উল্টাসুর

Jun 1, 2011
পাশ্চাত্যে গানের সুরের হিসেব খুব সহজ। অংক জানলেই চলে। এ-ওয়ান মানে ১১০ হার্টজ, এ-থ্রি মানে তার দ্বিগুন, ২২০ হার্টজ। এভাবেই দ্বিগুন, তিনগুন, চারগুন ...
ভারতীয় উপমহাদেশে সেতুলনায় সঙ্গিত অনেক জটিল। অনেকটাই কান নির্ভর। সা-রে-গা-মা-পা যাই বলুন না কেন, কানে শুনে বুঝতে হবে সেটা ঠিক আছে কিনা।
আর সেখানে যদি উল্টাসুর যোগ হয় তাহলে খবর আছে!
সেকারনেই সঙ্গিতে এত আয়োজন। তবলা, হারমনিয়াম, তানপুরা, সারিন্দা। সবাই একই তালে চলে। একই সুরে কথা বলে। একজন যে সুর ধরে অন্যকেও সেটাই ধরতে হয়। নইলে সঙ্গিত থাকে না।
সুর অবশ্য সঙ্গিত ছাড়াও থাকে। কথার সুরই ধরুন না কেন। একজন যা বললেন তারসাথে সুর ধরে তাকে আরেকটু এগিয়ে নেয়া। নীতির রাজা রাজনীতি যদি হয় তাহলে তো কথাই নেই। বরং এখানে গড়মিল হলে সমস্যা সঙ্গিতের চেয়েও বেশি। ওই যে প্রধানমন্ত্রীর কোন এক উপদেষ্টা (প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা কতজন কে জানে!) বললেন র‌্যাবের গুলিতে পা হারানো লিমন সন্ত্রাসী, তার বাপ সন্ত্রাসী, ভাই-বোন সব সন্ত্রাসী। পায়ে গুলি করবে না-তো কি করবে!
এরসাথে সুর মিলিয়ে যার দায়িত্বে র‌্যাব সেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, ওনার বক্তব্যই সরকারী বক্তব্য। আমাকে আলাদাভাবে প্রশ্ন করবেন না।
 বিএনপি প্রধান বৃটেন-আমেরিকা ঘুরে এলেন। কে জানে বাবা কি মন্ত্র পড়লেন সেখানে। যদি ওরা তার পক্ষ নেয়। বরং খোজখবর নেয়া যাক। তিনিও গেলেন আমেরিকা। সেখানেও একই প্রশ্ন।
আরে বাবা আমেরিকা যেসব রিপোর্ট লিখেছে ওসব ভুল। ওরা বাংলাদেশে কোন খবর রাখে না। আমেরিকা কতদুরে জানেন না। র‌্যাব কখনো ক্রশফায়ার করে না। ওদের দিকে গুলি ছুড়লে তবেই আত্বরক্ষা করে। আর আজকাল তো মারাও যায় না, বড়জোর পা হারায়। র‌্যাবের দোষ যদি দিতেই হয় বিএনপিকে দেবেন। ওরাই র‌্যাব তৈরী করেছে।
এসবই হচ্ছে সুরের কথা। আবার উল্টোসুরও শোনা যায়। যখন ক্ষমতায় তখন সুর হচ্ছে, বিরোধী দলে গেলেও হরতাল দেব না কথা দিচ্ছি। আর বিরোধী দলে থাকার সময় উল্টোসুর, সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত হরতাল।
সোজা সুর হচ্ছে, যাকিছু বলার সংসদে এসে বলুন। গনতন্ত্র চর্চার যায়গা ওটাই। আর উল্টোসুর হচ্ছে, সমাধান হবে রাজপথে। অমুক তারিখে সরকারের পতন হবে। নইলে দেশ অচল।
সোজা সুর হচ্ছে, তত্তাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আমাদের আবিস্কার। আমরা বিশ্বে উদাহরন সৃষ্টি করেছি। আর উল্টাসুর হচ্ছে, তত্ত্বাবধায় সরকার অসংবিধানিক। গনতান্ত্রিক দেশে ওটা কোনমতেই  থাকতে পারে না।
সুর অথবা উল্টাসুর যাই হোক না কেন, মুল উদ্দেশ্য তো ওই শ্রোতা। শ্রোতা যদি না শোনে তাহলে সুরচর্চ্চা করে কে ? সমস্যা ওই শ্রোতাদেরই। তারা বুঝে পাননা সুরের দিকে তাল ধরবেন, নাকি উল্টাসুরের দিকে। তাল রাখতে গেলে সময়মত উল্টোসুর ধরতে হয়। যাকিছু প্রাপ্তি সে তো ওই পথেই।
বিষয়টি আরেকটু খোলাসা করলে হয়ত দোষ হবে না। বহু বুদ্ধিজীবী মনে করেন আওয়ামী লীগ মানেই স্বাধীনতা। আওয়ামী লীগের বিরোধী মানেই দেশদ্রোহী। অমন পাপ করা যায় না। পাপ না করে পুন্য করলে বরং সময়ে প্লট-ট্লট পাওয়া যায়, লোন পাওয়া যায়। একটু কষ্ট করে হলেও তাই উল্টোসুর ধরতে হয়।
ব্যবসায়ীরাই বা পিছিয়ে থাকবেন কেন। পাচ বছর ধরে সুর রপ্ত করতে হয়। তারপর যদি হঠাত করে কিছুদিনের জন্য সুর পাল্টায় তাহলে সমস্যা হয় বৈকি। ওসব তত্ত্বাবধায়ক-টায়ক আমরা চাই না। সমাজ হতে হয় ব্যাবসাবান্ধব। ব্যবসায়ীদের দুঃখকষ্ট নেতারা ছাড়া আর কে বোঝেন ? তারাও তো ব্যবসা করেন।
শ্রোতার যেহেতু প্রাপ্তির বিষয় নেই, আছে শুধুই হারাবার, তারা সবদিকেই দিশেহারা। ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপি তাতে কিছু যায় আসে না। সেই বেকারত্ব, সেই চাদাবাজি, সেই লোড সেডিং, সেই জানজট ...
সুরের হিসেব পাশ্চাত্যের মত গানিতিক হিসেবে হলে বেশ হত। সহজে জেনে নেয়া যেত কখন কি হতে যাচ্ছে।

0 comments:

 

Browse