সৌজন্য

Nov 20, 2009

শব্দটির সাথে আমরা ভালভাবেই পরিচিত। টিভিতে নাটক দেখানো হয় এক বা একাধিক কোম্পানী সৌজন্যে। যার অর্থ সেটা দেখানোর টাকা দেবে সেই কোম্পানী। আপনাকে নাটক দেখতে পকেটের টাকা খরচ করতে হবে না। এই টাকার ভাগ যাবে টিভি কোম্পানীর পকেটে, যিনি নাটক লিখেছেন, যারা বানিয়েছেন, যারা অভিনয় করেছেন তাদের সকলের পকেটে। বিনিময়ে তাদের বিজ্ঞাপন দেখতে হবে দর্শককে। সৌজন্যের সাথে বিনিময়ের বিষয়টিও তাই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একজন নেতা যখন আরেকজনের সাথে সৌজন্যসাক্ষাত করেন তার বিনিময়টা অবশ্য ততটা স্পষ্ট না। তবে ধরে নেয়া যায় কিছু হিসেব নিকেশের ব্যাপার-স্যাপার আছে। অন্তত আইনের হিসেবে পলাতক নেতা যখন জামিন পাওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন।

সৌজন্যতা বিষয়টির হিসেবও কিছুটা গোলমেলে। সাধারনভাবে জনমনে বিশ্বাস করানো হয় অন্যকে খুশি রাখার বোধশক্তি যার থাকে তার সৌজন্যবোধ থাকে। অর্থাৎ সৌজন্যবোধ হচ্ছে অপরকে মনকষ্ট না দেয়া। অকারনে শত্রু তৈরী না করা। কখন কে কোন কাজে লেগে যায় আগাম বলা তো যায় না। দেখা হলেই সালাম দিয়ে বললেন, কেমন আছেন ? যদি গালাগালি দেয়ার কারন থাকে সেটা মনে মনে দেবেন।

এথেকে সৌজন্যতার আরেকটা পরিচয় স্পষ্ট। এটা প্রকাশ করতে হয়। যা অপ্রকাশ্য তা ঢেকে রাখবেন আর সৌজন্য প্রকাশ করবেন। নিজের চেহারা ঢেকে রেখে ওপরের মুখোসটা দেখানোর মত। অবশ্য এই নিয়মে মুখে রং লাগানো, বাহারী অলংকার-পোষাক এগুলোও সৌজন্যের পর্যায়েই পড়ে। কাজেই সামাজিকতার স্বার্থে এগুলি প্রনিধানযোগ্য। এর দুর্বলতা একটাই, কার সৌজন্যে- এই কথা প্রকাশ করার ব্যবস্থা সাধারনত থাকে না। সাধারনত বলতে হচ্ছে এই কারনে যে যার সামর্থ্য আছে সে এখানেও সৌজন্য দেখানোর পথ করে নেয়। অমুক বিখ্যাত কোম্পানীর সার্ট-প্যান্ট একথা প্রচার করতে অনেকেই গর্ববোধ করেন। একসময় কোম্পানীর লেবেল পোষাকের নিচের দিকে থাকত, এখন থাকে ওপরদিকে। এখানে ওখানে কোম্পানীর নাম লেখা থাকে বড় করে। ফুটপাতে দুটাকায় যে প্লাষ্টিকের মগ কিনতে পাওয়া যায় তাতেও গ্রামীন-বাংলালিংকের নাম-ছবি থাকে। যদিও এতে সরাসরি তাদের কোন হাত নেই। সবাই বড়র সাথে সম্পর্ক রাখতে চায় তারই প্রকাশ মাত্র।

নিজের টাকায় সৌজন্য প্রকাশের সাথে নিজের নাম লেখার প্রচলনের সবচেয়ে বড় উদাহরন নিশ্চয়ই রাজনীতি। অন্তত বর্তমান রাজনীতি এই সৌজন্য ছাড়া অচল। পথেঘাটে-দেয়ালে-আকাশে যত ব্যানার-পোষ্টার-দেয়াল লিখন দেখুন না কেন, সেখানে সৌজন্য শব্দটির দেখা পাবেনই। শ্লোগানের পরই লেখা থাকে প্রচারে অমুক, সৌজন্যে অমুক-তমুক-সমুক। বর্তমান রাজনীতির কথা উল্লেখ করতে হচ্ছে এই কারনে যে বর্তমানে এই সৌজন্যের সংখ্যা অন্য সবকিছুর চেয়ে বেশি। মুল বক্তব্য কয়েক দশকের পুরনো, যিনি প্রচার করেছেন তার নামটিও জানা। এরপরই একঝাক নাম যাদের সৌজন্যে প্রচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে। এভাবে দেখতে দেখতে একসময় এ নামগুলিও মগজে গেথে যায়। এলাকার লোক জেনে যায় অমুক নামে এলাকার এক ভাই রয়েছেন। তিনি অমুক পার্টির কাজ করেন। একসময় সেই নাম সৌজন্য থেকে প্রচারের ধাপে উঠে আসে। তারপর একসময় মুল শ্লোগানে।

কাজেই- সৌজন্য বিশ্লেষনের ফল যা দাড়াচ্ছে তা হল এটা অগ্রগতির প্রাথমিক ধাপ। প্রচারেই প্রসার এই নিয়মে এরও প্রসার ঘটে। ব্যক্তিগত, কোম্পানীগত, দলগত, সমাজগত সব ধরনের সৌজন্য ব্যক্তি-কোম্পানী-দল-সমাজকে আরো এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। এক সমাজের সাথে আরেক সমাজের পার্থক্য সম্ভবত এটুকুই, সব সমাজ একে সমাজ পর্যায় পর্যন্ত নেয় না। কখনও ব্যক্তি কিংবা কোম্পানী পর্যায়ে, কখনো দল পর্যায়েই গতি থেকে যায়।

0 comments:

 

Browse