দেশটাকে সোজা করে ধর

Aug 4, 2011
সেই দুই মাতালের কথা কি মনে আছে ?
টালমাটাল অবস্থায় বাড়ি ফিরছে দুজন। বাড়িতে তালা লাগানো। একজন চাবি বের করে তালা খুলতে চেষ্টা করল। চাবি কিছুতেই তালায় ঢোকে না। অপরজন বলল, তোর পা টলছে। চাবিটা আমার কাছে দে।
তার উত্তর, আমি ঠিক আছি। বাড়িটা টলছে। তুই বাড়িটা সোজা করে ধর।
আইনষ্টাইনের আপেক্ষিতকতার সুত্র অনুযায়ী কথাটা তো ঠিকই। আপনি মনে করছেন আপনি চুপ করে দাড়িয়ে আছেন কিন্তু পৃথিবীটা যে বনবন করে ঘুরছে, সাথে আপনাকেও ঘুরাচ্ছে সেখবর কি রেখেছেন ? দিব্বি চারিদিকের সাথে তুলনা করে বলছেন আপনি চুপ করে দাড়িয়ে আছেন।
অনেকেই সবকিছু নিয়ে অসন্তুষ্ট। রীতিমত সবকিছু নিয়েই। বাড়িভাড়া, গাড়িভাড়া, খাবার দাম, খাবারে ভেজাল, রাজনীতি অর্থনীতি, ধর্ম, শিক্ষাব্যবস্থা এমনকি সংবিধান নিয়েও অসন্তুষ্ট। বাংলাদেশের সংবিধানে নাকি মৌলিক বিষয় বলে কিছু বিষয় আছে। এটা সংবিধান বিশেষজ্ঞদের কথা, আমার ওপর দোষ চাপাবেন না। আমি সংবিধান লংঘনের মত দেশদ্রোহি নই।
তাদের কথা অনুযায়ী, দেশের আইন, সংসদ, জনগন এবং আদালতের মধ্যে একধরনের সম্পর্ক আছে। আইন তৈরীর ক্ষমতা একমাত্র সংসদের। আদালতের সেখানে কিছু বলার নেই। তবে কোন ব্যক্তি যদি কোন আইনকে জনগনের স্বার্থ পরিপন্থী মনে করেন তাহলে তিনি আদালতে  যেতে পারেন। আদালত সেটা পরীক্ষা করে দেখতে পারে এবং প্রয়োজনে স্পষ্টভাবে বলতে পারে, অমুক আইন বাতিল করা হল। আদালত আইন তৈরী করতে পারুন না পারুক, বাতিল করার ক্ষমতা রাখে। সেখানে সংসদের কিছু বলার নেই।
তত্তাবধায়ক আইনও বাতিল হয়েছে এই পথেই। সেটা গনতন্ত্রের পরিপন্থি মনে করায় আদালত সেটা বাতিল করতে বলেছে। আপনি প্রশ্ন করতে পারেন যে রায়ের বদৌলতে সংসদে আইন পাশ হল, সংবিধান সংশোধন হল, রাষ্ট্রপতি সই করলেন সেই রায় কোথায় ? সেটা নাকি এখনো লেখা হয়নি। এসব প্রশ্ন না করাই ভাল।
এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বেশি সময় রাষ্ট্র পরিচালনা করা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন ওই সংবিধান ছুড়ে ফেলে দেয়া হবে। আইনের ভাষায়, এটা রাষ্ট্রদোহিতার সামিল। এটা আইনের ভাষা কারন সরাসরি রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলে তাকে ফাসিতে ঝোলানো সম্ভব না সেটা সকলেই জানেন। অন্তত এখনও পরিস্থিতি এতটা নিয়ন্ত্রনে আসেনি। বরং সামিল বা সমতুল্য বলা নিরাপদ।
যিনি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সময় দেশ চালিয়েছেন তিনি সংবিধান কি সেটা ভালভাবেই জানেন। তার পরিবর্তন কিভাবে করতে হয় সেটাও বোঝেন। বই ছুড়ে ফেলার মত ছুড়ে ফেললে সযবিধান পরিবর্তন হয় না। তারপরও তিনি ছুড়ে ফেলার কথাই বলেছেন।
কেন বলেছেন তার ব্যাখ্যাও দিতে পারেন নিজের মত করে। আপনার নিশ্চয়ই কাউকে ডাকার অভিজ্ঞতা আছে। একজনকে নাম ধরে ডাকলেন, ওই কালাম।
উত্তর নেই।
আরেকটু জোর বাড়ালেন, ওই কালাইম্যা।
কখনো কখনো কাজ হয়। কখনো এতেও কাজ হয় না। গলা আরো চড়াতে হয়, ওই হালার পুত, কানে হোনস না!
এবারে না শুনে উপায় নেই। হয়ত এই পদ্ধতিতেই তিনি শোনানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বক্তব্য অন্যখানে। সংবিধানের সেই মৌলিক বিষয়।
কোন ব্যক্তির যদি মনে হয় কোন আইন জনগনের স্বার্থ পরিপন্থি তাহলে তিনি আদালতে রিট করতে পারেন। অন্য কথা সরাসরি সংবিধানের বিরুদ্ধেই মামলা করতে পারেন। আদালত সেই মামলা গ্রহন করে (করেছে অনেকবার)।
তাহলে সংবিধানের সমালোচনা করা রাষ্ট্রদ্রোহিতা হবে কিভাবে ? মামলা করা যাবে সমালোচনা করা যাবে না সেটা কিভাবে সম্ভব। সংবিধান কি ধর্মগ্রন্থের মত এমনকিছু যা সযত্নে তুলে রাখবেন, পড়ে দেখা প্রয়োজন নেই, ভেতরে কি আছে জানা প্রয়োজন নেই, মানা প্রয়োজন নেই। শুধুই ভক্তি করবেন।
বিষয়টা বহুদুর গড়িয়েছে। আদালতে হাতাহাতি, মামলা, গ্রেপ্তার পর্যন্ত। আরো বহুদুর গড়াবে নিশ্চিতভাবেই। জনগন টলছে না দেশ টলছে বোঝা কঠিন।

0 comments:

 

Browse