হয়রানি

Jun 5, 2011
হয়রানিমুলক মামলা একথা শুনতে শুনতে মানুষের এতটাই কানসওয়া হয়ে গেছে যে এরপর কি শোনার ধৈর্য্য থাকে না। গত আড়াই বছরে বহু হাজার মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে এই কারনে। এমনকি রাজনৈতিক হয়রানীমুলক কারনে এমন খুনের মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে যে খুনির সাথে আদৌ রাজনীতির সম্পর্ক নেই। কিন্তু আগেই যেমন বলেছি, এগুলি কানসওয়া। এনিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না।
জরুরী আইনের সরকার যখন নানারকম মামলা কারনে নেতাদের গ্রেপ্তার করতে শুরু করল তখন বিদায়ী সরকারের একজন প্রভাবশালী নেতা বলেই ফেললেন, ওই মামলা তো হয়রানী করার জন্য দেয়া হয়েছিল। কিন্তু জরুরী সরকার দুর্নীতি দুর করবেনই করবেন। দুই প্রধান দলের প্রধানকে গ্রেপ্তার করা হল দুর্নীতি মামলায়।
সেসব ইতিহাস। কিন্তু ওই মামলা নামের বিষয়টি থেমে থাকেনি। মামলা মানেই গ্রেপ্তার, গ্রেপ্তার মানেই রিমান্ড তারপর জেলহাজত। আদালত যদি জামিন দেয়ও সেই রায় জেলে পৌছে না, পৌছালেই বা কি আসে যায়!
বিষয়টি উল্লেখ করতে হচ্ছে কারন গত চারদলীয় জোট সরকারের একজন মন্ত্রী এরসাথে জড়িত। কাজেই খবরে সেটা স্থান পায়। তার জামিন দিয়েছে আদালত, সেটা নিয়ে বহু টানাহেচড়া। জামিন পেয়েছেন মুক্তি পাননি, এইসব। সেটাই খবর। অবশেষে তিনি ছাড়াও পেলেন ৪৭০ দিন জেলবাস করার পর। সেটাও খবর। এবং তখনই খবরে জানা গেল তার নামে মামলা সম্পর্কে।
তিনি ঘড়ি এবং মোবাইল ছিনতাই করেছেন, পুকুরের মাটি চুরি করেছেন।
এটা কৌতুক না, সত্যি ঘটনা। এই মামলায় তাকে আসামী করেছে সরকারী দলের বিভিন্ন নেতা-কর্মী, মোট ২৪টি মামলা। এবং তিনি দেড় বছর কারাগারে কাটিয়েছেন।
মানুষ আজকাল এইদল আর ওইদল এভাবেই কথা বলে না। অনেক দলভক্তও এখন দেশের এবং নিজের অবস্থা দেখে দুই দলের নেতাদেরই গালাগালি করেন। তারা একে অপরের শত্রু, বিনাশ না করে থামবেন না। দুদলের হাতে দুধরনের অস্ত্র। বিরোধীদলের হাতে হরতাল, আর সরকারের হাতে ...
সবকিছুই। পুলিশ, সংসদ, সংবিধান, আদালত। আপনি আদালতকে গালি দিতে পারেন না। তারা সব ধরনের সমালোচনার উর্ধে। প্রয়োজন হয় সৃষ্টিকর্তাকেও গালি দিতে পারেন, আদালতের অবমাননা করবেন না। বিচারকের আসনে যদি হনুমান বসানো হয় তাকেও স্রদ্ধা করবেন, মহামান্য বলে উল্লেখ করবেন।
কাজেই, হে মহামান্য আদালত, একজন প্রাক্তন মন্ত্রী কিভাবে মোবাইল এবং ঘড়ি ছিনতাই কিংবা পুকুর চুরির মামলায় দেড় বছর জেলে কাটালেন জানাবেন কি ? মন্ত্রী থাকাকালীন তিনি বহুধরনের অপরাধ করতে পারেন। ঘুস নিতে পারেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের পরিচিতিতে দুর্নীতির সুযোগ করে দিতে পারেন। এসব মামলায় তার ফাসি পর্যন্ত হতে পারত। তাই বলে ঘড়ি আর মোবাইল ছিনতাই মামলা। আর পুকুরের মাটি চুরি। বাপরে! মাটি চুরি করে তিনি কোথায় পাচার করেছেন?
মানুষ অধিক শোকে পাথর হয়। তারচেয়েও বেশি শোকে কি হয়?
আইন বলে অপরাধ প্রমান না হওয়া পর্যন্ত, দোষী হিসেবে শাস্তি না দেয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত নিরপরাধ। বিরোধীদলের আরেক নেতা অভিযোগ নিয়ে জেলে বাস করছেন। সেটা খবর কারন ৯০ দিন সংসদে না গেলে তার সদস্যপদ হারাবেন তিনি। সেই পদ রক্ষার কোন সুযোগ তার হাতে নেই। তার বিরুদ্ধে রায় হোক না হোক, তাকে জামিন দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এটা নিশ্চয়ই ঘুরিয়ে খাওয়ার আরেক পথ। তার সদস্যপদ বাতিল মানেই আবার নির্বাচন, আরেকজনের সেই পদ লাভের সম্ভাবনা।
হায়রে আদালত, হায়রে প্রশাসন, হায়রে দেশ! যাওয়ার মত কোন যায়গা দেখিয়ে দিন সেখানে যাই।

0 comments:

 

Browse