মাতব্বরী ভাল জিনিষ

Jun 25, 2011
মাতব্বরী করতে কে-না পছন্দ করে। একজন শিশু যদি হাতে টিভির রিমোট পায় সেও সেটা হাতছাড়া করে না। জানে মাতব্বরীর সুযোগ ওখানেই। আর যদি বয়স্ক হয় তাহলে তো কথাই নেই। বয়স যত বাড়ে মাতব্বরী করার প্রবনতাও তত বৃদ্ধি পায়। অন্যান্য দেশে বয়স্কদের বলা হয় সিনিয়র সিটিজেন। তারা জীবনের অনেক বছর পার করেছেন, অনেক অভিজ্ঞতা। কাজেই তারা মাতব্বরী করবেন সেটাই স্বাভাবিক। তাদের আলাদা করে চিনে রাখুন। পোড়া দেশে বয়স্কদের আলাদাভাবে চেনা প্রয়োজন হয় না। কারন বয়স বাড়লে অভিজ্ঞতা-জ্ঞান-সন্মান এসব বাড়ে না। বরং শরীরের শক্তি কমে। চুলে পাক ধরে, দাত পড়ে যায়, হাতে-পায়ে বল কমে। বনে যেমন বুড়ো বাঘের কদর নেই তেমনই অবস্থা হয়।
সেই অবস্থা দুর করার জন্য সহায়ক হচ্ছে মাতব্বরী।
দেশের স্বিকৃত মাতব্বর সরকার। রীতিমত জনগনের ম্যান্ডেট নিয়ে অন্তত ৫ বছরের জন্য তারা মাতব্বর। সরকার যেহেতু এক ব্যক্তি নন সেহেতু মাতব্বরীটাও ভাগ হয়ে যায়। কেন্দ্র থেকে একটু বড় বৃত্ত, তাকে ঘিরে আরেকটু বড় বৃত্ত, তাকে ঘিরে তারচেয়ে বড়, এইভাবে। যার যতটুকু সামর্থ্য ততখানি মাতব্বরী দেখাতে শুরু করেন।
এতক্ষন বলা হয়নি, এবারে শুনে রাখুন। মাতব্বরী করাটাই বড় কথা। এর ফল কি তাতে কিছু যায়আসে না।
উদাহরন দিয়েই দেখা যাক।
ধুমপান মানে মৃত্যু। সবাই জানে। কাজেই এখানে কিছুটা মাতব্বরী করার সুযোগ রয়েছে।
প্রথম সুযোগ, প্রতিবছর বাজেটে ট্যাক্স বাড়াতে হবে।
মাতব্বরীর এমন জ্বলন্ত উদাহরন হয়না। সরকার বলছেন ধুমপান ক্ষতিকর কাজেই আমরা ট্যাক্স বাড়াচ্ছি। সিগারেটের দাম বাড়াচ্ছি। যদি মরতে ইচ্ছে হয় মরবেন, তবে সরকারের ঘরে বেশি ট্যাক্স দিয়ে মরবেন।
এ হচ্ছে কেন্দ্রের কথা। এর বাইরের বৃত্তের মাতব্বরী নানাধরনের। এক বৃত্ত আগেই দাবী তোলে, ট্যাক্স বাড়াতে হবে। আরেক বৃত্ত ট্যাক্স বাড়ানোর পর ধন্যবাদ জানায়। আরেক বৃত্ত আলোচনার টেবিলে প্রশংসা করে।
হয়ত ভাবছেন, মন্দ কি। মাতব্বরী করে ভালই তো করছে। মানুষকে সচেতন করছে। সংবিধানে আছে ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, কাজেই প্যাকেটের গায়ে সংবিধিবদ্ধ শতর্কিকরন ছাপা হচ্ছে। অনেকে তাতেও সন্তুষ্ট নন, আরো কড়া কথা লিখতে হবে। কারো মাতব্বরী তাকেও ছাড়িয়ে, দেশের বহু মানুষ নিরক্ষর। ওসব লেখায় হবে না, ছবি থাকতে হবে। কে জানে হয়ত আগামী দিনে ভিডিও দেয়ার ব্যবস্থাও চালু হবে।
কথা হচ্ছে ধুমপান বন্ধের চেষ্টা কিংবা ইচ্ছে এই মাতব্বরদের আছে কিনা।
