রাতকানা ভাল নাকি দিনকানা

Jun 24, 2011
চিকিতসাবিজ্ঞান বলে রাতকানা একটি বিশেষ রোগ। তারা দিনের বেলা স্বাভাবিকভাবেই সবকিছু দেখেন, সুর্য অস্ত গেলে আর দেখেন না। বিদ্যুত থাক বা না থাক, মোমবাতি-চার্জার জ্বালানো হোক বা নাহোক, তারা দেখতে পান না। একমাত্র সুর্য্যের আলোতেই তারা দেখেন।
সৃষ্টিকর্তা এমন অদ্ভুত রোগ কেন সৃষ্টি করেছেন তার ব্যাখ্যা পাওয়া কঠিন। আসলে সৃষ্টিকর্তার কোনকিছুরই ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা তার সৃষ্টের নেই। হয়ত সেকারনেই এই ভ্রান্তি। কিন্তু অন্যভাবে দেখলে, রাতকানা তো সকলেই। দিনরাতে বিষয় বাদ দিয়ে একটু অন্যভাবে দেখুন না কেন।
আওয়ামী লীগের চিরশত্রুও একথা মেনে নেবেন, তাদের দলে বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা অন্যান্য দল থেকে বেশি। এরসাথে যদি তাহলে মুক্তিযুদ্ধে পক্ষের শক্তির কথা বলেন তাহলে তো কথাই নেই। মুক্তিযুদ্ধের কথা উচ্চারন করলেই বাঙালীর বুক উথলে ওঠে। কাজেই যারা আওয়ামী লীগের পক্ষে তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আর যারা বিপক্ষ দলে তারা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী। একেবারে রাত আর দিনের মত তফাত। একেই রাতদিন হিসেবে ধরে নিন না।
অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি আওয়ামী নৌকায় চড়ে সংসদে গেছেন (ভুল ধরে নেবেন না, সংসদ ভবনের চারিদিকে পানির ব্যাবস্থা থাকলেও এখনও নৌকায় চড়ে যাওয়ার মত হয়নি)। তারা যতক্ষন সরকারী দলের সাংসদ থাকেন তখন তাদের দিন। অত্যন্ত ভালভাবে গনতন্ত্র দেখেন। গনতন্ত্রের চর্চা একমাত্র সংসদেই হতে পারে। ভুলেও রাজপথে যাবেন না, হরতালের মত রাষ্ট্রদ্রোহী কাজ করবেন না। বিরোধীদের জন্য তাদের বক্তব্য, আপনার সংসদে যান, দেশের গনতন্ত্রকে সুসংহত করুন। গনগন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিন।
দিন সবসময় দিন থাকে না। একসময় সুর্য অস্ত যায়, রাত নামে। তখন তাদের দৃষ্টিতেও পর্দা নেমে আসে। তখন সেই মুখেই শোনা যায়, আমরা দেশের স্বার্থে, গনতন্ত্রের স্বার্থে রাজপথে নেমেছি। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত হরতাল। আওয়ামী প্রধান তার স্বভাবসুলভ ভাষায় বলেন, সংসদে ওরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। আমাদের দরকার কি? যাখুশি করে নিক!
আর একথা বলার প্রয়োজন নেই, হরতাল দেয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের তুলনা বিশ্বে নেই।
মন্ত্রী, সাসংদ আর নেতা এরা সবসময় আলোচনায় এতটাই যায়গা দখন করে থাকেন যে একে অন্যদের জন্য অবিচার মনে হতে পারে। যে জনগনের জন্য তারা গলা ফাটাচ্ছেন তাদের দিকে কিছু দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।
তারাও কিছুটা রাতকানা তো বটেই। রাতকানা নিষ্চয়ই ছোয়াচে রোগ।
