মহত্ব থেকে লাভ

Jun 11, 2011
মহত ব্যক্তিরা মহত কথা বলেন...
অনেকে হয়ত এরই মধ্যে অস্ত্র তৈরী করে ফেলেছেন। মনে মনে বলছেন, আরে ব্যাটা ওই কথা কি আমার থিক্যা বেশি জানস। আমি কি জানি না মহত ব্যক্তি কি, মহত কথা কি ?
কাউকে মহত ব্যক্তি চেনানো কিংবা মহত কথার উদাহরন দেয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই। বরং একটু ঘুরিয়েই বলি। অনেক সময় মহত্ব সরাসরি ধরা পড়ে না, সামান্য হলেও দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। এতে আপনার মহত্ব কমছে না। নিজেকে মহত ধরে নিয়েই মহত্বের খাতিরে এই সামান্য বিষয়টি এড়িয়ে যান।
কথা হচ্ছে, মহত ব্যক্তিরা মহত কথা বলেন। তারা কখনোই খারাপ দিক দেখেন না, যাকিছু ভাল, যাকিছু আশাবাদি সেদিকেই দৃষ্টি দেন। ওই যে অর্থমন্ত্রীর কথাই ধরুন না কেন। তিনি মহত বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললেন শেয়ারবাজারে সবাই সর্বশ্রান্ত হয়নি, কিছু মানুষ টাকা কামিয়েছে। এটাই মহত্ব। ওই কিছু মানুষের যে উপকার হয়েছে তাকে স্বিকৃতি দিন।
কিংবা প্রধানমন্ত্রী যখন বললেন হরতালে পরিবেশ দিবসে পরিবেশ রক্ষা হয়েছে। কলকারখানা বন্ধ- গাড়ি চলাচল বন্ধ। সপ্তাহে একদিন এমন হলে কার্বনের টাকা আমাদের হাতে না এসে যায় না। সাথেসাথে সায় দিয়েছে বিরোধীদলও (এটাই বরং বিরল ঘটনা)। তারা আরো উতসাহে দুদিন হরতাল ডেকেছে। মহতের খাতায় নাম লেখানোর চেষ্টা আরকি।
কিছু মহত ব্যক্তি রয়েছেন যারা দুপক্ষের মাঝামাঝি অবস্থান করেন। তারা নিজেরা সবসময়ই নিরপক্ষে। বলতে পারেন দুদিকেই পা। যেদিকে সুযোগ বেশি সেদিকে ভর বাড়াবেন। তারাও অনেক সময় মহত কথা বলেন। অন্তত বেসরকারী টিভিগুলো যখন কথা বলার সুযোগ করে দেয় তখন তো বটেই।
কাজেই মধ্যপন্থি এক মগত ব্যক্তি হরতালের পক্ষ-বিপক্ষের ব্যাখ্যা দিলেন মহত পন্থায়। এরআগে প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন তিনি বিরোধী দলে থাকলেও হরতাল ডাকবেন না, আর বিরোধী দলে থাকার সময় সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত হরতাল ডেকেছিলেন। এরই পেছনে লুকিয়ে থাকা মহত্বের কথা।
আসলে তিনি যা বলতে চেয়েছিলেন তা হচ্ছে, আমি বিরোধী দলে গেলেও হরতাল ডাকব না, আপনারা হরতাল বন্ধ করুন। মহত কাজ করুন।
তা বিরোধী দল যখন তার ডাকে সাড়া দেয়নি তখন বিরোধীদলের কারনে সেই প্রস্তাব সাথেসাথে বাতিল হয়ে গেছে। তিনি কি বলেছিলেন সেটা পালন করার দায়িত্ব ছিল তো ওই বিরোধী দলের ওপরই। এখন সেকথার দায় নতুন করে চাপানো হচ্ছে কেন?
সকলে অবশ্য এত সহজে টিভিতে ডাক পান না। কখনো কখনো রীতিমত বরাত জোরে ফুটপাতে দাড়িয়ে নাকের সামনে মাইক্রোফোন দেখেন। তারাও সাথেসাথে মহত কথা বলতে শুরু করেন। ওই যে রিক্সাচালক, হরতালের দিনে যার প্যাসেঞ্জার বেড়ে যায় কয়েক গুন, ফাকা রাস্তায় মনের আনন্দে ঠিক মাঝখান দিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়, ভাড়া বেড়ে হয় দ্বিগুন-তিনগুন, সেও কোচড়ভরা টাকা নিয়ে হাসিমুখে মাইক্রোফোনের সামনে মুখ নিয়ে বলে, হরতালে গরীব মানুষগো ক্ষতি হয়।
ইদানিং মহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেছে অনেক। রীতিমত প্রতিযোগিতা চলছে কে কাকে পেছনে ফেলবেন। শোনা যেত অমুক নেত্রি বিদায় হলে দেশ বাচে, এখন আরেকদল বলছেন দুই নেত্রি বিদায় হলে দেশ বাচে।
নেতা হাতে তুড়ি বাজালে যখন হাজার মানুষ-লক্ষ মানুষ ছুটে আসে, কথা বললে যখন লক্ষ মানুষ, কোটি মানুষ হাতে তালি দেয়, আহা আমার নেতা কি কথাই না কইছেন, নেতার ডাকে একে অন্যের মাথায় বাড়ি দেন সেই নেতাকে বিদায় করবে কে? নেতার নিজের দুর্গার মত দশহাত নেই, রাবনের মত দশ মাথাও নেই। তার হাত-মাথা তো ওইসব মহত ব্যক্তিরাই। তিনি কি কারনে ভাববেন তিনি ভুল করেছেন ? ভুল কাজ করেছেন ??
বিরোধীদলের বিরোধীরা করা ছাড়া আর কেউ তো বলেনি।
মহত সমাজে বাস করলে নিজেকেও কিছুটা মহত্ব দেখাতে হয়। সবাই সেটাই দেখান না কেন। হরতালে একধরনের লাভ, হরতাল বন্ধে আরেক ধরনের লাভ। লাভের কথাটাই বলুন না।

0 comments:

 

Browse