চুরিতে সমস্যা কোথায়

Jun 17, 2011
মানুষের স্বাভাবিক প্রবনতা অল্পের থেকে বেশি পছন্দ করে। অল্প টাকা, অল্প খাবার, ছোট বাড়ি, ছোট গাড়ি যাই বলুন না কেন তারচেয়ে বেশিটাকা, বেশি খাবার, বড় বাড়ি, বড় গাড়ি অনেক বেশি প্রিয়। বড় থাকতে কেউ ছোটর দিকে চায় না। এমনকি উপন্যাসের কাছে ছোটগল্প পাত্তা পায় না।
কাজেই মানুষ ছোট বিষয় বাদ দিয়ে বড় বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাবে এটাই স্বাভাবিক। যদি আলোচনা করতেই হয় তাহলে ভিক্ষুক কিংবা বেকারকে নিয়ে সময় নষ্ট করে কে, তারচেয়ে বরং প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, নেতা কিংবা বিরোধী দলের নেতাদের নিয়ে মাথা ঘামানো মানায়। নির্বাচনের কথাই যদি বলতে হয় তাহলে এমন নির্বাচনের কথা আলোচনা করা উচিত যেখানে জিতে প্রধানমন্ত্রী হওয়া যায়। ছোটখাট নির্বাচন আলোচনা থেকে দুরে থাকবে, খবর থেকে দুরে থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। অন্তত যতক্ষন না খুনখারাপির মত কিছু না ঘটে। অথবা খবর বলার মত ঘটনা না ঘটে।
কখনো কখনো ঘটনা ঘটে। তখন খবর হয়। এমনই এক খবর। ইউপি নির্বাচনে সদস্য পদের একজন প্রার্থী বলেছেন, তিনি জীবনে বহুলোকের গরু-ছাগল-হাস-মুরগী সহ বহুকিছু চুরি করেছেন। তাকে ভোট দিয়ে জনগনের সেবা করার সুযোগ দিন, তিনি সবার চুরি করা জিনিষপত্র ফেরত দেবেন।
এবং তিনি নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন।
তিনি ফেরত দিয়েছেন কিনা, কিংবা কথা রেখেছেন কিনা সেকথা তুলবেন না। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের অত সময় নেই ফলোআপ করার। অতীত এবং চলমান ঘটনাই সবকিছু।
যাই হোক, ঘটনা যখন বাস্তবে ঘটেছে, এরসাথে বহু মানুষ যখন জড়িত তখন নিজেই নিজেকে কিছু প্রশ্ন করতে পারেন। অন্তত সময় যখন অফুরন্ত। ইচ্ছে করলে চায়ের টেবিলে বসে অন্যের সাথে আলোচনাও করতে পারেন। ভোটারদের কথাই আলোচনা করুন। হয়ত আপনি নিজেও এমন পরিস্থিতিতে পরতে পারেন।
তারা চুরির জিনিষ ফেরত পাবার আশায় চোরকে ভোট দিয়েছে এটা কি ধরে নিচ্ছেন ?
বাংলাদেশে এত বোকা মানুষ কেউ নেই। দেশের সব মানুষকে শিক্ষার আওতায় আনা হয়েছে (মন্ত্রী বলেছেন), কাজেই সবাই শিক্ষার আলোয় আলোকিত। এতবড় ভুল তারা করেন না।
তাহলে মুল বিষয়টা কি?
বিষয় হচ্ছে, আগে যা গেছে তাতো গেছেই, সেটা ফেরত পাওয়ার আশা নেই। বরং বদলী যদি কিছু পাওয়া যায় সেটাই লাভ। নানা কারনে সরকারী জিনিষপত্র তো বিলিবন্টন হয়, সময়ে ভর্তুকি দিয়ে বিক্রি করা হয়। চাল-গম হোক, চালের টিন হোক আর সার-বিদ্যুতই হোক ওগুলো পাওয়ার ব্যবস্থা তো রাখতে হবে। যার যোগ্যতা বেশি সেই তো বেশি সুযোগ এনে দিতে পারে। আর চোরের চেয়ে যোগ্য আর কে হতে পারে।
এ হচ্ছে নিকট ভবিষ্যতের কথা। যদি কল্পনাকে আরেকটু বাড়িয়ে নিতে পারেন ...
আতিচোর-পাতিচোর, দিনে দিনে গাড়ি চোর প্রবাদটা কি শুনেছেন ? এটা যেযুগে সৃষ্টি সেযুগে গাড়ি বলতে টয়োটা-পাজেরো কিংবা বিএমডব্লিউ বুঝাতো না, রীতিমত রেলগাড়িই বুঝাতো। যদি কোনদিন সেই পর্যায়ে যেতে পারে।
মানে সদস্য থেকে চেয়ারম্যান, তারপর ক্রমাম্বয়ে সংসদ সদস্য, মন্ত্রী ...
একলাথে চুড়ায় ওঠা যায় না, একটু একটু করেই উঠতে হয়। এটা প্রথম ধাপ। সকলের সহযোগিতা পেলে তবেই না বড় হওয়া যায়। সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। দেশের সত্যিকারের উন্নতি। এটুকু সমর্থন না দিলে তারা দেশের সেবা করবেন কিভাবে ?
কাজেই দলমত নির্বিশেষে চুরিতে সহযোগিতা করুন, দেশসেবার সুযোগ করে দিন।
চুরি শব্দটা কোনো একসময় খারাপ শোনাত। এখন খারাপ লাগে না। সবকিছুর সাথে বেশ মানানসই। কোন একসময় মেধা হিসেবে স্বিকৃতি পাবেই।

0 comments:

 

Browse