কাজেই জনগনকেও কিছুটা লক্ষন দেখাতে হয়। তাদেরও সুর মিলিয়ে বলতে হয়, গনতন্ত্রের স্বার্থে সংসদে যান, আলোচনা করুন। সরকার বলেছে তত্বাবধায় ব্যবস্থা রাখা যাবে না, ওটা আইন পরিপন্থি, সংবিধান পরিপন্থী। সেইসাথে আলোচনার কথাও তো বলেছে। আলোচনা করুন।
কিংবা একটু পেছনে যদি দেখা যায়, ওটা ব্যক্তিস্বার্থের হরতাল, খালেদার বাড়ি বাচানোর হরতাল, যুদ্ধাপরাধীদের বাচানোর ষড়যন্ত্র। কিংবা একেবারে সাম্প্রতিক ঘটনা উল্লেখ করে বলতে পারেন, খালেদার ছেলেকে বাচানোর হরতাল। সে তো চোর, চুরি করায় আদালত শাস্তির রায় দিয়েছে। তাকে বাচানোর কৌশল।
পুরনো কথা হলেও আরেকবার মনে করিয়ে দিতে হয়, এই একই ধরনের অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী সহ হাজার হাজার সরকারী নেতার নামে ছিল। সেগুলির জন্য আদালতের রায় প্রয়োজন হয়নি। তারা নিজেরাই মামলা বাতিল করেছেন। কোকো তাদের তুলনায় নিতান্তই নাবালক।
বরং আরেকটু ধীর্ঘকালীন সময় নিয়ে দেখুন। যদি ধৈর্য্য থাকে।
স্বাধীনতার পর একসময় সরকার নিজের দল বাদে সব দল নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছিল। সরকারের নিজের নিয়ন্ত্রনের বাইরে সব সংবাদপত্র বন্ধ করেছিল। প্রতিবাদে জাসদ নামে একটি দল গড়ে উঠেছিল। তাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিল বিপুল সংখ্যক মানুষ, একদলীয় শাসনের অবসান ঘটাবে বলে। তাদের হাজার হাজার কর্মী খুন হয়েছিল সরকারী বাহিনীর হাতে।
তারপর বহুকিছু ঘটে গেছে। একসময় বর্তমানের আরেক প্রধান দলের প্রতিস্ঠাতা জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় গেছেন। আবারও রাজনৈতিক দলগুলি রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে, সংবাদপত্রগুলি ছাপাখানার মুখ দেখেছে। তারপরও ঘটে গেছে বহুকিছু। একজন নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেছেন এরশাদ। তারপর আরো বহুকিছু। তিন জোটের ৯ বছরের গনতন্ত্রের জন্য আন্দোলন। তারপর আরো বহুকিছু।
অবশেষে বর্তমান অবস্থাটা এমন, জাসদের নেতা এবং এরশাদ সাহেব মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলে, গনতন্ত্রের পক্ষের দলে। জিয়াউর রহমানের দল যুদ্ধাপরাধীদের দলে। একদল দিনের দিকে, আরেকদল রাতের দিকে।
একজন সরকারী নেতা ভুলক্রমে বলে ফেলেছিলেন, একসময় বাকশাল প্রতিস্ঠা করবোই। আমাদের শেষ লক্ষ সেটাই।
এর সমাধান নিষ্চয়ই হবে রাজনৈতিকভাবে। গত আড়াই বছরে অনেক ঘটনা ঘটেছে। কখনো কিছু মানুষ হঠাত করে নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে, মানুষকে রাজপথে পিটিয়ে মারা হয়েছে। টিভিতে দেখানো হয়েছে। বিরোধী দলের নেতার খুনের দায়ে আদালতের ফাসির আদেশ বাতিল করেছেন রাষ্ট্রপতি তার মহানুভবতায়। একাধিকবার।
একসময় রাত আর দিনের ফয়সালা হবে নিষ্চয়ই। শুধু দিন থাকবে। অথবা শুধু রাত। কোন পক্ষ নেবেন জানার আগে যাচাই করে নিন কোনটি পছন্দ, দিনকানা নাকি রাতকানা।

0 comments:

 

Browse