কুকুর খারাপ না

Jun 15, 2011
ইসলাম ধর্মে কুকুর নিষিদ্ধ প্রানী। কারনটা খুব সামান্য, কিছু খারাপ কাজ করাকে কুকুরের সাথে তুলনা করা হয়েছে। খুব খারাপ নিশ্চয়ই বলা হয়নি। বাংলা ভাষায় প্রবাদ রয়েছে কুকুরের জন্য মুগুর। একমাত্র লাঠিপেটা করলে কুকুরকে কথা শোনানো যায়।
কথাটায় কিছুটা বাড়াবাড়ি রয়েছে একথা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়া দরকার নেই। কেউ যখন বলেন কুকুরের মত অকৃতজ্ঞ তখন বরং সেটা একেবারে মিথ্যে (আইনের ভাষায় অসত্যও বলতে পারেন)। কারন কুকুর আর যাই করুক অকৃতজ্ঞ হয় না। কখনো মনিবের বিরুদ্ধে যায় না। বরং জানা না থাকলে শুনে আশ্চর্য হতে পারেন মানুষের প্রথম বন্ধু হয়েছিল যে প্রানী সেটা কুকুর। আদিকালে শিকারের সময় পাশে থেকে সাহায্য করত। নিজের জীবন বিপন্ন হলেও পাশ থেকে সরে যেত না।
কাজেই কুকুরের মুলমন্ত্র হচ্ছে প্রভুভক্তি। কাউকে কুকুরের সাথে তুলনা করলে তাকে অকৃতজ্ঞ বিবেচনা না করে বরং তার ভক্তিগুনের তুলনাই করা উচিত।
মানুষ অনেক কারনে ভক্তি করে। প্রথম বিষয় অবশ্যই ধর্ম। ধর্মবিশ্বাস একসময় ভক্তিতে পরিনত হয়। সেই ভক্তির কারনে জীবন দিতেও ভক্তপ্রান দ্বিধাগ্রস্থ হয় না। কোন কোন সমাজে খেলাধুলাও ভক্তির পর্যায়ের। সচিন তেন্ডুলকারের মত খেলোয়ারকে অনেকে দেবতার চোখে দেখেন। বৃটেনে ফুটবলকে ধর্মের চোখেই দেখে সেদেশের মানুষ। একজন প্রিয় খেলোয়ার যখন মাঠে নামেন তখন তার লক্ষ লক্ষ ভক্ত চোখ রাখেন তার ওপর।
কোথাও কোথাও রাজনীতিও ভক্তির কারন হয়। নেতারা পরিনত হন দেবতায়। তাদের নামে পুজা করতে হয়। তারা যা স্বপ্ন দেখেছেন সেটাই অনুসারীদের স্বপ্ন, তারা যা বলেছেন সেটাই বক্তব্য, তারা যে পোষাক পরেছেন সেটাই পোষাক। সেই দেবতার কোন সমালোচনা করা যাবে না। কেউ সমালোচনা করলে তার মাথায় বাড়ি দিতে হবে।
ভক্তির এই ক্রমবিকাশ অনেক সমাজে বিস্তারলাভ করে পেশাগত কাজেও। সরকারের ভক্ত প্রশাসন কিংবা বিচার ব্যবস্থা। আর পুলিশ তো বটেই। সরকার যা পছন্দ করেন সেটা করেই সেটা করে ভক্তির প্রমান রাখতে হয়। সমাজভেদে পার্থক্য থাকতেই পারে। আমেরিকায় কোন সেনাকর্তা সরকারের সমালোচনা করেছেন, বৃটেনের কোন পুলিশের কর্তা প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন এগুলো নিয়মিত খবর। সেটা নিশ্চয়ই সেখানে সরকার ভক্তি আদায়ে ব্যর্থ সে কারনে। আসলে ভক্তি পাওয়ার যোগ্যতা তাদের নেই। ভক্তি পেতে হলে আগে দেবতা হতে হয়।
বাংলাদেশের সরকার আগে দেবতা হন, তারপর সরকার হন। কাজেই ভক্তির এখানে ছড়াছড়ি। কদিন আগে বাসের ভাড়া নিয়ে রীতিমত গন্ডগোল, অনেক চেষ্টা করেও সরকার মোবাইল কোর্ট (ভ্রাম্যমান আদালত, মোবাইল ফোন বিষয়ক কোর্ট না) করার জন্য লোকবল পাননি। সরকার নিজেই বলেছেন লোকবল নেই। তারপরই হরতালের সময় মোবাইল কোর্টে ছেয়ে গেল দেশ। লোকবলের কমতি নেই। আর তারাও ভক্তি দেখাতে রাস্তায় আদালত বসিয়ে রায় দিতে শুরু করলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্পর্কে নতুন করে কিছু না বলাই ভাল। আগে যারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে দায়িত্বপালন করেছেন তাদের পরবর্তি অবস্থার কথা বিবেচনা করে তিনি একটা কথাই বলেন, কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সত্যিকারের ভক্তি দেখায় আসলে পুলিশ। প্রবাদ আছে ডেকে আনতে বললে বেধে আনা, তারা তারই উত্তরসুরি। রীতিমত প্রতিযোগিতা, কে কত ভক্তি দেখাতে পারেন। হয়ত এরই ওপর নির্ভর করে পুরস্কার। অথবা পুরস্কার ছাড়াই শুধু ভক্তি প্রদর্শন। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে পেটাতে হবে। বিরোধী দলই হোক আর তেল-গ্যাস রক্ষার কথা বলা শিক্ষকই হোক। লাঠি একমাত্র ভাষা।
দিন বদল হয়। সরকার বদল হয়। ক্ষমতা বদল হয়। ভক্তি বদল হয় না।
হয়ত সেটা হলে ভাল হত। আজ যিনি মাথায় বাড়ি খেয়েছেন তার মনে রাখা উচিত ছিল বাড়িটা কে দিয়েছে। একসময় তাকে ব্যবহার করে প্রতিপক্ষের মাথায় পাল্টাবাড়ি দেয়ার আগে তার মাথায় একটা বাড়ি অন্তত দেয়া উচিত।
করা হয় না কারন সম্ভবত একটাই। তখন অমুকের নির্দেশ একবাড়ি দিছি অহন আপনার নির্দেশে দুইবাড়ি দিতাছি। আপত্তি করেন ক্যান ? এমন ভক্ত পাইবেন ?
শুরু করেছিলাম কুকুরের উদাহরন দিয়ে। কুকুর প্রানীটা এত খারাপ না। এত সহজে মনিব বদল করে না।

0 comments:

 

Browse