নেই। কোনরকম যুক্তিতর্কে না গিয়ে সরাসরি মেনে নিন, কোন ইচ্ছে নেই। বরং যদি সিগারেট কোম্পানী বন্ধ হয় তাকে চালু রাখার সবধরনের চেষ্টা করা হবে। সিগারেট কোম্পানী মানেই লাভের গরু। এমন দ্বিতীয় কোন যায়গা নেই যেখানে ট্যাক্স বাড়িয়ে হাততালি পাওয়া যায়। সেইসাথে বহুকোটি টাকার সংস্থান। সেইসাথে বহু মানুষের কর্মসংস্থান। এসব হাতছাড়া করে কোন ...
মাতব্বরী অন্যদেশের মানুষও করে। পরিসংখ্যান বলে উন্নত দেশে ধুমপান কমছে, বাড়ছে দরীদ্র দেশে। কারনটা অজানা থাকার কোন কারন নেই। তাদের দেশে সিগারেট কিনতে হয় গুনে গুনে কমপক্ষে ২০০। ২০টার প্যাকেটের ১০ প্যাকেট একসাথে। বাংলাদেশে একখানা সিগারেট কিনে শখ পুরন করা যায়। তাদের দেশে কমবয়সীদের কাছে সিগারেট বিক্রি অপরাধ। এখানে কমবয়সীরাই সিগারেট ব্যবসায়ী।
আর অনুকরনের বিষয় তো আছেই। গ্রাম থেকে শহরে এসে তাকে শহর অনুকরন করতে হয়। শহরে থেকে নিউইয়র্ক-লন্ডনকে অনুকরন করতে হয়। অবাক হবেন না যদি এক্ষেত্রে মেয়েরা সমান অধিকার লাভ করে। খুব দ্রুতগতিতে তারা এগোচ্ছেন পোষাক-আষাক-আচরন-ভাষা-মাদক সবদিকেই।
বিষয়টা মাতব্বরীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখি। আরো এক ধরনের মাতব্বরী রয়েছে। সরকারের কয়েক কোটি টাকার বাজেট রয়েছে নানাধরনের প্রচারনাকাজে। সেখানে মাতব্বরীটা হয় এভাবে;
টিভি বিজ্ঞাপন বা ডকুমেন্টারীর মাধ্যমে প্রচারনার কাজ করা হবে। টেন্ডার ডাকা হবে। মুলত কাজ পাবেন সরকারদলীয় কোন কেউকেটা, অথবা যার ঘুস দেয়ার সামর্থ্য আছে। সাধারন টিভি অনুষ্ঠান তৈরীতে হয়ত খরচ ৫০ হাজার টাকা, সেটাই সরকারী হলে ৫ লক্ষ। কাজের সময় খরচ কমে হবে অর্ধেক, কিংবা আরো কম। কোনমতে বিলটা পাওয়া গেলেই চলে। বাকি টাকা ভাগাভাগি। যাহোক, মাতব্বরী তো করা হল।
বলতে পারেন যে দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ হাজার হাজার নাটক নিয়ে মেতেছে, জনগনকে প্রেম শেখানো এবং বাটপারী শেখানোতে বিপ্লব আনছে তাদের একাজে লাগানো হচ্ছে না কেন। অবশ্যই তাদের বলা সম্ভব না আপনি অমুক বিষয়ে নাটক করুন। এটা তো বলা সম্ভব, অমুক বিষয়ে সফল নাটক করলে এই পুরস্কার। যে কোটি টাকা ব্যয়ে মাতব্বরী করছেন সেটা পুরস্কার হিসেবে রেখে দিন। শতশত নাটক তৈরী হবে যা ধুমপান কেন, সমাজের যত ধরনের সমস্যা রয়েছে তার সমাধান দেখাবে।
কিন্তু মাতব্বরী বলে কথা। মন্ত্রী বলেছেন খাল কেটে কুমির আনবেন না। তারা নিজেরা সেটা করতে পারেন না। বরং মাতব্বরীর মজা ভোগ করা যাক।

0 comments:

 

Browse