অবাক হবেন না

Nov 1, 2009

প্রযুক্তি মানুষের জীবনে অনেক সহজ করে দিয়েছে। বলা যায় মানুষকে মাল্টিটাস্কিং বানিয়েছে। পেশা যাই হোক না কেন, কাজ করুন একই সাথে কানের সাথে ফোন লাগিয়ে কথা বলুন। প্যারালাল প্রসেসিং চলতে থাকবে। এই প্যারালাল প্রসেসিংএর বদৌলতে খবরটা শোনা হল। এমনিতে রেডিও শোনার অভ্যেস নেই, তারওপর কিছু একটা কাজে ব্যস্ত থাকতেই হয়। মোবাইল ফোন যখন রেডিও এনেই দিয়েছে তখন কাজ করতে করতেই শোনা যায়। সেভাবেই ক্রিকেটের ধারাভাষ্য শোনা, তারসাথে অতিরিক্ত হিসেবে বেতারের সংবাদ। তাতে বলা হল টঙ্গিতে শ্রমিকদের সাথে সংঘর্ষে দুজন মহিলা পুলিশ মারা গেছে।

আতংকিত হবার মত খবর। শ্রমিকরা অস্ত্রশস্ত্রহাতে হামলা করেছে মহিলা পুলিশের ওপর, দুজনকে মেরে ফেলেছে। এরপর লুটপাট করবে, অন্যদের মারবে। আগে থেকে সাবধান থাকা ভাল।

সময়ে ঘটনা আরো পরিস্কার হল। বিজিএমইএর বক্তব্য, কেউ মারা যায়নি। পোষাক শিল্পের ক্ষতি করার জন্য, সরকারের ভাবমুর্তি নষ্ট করার জন্য, দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য এসব গুজব ছড়ানো হয়ে থাকতে পারে। সরকারী ভাষ্য, পুলিশ দুজন শ্রমিকের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। আর পেছনের খবর, তিনমাসের বেতন না দিয়ে কারখানা বন্ধ করায় শ্রমিকরা বেতনের দাবীতে এবং কারখানা খোলার দাবীতে পথে নেমেছিল।

এখন আর কোন খবরেই অবাক হবার মত কিছু নেই। সবকিছুর পেছনেই কিছু কারন থাকতে পারে। সেটা আমাদের জানা। একবার শোনা গেল খালেদা জিয়ার পুত্র আরাফাত রহমান কত টাকা সিংগাপুরে পাচার করেছেন সেটা নিশ্চিত করেছে মার্কিন গোয়েন্দারা। তাদের কাছে সব তথ্য রয়েছে। আর লুকোনোর পথ নেই। টাটকা খবর হচ্ছে সিংগাপুরে টাকা পাচারের দায়ে মামলা করা হয়েছে খালেদার আরেক পুত্র তারেক রহমান এবং তার বন্ধু মামুনের নামে। তারা কোন পদ্ধতিতে কিভাবে টাকা পাঠাতেন, কিভাবে খরচ করতেন সব জানা গেছে। আর শুধু এখনবার খবরই বা কেন, গোয়েন্দারা বসে নেই। তাদের আরেক নাম ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস। সেই ইন্টেলিজেন্ট লোকেরা বের করেছেন ব্রিগেডিয়ার বারী ৭৫ এর ১৫ আগষ্টের ঘটনায় খুশি হয়ে অন্যদের মিষ্টি খাইয়েছেন। আমি অন্তত সেই মিষ্টি খাওয়ার সুযোগ পাইনি কিন্তু একটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে, ৭৫ সালে এই ব্রিগেডিয়ারের বয়স কত ছিল ?

সে যাকগে। এসব ফালতু প্রশ্ন নিয়ে সময় নষ্ট করার সময় কারো নেই। বরং পত্রিকায় প্রতিদিন যে টাটকা খবর বেরচ্ছে সেটা দেখাই ভাল। বাবরকে রিমান্ডে নেয়ার সাথেসাথেই তোতাপাখির মত বলতে শুরু করেছেন কোন সময়ে কে কি করেছে। জরুরী আইনের সরকারের সময় রিমান্ডের প্রশ্নোত্তরের সিডি বাজারে বিক্রি হয়েছে। এতে সকলেরই মঙ্গল। খবরের কাগজের কাটতি বাড়ে, কিছু মানুষ ব্যবসা করে খেতে পারে, অন্যরা বিনোদনের খোরাক পায়।

পুরনো কথায় ফিরি। গার্মেন্টস শ্রমিকদের রাস্তায় নেমে আন্দোলন নতুন বিষয় না, বরাবরই হয়। বরাবরই তার কারন বকেয়া বেতন। পত্রিকার খবর, সর্বনিম্ন মজুরী ঠিক করার পর তিন বছর পরও অর্ধেক কোম্পানী বাস্তবায়ন করেনি। আদালত বলে দিয়েছে তাদের বিষাক্ত বর্জ্য নদীতে ফেলা যাবে না, পরিশোধনের ব্যবস্থা করতে হবে, সেটা করা হয়নি। তারপরও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাবে না, কথা বলা যাবে না। কারন তারা দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক শক্তি। সবচেয়ে বেশি আয় আসে তাদের কাছ থেকে। যাদের বেতন কয়েকশ টাকা, সেই টাকা দিয়ে যারা না খেয়ে হলেও ঘরভাড়া দেয় এবং তারপর হাতে কিছু থাকলে খাবারের খরচ মেটায় তাদের বেতন মাসের পর মাস বাকি রাখা যায়। আর যাদের বেতন লক্ষ টাকা তাদের বেতন আগাম বুঝিয়ে দিতে হয়। মাথায় হাত বুলাতে হয়। কারন একটু এদিক ওদিক হলেই তারা অন্য পথ খুজে নেবে। তারচেয়ে যাদের অন্যপথ নেই তাদের বেতন বাকি রাখাই ভাল। শ্রমিক নেতারা যখন টাকা পেলেই খুশী, সরকারের দায়িত্ব যখন পুলিশ পাঠিয়ে বিদ্রোহ দমন করা তখন এনিয়ে ভাবার কি আছে ?

দুজন শ্রমিক মারা গেছে, তাতে কি ? আরো কতজন কাজের অপেক্ষায় অপেক্ষা করে রয়েছে। এসব নেতিবাচক খবর প্রচার না করাই ভাল। এই শিল্পই টিকিয়ে রেখেছে দেশকে। দেশের লক্ষ লক্ষ পরিবারকে। এসব খবরে কান দেবেন না। অবাক হবেন না।

0 comments:

 

Browse