বকিশনে আর খবরদার-

Jun 27, 2011
সোডার বোতল খুললে ফসফসিয়ে রাগ করে কেন এ প্রশ্নের জবাব পাননি সুকুমার রায়। সেটা বহু আগের কথা। তখন নিশ্চয়ই মানুষ এসব বিষয় নিয়েও মাথা ঘামাত। আজকাল এসব প্রশ্ন নিয়ে মাথা ঘামানোর ফুরসত নেই। অনেকের ঘেই গরমে-লোড সেডিং এসি চলে। কখনোই মাঘা ঘামে না। যাদের সেটা নেই তাদের রয়েছে মাথা ঘামানোর নানা গুরুত্বপুর্ন বিষয়। একেবারে রাজকীয় বিষয়। কে রাজা হবেন, কে সভাসদ হবেন এইসব। এর বাইরে চিন্তা করার কোন বিষয় নেই। কাজেই বকারামকেও আর সবকিছু ছেড়ে এনিয়েই কথা বলতে হয়।
অনেকদিন আগেই বকারাম একবার উল্লেখ করোছল আগামী রাজকার্য কিভাবে চলতে যাচ্ছে। জামাত রাজাকারের দল, ইসলামি চরমপন্থি দল। বাংলাদেশে ওদের যায়গা হতে পারে না। বিএনপি অগনতান্ত্রিক দল। গনতান্ত্রিক দেশে অগনতান্ত্রিক দল থাকতে পারে না। আবার একদলীয় গনতন্ত্র কথাটা ভাল শোনায় না। অন্তত বিরোধী দল থাকতে হয়। অন্তত জাপা যতদিন মহাজোটের সদস্য ততদিন সেটা অগনতান্ত্রিক দল হতেই পারে না। বিএনপি অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল, ক্ষমতায় থেকে দল গঠন করেছিল। এরশাদ সেটা করেনি। তার ওপর কদিন আগে তার মামলা বাতিল করেছে আদালত। কাজেই এরশাদ বিরোধী দলের আসনে সভাসদ হিসেবে বসতেই পারেন। বেশ গনতন্ত্র চর্চ্চা হয়।
প্রশ্নটা আসলে অন্য যায়গায়।  অনেকটা সুকুমার রায়ের গোলকধাধার মতই।
একসময় বাকসালের একদলীয় শাসন ব্যবস্থার প্রতিবাদে জাদ তৈরী করেছিলেন ইনু সাহেবের মত ব্যক্তিরা। তাদের ডাকে পথে নেমে হাজার হাজার কর্মী জীবনও দিয়েছিল। এখন তিনিও আওয়ামী লীগের ঐক্যের লোক। ৭২ সালের সেই সংবিধান ফিরিয়ে আনার মহান দায়িত্ব কাধে নিয়েছেন। তারপরও, নীতিগত কারনে যৌক্তিকভাবেই তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনা যায় না। আর যাই হোক, বাকশাল শব্দটি ব্যবহার করা হচ্ছে না যখন। আর অন্য দলগুলোকেও নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না যতক্ষন তারা মহাজোটের সাথে রয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে,
নৌকা মার্কায় জিতে যেসব বামপন্থী সংসদ সদস্য হয়েছেন তাদের অবস্থান কি হবে সেটা নিয়ে। তারা কি বিরোধী দলের সিটে বসবেন, নাকি সরকারদলের সিটে বসবেন। অন্তত মেনন সাহেব ইদানিং জানান দিচ্ছেন তিনি সরকারের সব বিষয়ে একমত নন। কাজেই বিরোধী দলের সিট ওনার পাওনা।
আইনে বলে কেউ যদি একদলের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে জেতেন তাহলে তিনি দলত্যাগ করতে পারেন না। নৌকা মার্কায় জিতে বিরোধীদলের সিটে বসলে কি তার সদস্যপদের ওপর এই আইন কার্যকর হবে ? যদি হয় তাহলে তাকে সদস্যপদ হারাতে হয়।
বিএনপি বিভিন্ন সময় সংসদ থেকে পদত্যাগের কথা বললেও তেমন জোর দেয়নি কখনোই। অন্তত বর্তমানকালে তো বটেই। বরং সরকারী জোট এতটাই নিশ্চিত অবস্থান গড়ে নিয়েছেন যেখানে তারা আগ বাড়িয়ে বলতে পারেন আপনারা পদত্যাগ করুন। বিরোধী সিটে বসানোর মত জনবল আমাদের হাতেই আছে।
অনেকেই মুখিয়ে থাকেন বিএনপির রাজনীতির মুল কারন নিয়ে। খালেদার বাড়ি বাচানোর আন্দোলন, কোকো-তারেককে দুর্নীতির মামলা থেকে বাচানোর আন্দোলন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের হাত থেকে বাচানোর আন্দোলন এইসব। বাস্তবতা এটাই কারন বিএনপি তাদের বক্তব্য সাধারনের বক্তব্য হিসেবে তুলে ধরতে পারেনি। চেষ্টাও করেনি। বঙ্গবন্ধু নাম বেচে যদি আওয়ামী লীগ সব করতে পারে তাহলে জিয়া পরিবারের নাম বেচে তারা টিকতে পাবেন না কেন, এটাই সম্ভবত তাদের যুক্তি।
কারো কারো দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। তাদের প্রশ্ন, যদি সত্যিসত্যি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মোবারক-গাদ্দাফির মত চিরস্থায়ী নেতৃত্ব গড়ে ওঠে তাহলে দিনে পাচবার বঙ্গবন্ধুর নামে সেজদা দিতে হবে নাতো! কিংবা তার মুর্তি নিয়ে ঘরে ঘরে পুজাঘর। এরই মধ্যে তারনামে এয়ারপোর্ট বানানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, আগামীতে হয়তো ব্যর্থ হবে না। বাংলাদেশ যদি কখনো স্যাটেলাইট তৈরী হবে তার নামও হবে বঙ্গবন্ধু, মন্ত্রিসভায় ঠিক করা হয়েছে।
দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংবাদপত্র প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করনে মন্তব্য ছাপার সুযোগ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। অনেকেই বুঝে গেছেন জামাত-বিএনপিকে গালাগালি না করলে মন্তব্য ছাপা হয় না। ইদানিং সেখানেও পরিবর্তন হচ্ছে। বরং বিপরীতমুখি মন্তব্য বেড়ে গেছে উল্লেখযোগ্য হারে। তারাও কি বিরোধী দলে যায়গা পাওয়ার চেষ্টা করছে ?
মাননীয় অর্থমন্ত্রী ইদানিং সব যায়গা উদ্দেশ্যমুলক, ভুল তথ্য দেখতে শুরু করেছেন। ইউনিসেফ, সিপিডি, অর্থনীতি সমিতি থেকে শুরু করে সংবাদমাধ্যম সব যায়গায়। এরাও কি তাহলে বিরোধীদলে যাচ্ছে ?
প্রশ্ন আরো আছে, কিন্তু জবাব দিচ্ছে কে ? সবার মুখে এককথা, মিথ্যে বাজে বকিশনে আর খবরদার-

0 comments:

 

Browse