রাহুল সাংকৃত্যায়ন একখানা বই লিখেছিলেন ভবঘুরে শাস্ত্র নামে। আপনি যদি ভবঘুরে হতে চান তাহলে কিভাবে হবেন তার বিবিধ বর্ননা। অন্যকথায় কিভাবে তারপথে চলবেন। সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য হয়েও তিনি ছোটবেলায় বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন। একবার ধর্ম বদল করলেন, তাতেও সন্তুষ্ট না হয়ে ধর্মত্যাগ করে কম্যুনিষ্ট হলেন। তারচোখে মহাত্মা গান্ধী ছিলেন ভন্ড। আপনারাও তাকে অনুসরন করে দলভারী করবেন এটাই নিশ্চয়ই তার কাম্য ছিল।
সৈয়দ মুজতবা আলীও নিজেকে ভবঘুরে ভাবতেন। নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াতেন দেশ-বিদেশ। তিনিও ভবঘুরে শব্দটি ব্যবহার করেই লিখেছেন।
আপনি ভবঘুরে দেখেছেন কি ?
হয়ত দেখেন নি। অন্তত বুকে-পিঠে ভবঘুরে লিখে ঘুরে বেড়ানো কাউকে যখন দেখেননি। সবাই তো আর তাদের মত লিখে অন্যের দৃষ্টি আকর্ষন করতে পারেন না।
বুকে-পিঠে লেখা হয় দৃষ্টি আকর্ষনের জন্যই। নানারকম লেখা। কারো জামায় লেখা, দেখতে যেমন খেতেও তেমন। খেয়ে দেখবেন নাকি!
আরেকবার দেখে মুচকি হেসে মনে মনে বললেন যাক এতদিনে একজন সত্যবাদির দেখা পাওয়া গেল। আরেকটু ভালভাবে তাকালেন। বছর বিশেক বয়স হবে। ভবঘুরে লেখা টি-সার্টটা নতুন। বিশাল করে বাউন্ডুলে লেখার পর আরেকটু ছোট করে লেখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। চোখ কচলালেন, আরেকটু ছোট করে দুলাইন কবিতা লেখা।
বাপরে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাউন্ডুলে নামে ডিপার্টমেন্ট খুলেছে নাকি! ঘুরে অন্যদিকে তাকালেন। চোখে পড়ল আরেকজন, একই পোষাক। তারপর আরেকজন, আরেকজন ...
এতক্ষনে বোঝা গেল।
বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগ খোলেনি, তারা নিজেরাই খুলেছে। পড়াশোনা শেষ করে বাউন্ডুলে হতে হবে তারই প্রস্তুতি। আরকিছু হওয়ার সুযোগ যখন নেই তখন সময় থাকতে বাস্তবতা মেনে নেয়া।
একবার নিজেকেই প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা ওদের বাউন্ডুলে হওয়ার খরচ দিচ্ছে কে? ওই পোষাক, ওই চুলের ষ্টাইলেও তো টাকা লাগে। পকেটে দামী একটা মোবাইল আছে। নিশ্চয়ই বাবা-মা। মাসমাস টাকা দেয়। অথবা নিজের কর্মসংস্থান নিজেই করে নেয়। চাদা-টেন্ডার-ছিনতাই কতরকম পথই তো রয়েছে। পছন্দ করে বেছে নিলেই হল।
যারা তাদের বাউন্ডুলে বানাচ্ছেন, রীতিমত হাতে কলমে শিক্ষা দিচ্ছেন তাদের কথাও একবার মনে হল। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবী। দেশের প্রধান শিক্ষাপ্রতিস্ঠানের শিক্ষক। এখানে সেমিনার, ওখানে গোলটেবিল, সেখানে লম্বাটেবিল, চারিদিকে টক শো। টকটক করে উন্নতির কথা বলে যাচ্ছেন। তারাই তো শেখাচ্ছেন এদের। অন্তত তাদের হাতেই তো দায়িত্ব।
এদের অনেকে আবার অতীতের জাবর কাটছেন। একসময় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হত। বাপরে! সেকথা কি ভোলা যায়। এখন নাহয় মুড়িমুড়কির মত বিশ্ববিদ্যালয় গজিয়েছে। ওই পথের ধারে দোতলায় একটা তিনতলায় আরেকটা সেগুলোর কথা বলছি না। ওদের খাতায় পার্টটাইমার হিসেবে নাম লেখালেও ভাল টাকা পাওয়া যায়। ওদের নজর বড়। বলছি বিশ্ব জুড়ে ব্যাঙের ছাতার মত বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় হাজার কয়েক নাম তারাই দখল করে রেখেছে। তাতে কি, আমাদের প্রাচীন গৌরব। একসময় তো সেরা ছিল।
কিংবা অন্যভাবেও ভাবতে পারেন। যদি বাউন্ডুলেই হতে হয় তাহলে ভালভাবে হলেই তো হয় বাবা। একেবারে শতভাগ। মুজতবা আলী কিংবা রাহুল সাংকৃত্যায়নের মত। কষ্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের খাতায় নাম রাখার দরকার কি। ওই যায়গাটুকু ছেড়ে দাও, দেশে অন্য যারা আছে, যারা বাউন্ডুলে হতে চায় না তারা কাজে লাগাক।
ধুরো। ওদের কি সাধ্য আছে না যোগ্যতা আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। এখানে ভর্তি হতে যোগ্যতা লাগে। বুকের পাটা, বাহুর বল, পকেটের জোর, বাপ-মায়ের কৃতিত্ব, নেতার আশির্বাদ এসব থাকতে হয়। তবে না দেশের প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র।
আপনাকে বাস্তবতা মেনে নিতে হয়। ভবঘুরের মত বাউন্ডুলেও খারাপ কিছু না। বরং বাপ-মা যদি বাউন্ডুলে হয়, শিক্ষক যদি বাউন্ডুলে হয়, প্রশাসন যদি বাউন্ডুলে হয়, সরকার যদি বাউন্ডুলে হয় তাহলে ওটা খুব ভাল জিনিষ।
বাউন্ডুলে জিন্দাবাদ।
0 comments:
Post a Comment