কি। তিনি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিচ্ছেন নাকি এটম বোমা নিচ্ছেন সেটা দেখাতে হবে। তিনি ব্যাগের চেন খুললেন। আর তার লাল হয়ে যাওয়া মুখ দেখে আমার অভিজ্ঞতা, ‘এই দেশে জন্মগ্রহন করিয়া আমি ধন্য’ একথা ভুলে গেলে চিরদিনের জন্য।
পুলিশকে দোষারোপ করা উচিত না। তারা সামান্য বেতনে কাজ করে। রীতিমত জীবনের ঝুকি নিয়ে, বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাদের সমালোচনা করা কি উচিত ?
কদিন আগে একজন নাকি রীতিমত মামলা করেছিল পুলিশ তারসাথে খারাপ ভাষা ব্যবহার করেছে। রীতিমত তোলপাড়। সরকার থেকে ক্ষমা চেয়ে বলা হল, পুলিশের আচার-ব্যবহার আরো উন্নত করা উচিত।
আগে বলতে ভুলে গেছি, এটা বৃটেনের কথা।
যাকগে সেসব। ঢাকার কথা বলি। সিডি-ডিভিডি পাইরেসিতে দেশ বিশ্বসেরা খেতাব পেয়েছে এরই মধ্যে। এর পেছনের কারিগরদের কথা হয়ত জানা নেই অনেকেরই। যারা মাঝখানে থেকে কাজ করেন তাদের কথাই বলি। এদের কাজ হল বিশাল ব্যাগে করে সিডি-ডিভিডি নিয়ে দোকানে দোকানে সাপ্লাই দেয়া। একবার পরিচিত একজনের ব্যাগ উচু করতে চেষ্টা করেছিলাম। মনে হয়েছে তার ওজন আমার চেয়েও বেশি।
এমনই ভার বওয়া একজনকে থামাল দুজন পুলিশ।
এই, ব্যাগে কি ?
সিডি-ডিভিডি।
দেহি।
তারপর চলল দেখার পালা। সফটওয়্যার-গেম এসবের সিডি-ডিভিডির বান্ডিল বেরতে শুরু করল। একসময় বিরক্ত হয়ে গেল পুলিশ,
দুই নম্বর জিনিষ আছে ?
না।
ঠিক কইরা ক-
ঠাস করে একটা চড় পড়ল তার গালে। নিশ্চিত হওয়া কঠিন চড়ের কারন কি। সেই বস্তু নাথাকা নাকি সে দুনম্বরি ব্যবসা করে সেটা।
এদেশে পুলিশ সত। শান্তি প্রতিষ্ঠা করা তাদের আদর্শ। তাদের শ্লোগান সেকথাই বলে। তাদের যোগ্যতা দেখেই চাকরী দেয়া হয়। শুধু দলের সার্টিফিকেট দিলেই হয়না, পড়াশোনার সার্টিফিকেটও দিতে হয়। তারপর সারদায় ট্রেনিং নিতে হয়। তারপর আরো ব্যাপার-স্যাপার আছে। এক এসআই মারা গেল চাকরীতে যোগ দেবার কয়েক মাসের মধ্যে। তার সহকর্মীদের মন্তব্য, ছয় লাখ দিয়া চাকরী নিছিল। ট্যাকাডা উঠাইতে পারল না।
এক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাকি ছদ্মবেশে মাদকের দোকানে গিয়েছিলেন নিজের চোখে দেখার জন্য। সবগুলি খবরের কাগজে ছাপা হয়েছিল। এযুগের খলিফা ওমর আরকি। তবে সবাই তার মত নন। নিজের ঘরে বসেই তারা দিব্যদৃষ্টিতে দেখেন সবকিছু। সারাদেশ, সারাবিশ্ব, মহাবিশ্ব। কোথায় কি ঘটছে দেখার জন্য নখদর্পন ব্যবহার করাই যথেষ্ট।
আপনার নখ যদি দর্পনের কাজ না করে তাহলে দেখার পথ একটাই। গাড়ি ছাড়া চলাফেরা করা।
0 comments:
Post a Comment