গোলকধাধা খুব জটিল জিওমেট্রি।এর প্রতিটি বাক যার জানা তারকাছে সেটা জিওমেট্রি। আর যার জানা নেই তারকাছে গোলকধাধা। রীতিমত মাথা ঘুলিয়ে যায়। তারপরও উপভোগ করে সকলেই। মোগল বাদশারা নাকি গোলকধাধা তৈরী করেছিল বেগমদের সাথে লুকোচুরি খেলার জন্য। ভুলভুলাইয়া নামের সেই গোলকধাধা সারা বিশ্বের মানুষ দেখতে যায় ভারতে। তারমানে মোগলদের কাছে যেমন প্রিয় ছিল কয়েকশ বছর আগে বর্তমানের মানুষের কাছেও বিষয়টা ততটাই প্রিয়। উল্লেখ করা হয়ত প্রয়োজন হয় না, একজন শিশুর সবচেয়ে প্রিয় খেলা লুকোচুরি।
একেবারে সংসারী মানুষ আবার এসব এড়িয়েই চলে। আর কাউকে কাউকে সংসারী হতেই হয়। দাম যাই হোক বাজার থেকে খাবার কিনতে হয়। ভাড়া যাই হোক বাসে-রিক্সায় চলাফেরা করতে হয়। কথায় বলে বাবা মারা গেলে তখনও খেতে হয়।
তার ওপর যদি গোলকধাধা সামলাতে হয়, সমাধান খুজতে হয়, সেটা তারজন্য রীতিমত কঠিনই। অথচ সেটাই করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সরকার বলছেন পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রনে, সবকিছু স্বাভাবিক, দেশ ক্রমেই উন্নতির দিকে যাচ্ছে, কদিন পর এদেকে আর কেউ অবহেলা করার সাহস পাবে না। একই সাথে ছবি ছাপা হচ্ছে, খবর বেরচ্ছে বাজারের অবস্থা, যানজটের চিত্র, চাদাবাজি-ছিনতাই-খুন। আর জঙ্গি। জঙ্গি বিষয়টা সংবাদ মাধ্যমের খুব প্রিয়। খবর বেরুল কোথায় কোন মাদ্রাসায় বিপুল পরিমান অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। আসলে পুলিশ অভিযানের আগেই সেখানে সাংবাদিক পৌছে গেছে। টিভিতে দেখানো হয়েছে। অন্তত ঘড়ির কাটা সেকথাই বলে। পাকিস্তাণি জঙ্গি ধরা পড়েছে, পাশপোর্টের নাম্বার ছাপা হয়েছে। কোন গোজামিল নেই। কোন ভুল নেই। দেশের মানুষ জানুক, বিদেশের মানুষ জানুক। অন্তত আমেরিকা জানুক সরকার কত তৎপর। আমেরিকান এমবাসিতে হামলার পরিকল্পনা করেছে এটা কোনমতেই বরদাস্ত করা হবে না। প্রয়োজনে পথেপথে কামান বসানো হবে। একবার বসানো হলোও। বিদেশী স্কুল, অফিসের সামনে রীতিমত বালুর বস্তা ফেলে মেসিনগান নিয়ে সকলে তৈরী। জঙ্গি দেখামাত্র আক্রমন করা হবে। দেশে-বিদেশে ছবি ছাপা হল।
আর গোলকধাধাটা সেখানেই। দেশের সবকিছু যদি স্বাভাবিক থাকে তাহলে রাস্তায় মেসিনগান কেন ? প্রধানমন্ত্রীকে মাথার ওপর হেলিকপ্টার নিয়ে চলতে হয় কেন ? যে মাদ্রাসার অস্ত্র নিয়ে দেশে বিদেশে এত তোলপাড় সেখবর কদিন পর মিইয়ে গেল কেন ? পাকিস্তানী জঙ্গির পাশপোর্টের নাম্বার জানা গেছে, তারা অমুক নামের জঙ্গি দলের সদস্য তা জানা গেল কিভাবে? রিমান্ডের ভয়ে তারা ফাস করে দিয়েছে ? ধরা পরার সাথেসাথেই এখবর সারাবিশ্বে প্রচার করা হল কেন ? কদিন পর কি সবকিছু মিইয়ে গেলে কি জানা যাবে তারা সাধারন নাগরিক! ভারত যখন সন্ত্রাসী হামলার সাথে জড়িত সন্দেহে ধরার পর কখনও কোনমতেই প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি তারা কোন সংগঠনের। এখানে তারা নিজে থেকে এসব কথা আগেভাগে ফাস করল কেন ?
এসব খবর প্রচারমাধ্যমে তখনই আসা সম্ভব যখন সরকার চায় এগুলি প্রচার পাক। ক্যামেরার সামনে এনে পোজ দেয়া হয়, যাকিছু নমুনা দেখানো প্রয়োজন সেগুলো দেখানো হয়। তারপর সব হারিয়ে যায়। তারচেয়ে চমকপ্রদ খবর হাজির হয় ততদিনে।
শংকার কারন সেখানেই। পাকিস্তান এদের সাথে রীতিমত যুদ্ধ করছে। তারপরও প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে। পাকিস্তান সরকার ইচ্ছে করে এড়িয়ে যাচ্ছে একথা যত জোর দিয়েই বলুন না কেন, নিজের স্ত্রী কিভাবে খুন হয়েছেন সেটা অন্তত জারদারী ভোলেননি। যদি আমাদের সেই অবস্থা দেখতে হয় তাহলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক নেই। বিষয়টি আরো অনেক গভীরে চলে গেছে। যে দেশে সরকার পরিবর্তনের সাথেসাথে আগের মন্ত্রী-পুলিশ-গোয়েন্দাদের জেলে যেতে হয় তাদের দক্ষতা এবং নৈতিকতা প্রশ্নাতীত না।
0 comments:
Post a Comment