ভুতের সুড়সুড়ি

May 30, 2011
সুখে থাকতে ভুতে কিলায়, প্রচলিত প্রবাদ কথাটা কতটা সত্য কতটা মিথ্যে কখনো যাচাই করা হয়নি ভুতের বিষয়টি নিয়ে যখন মতভেদ আছে তখন সেটা থাকা প্রয়োজন ছিল খোজ করলে অর্থসংস্থান করার মত কাউকে কি পাওয়া যেত না! নিশ্চয়ই যেত। ভুত নিয়ে মতভেদ কমানো যেত, কিংবা হয়ত বাড়ানো যেত। দুপক্ষ তাদের জোড়ালো প্রমান, তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে মুখোমুখি দাড়াতেন। বেশ পাল্টাপাল্টি দেখা যেত। নাট্যকাররা আর কি নাটক লেখেন, সত্যিকারের নাটক তো জমান ওই বিশেষজ্ঞরা। টিভির পর্দা থেকে মানুষের চোখ সরে না।
সেই গবেষনা কিংবা তদন্ত হয়নি, কাজেই মতভেদ যেখানে ছিল সেখানেই থেকে গেছে যুগ যুগ ধরে।
তাদের কারো মতে ভুত দেখতে ভূতের মত কালো বড়বড় মুলার মত দাত সবসময় ভেংচি কেটে থাকে রোগাপাতলা গড়ন পায়ের পাতা উল্টোদিকে কারো মতে ভুত সাদা তালগাছের সমান বিশাল আকার ভুতের কাজ মানুষকে ভয় দেখানো। অন্তত দেশি ভুত তো বটেই। পাশ্চাত্যে ক্যাসপার নামে এক ভুত আছে যে ভাল ভুত। এদিকে তেমন নামকরা ভাল ভুত নেই। অর্থাত ভাল কাজ করে কোন ভুত নাম কামাতে পারেনি।
ভুতের গড়ন কিংবা রং নিয়ে যত মতভেদই থাকুক একটা বিষয়ে মিল রয়েছে দুপক্ষেরই, ভুত অশরীরী অর্থাত ভুতের শরীর বায়বীয় পদার্থ দিয়ে তৈরী
যদি সেটা সত্য হয় তাহলে ভুতের পক্ষে কোন বস্তুর ওপর প্রতিক্রিয়া দেখানো সম্ভব না বড়জোর কিলের ভয় দেখাতে পারে তাইবলে মুঠি পাকিয়ে কিল মারা অসম্ভব যদি মারেও, সেই কিলে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই
কাজেই সুখে থাকলে ভুতে কিলায় কথাটা অর্থহীন বরং সুখে থাকলে ভুতে সুড়সুড়ি দিতে পারে বাতাস আকারে সেটা দেয়া খুবই সম্ভব আর সেই সুরসুড়িতে আরো খুশি হয়ে কিছু একটা করে ফেলা খুবই সম্ভব
যেমন ধরুন, জনৈক ব্যক্তি খুশিমনে হেটে যাচ্ছেন ফুটপাত দিয়ে অতিসুখের কারনে ভুতের সুরসুড়ি ভর করল আর তিনি পাশের জনকে কনুই দিয়ে ধাক্কা মারলেন ধাক্কা খেয়ে ভদ্রলোক বিরক্ত হয়ে ঘুরে তাকালেন, ‌যায়গা কি কম পড়ছে ?
না, যায়গা কম পড়েনি অনায়াসে পাশ কাটিয়ে যাওয়া যেত কিন্তু সুড়সুড়ি বলে কথা প্রতিক্রিয়াটাতো জানা গেল অন্তত ঘুসি বাগিয়ে তেড়ে আসেনি
এখানে স্বভাবগত চিন্তা ব্যবহার করতে হয় যাকে কনুই মারা হবে তার শক্তি কম হতে হয় নইলে বিপদ মোবাইল ফোনে সে সম্ভাবনা নেই যে নাম্বার মনে আসে টিপতে থাকুন কে জানে কোন সুন্দরীর সাথে এভাবে পরিচয় হয়ে যেতেও পারে তারাও নিশ্চয়ই বসে আছে কে ফোন করবে সেই অপেক্ষায়। নাটকে-সিনেমায় দেখায়, উপন্যাসে লেখে যদি নাও হয় অন্তত ক্ষতি নেই মিস কলে পয়সা খরচ হয় না ওপাশ থেকে পাল্টা কল করে বড়জোর ধমক দিতে পারে, ইয়ার্কি পাইছেন! মিসকল দ্যান ক্যা ?
আমার খুশি
ব্যস তার কি করার আছে ? ইচ্ছে হলে বড়জোর নিজের পয়সা খরচ করে গালাগালি করতে পারে গ্রামীন-বাংলালিংকের ঘরে আরো কিছু পয়সা যাবে নিজের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই
কখনো কখনো অবশ্য হুমকি-ধামকি দেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে ভোটার আইডি না থাকলে মোবাইল সিম কেনা যাবে না আগে বয়স হোক, ভোটার লিষ্টে নাম লেখার যোগ্যতা হোক, তারপর সেই কার্ড হাতে পাওয়ার যোগ্যতা হোক, তারপর সাথে সাক্ষিসাবুদ নিয়ে বিশেষ দোকানে সিম কেনার জন্য ধর্না দেবেন ওই যে ফুটপাতে সিম বিক্রি হচ্ছে ওগুলোতে ভুলেও হাত দেবেন না ওটা আইনবিরুদ্ধ এখন আইন দেখেননি বটে, সময় হলেই দেখবেন আইনের পাচ পা আটক, রিমান্ড সবকিছু একেবারে ভুত বিদায় করে ছাড়া হবে
সবাই যে শুধুমাত্র ভুতের সুড়সুড়ির কারনে এটা করেন এটাও ঠিক না। এরসাথে লাভের বিষয়ও থাকে। অনেকে রীতিমত খ্যাতিমান। পুলিশের খাতায় নাম আছে শীর্ষ সন্ত্রাসী বলে, তার সম্পর্কে চোখ বন্ধ করে বর্ননা দিতে পারেন থানার কর্মকর্তা। তবে তিনি কখনো ধরা পড়েন না। দিব্বি গাড়ি হাকিয়ে ঘুরে বেড়ান, এখানে ওখানে ফোন করে বলেন তার কতটাকা ট্যাক্স দিতে হবে। পুলিশের কাছে গেলে তার নাম শুনে পুলিশ বলে, দিয়া দ্যান। কি দরকার ঝামেলা বাড়াইয়া।
পুলিশকেই বা দোষ দেবেন কেন। তারা যে বেতন পায় তাতে চা-সিগারেটের দামও হয় না। একখানা সিগারেটের দাম ৬ টাকা। এদিকে থানায় বসার চেয়ারটাই ভাড়া করতে হয়েছে দশ লাখে।
আসলে ভুত সম্পর্কে গবেষনা কম করাই ভাল। একবার রহস্য জেনে ফেললে আর রহস্য থাকে না। তারচেয়ে বরং এখানে ওখানে যে সুড়সুড়ি দেয় সেটাই চালু থাক।

0 comments:

 

Browse