১৯৮৪ : বেটার লেট দ্যান নেভার

Aug 16, 2011
কিছু মানুষ এমন কিছু কাজ করেন যা তাদেরকে যুগ যুগ ধরে অমর করে রাখে। এমন কিছু কথা বলেন যা কখনো পরিবর্তন হয় না, ঘুরেফিরে আসে আর তাদেরকে মনে করিয়ে দেয়। একজন অর্থনীতিবিদ বলেছিলেন বিশ্ব তার ভারসাম্য রক্ষার জন্য মহামারী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি ব্যবহার করে। অন্যকথায়, মানুষ যদি অতিরিক্ত হয় তাহলে নানাকরনে মানৃষ মৃত্যুবরন করে সমতা রক্ষা হয়। মানুষ একসময় এই তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। কলেরা-বসন্ত এসব রোগ যদি থামানো যায় তাহলে মহামারী হবে কিভাবে ? ক্ষমতা মানুষের হাতে।
কাজেই মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে তার তত্ত্ব ভুল। ক্ষমতা মানুষের হাতে। বর্তমান বিশ্ব জনসংখ্যায় ৭০০ কোটি ছাড়িয়ে ৮০০ কোটির দিকে ধাবমান। আর সেখানেই কিছু মানুষ আবার পুরনো তত্বের দিকে ফিরে তাকাতে শুরু করেছেন। তাদের বক্তব্য, চারিদিকে একবার দৃষ্টি দিন তো-
মানুষ বাড়ছে হু-হু করে। জমি কমছে হু-হু করে। গাছপালা কমছে হু-হু করে। ঘুর্নিঝড়, জলোচ্ছাস, ভুমিকম্প নিত্যদিনের ঘটনা। এখনো তাত্ত্বিকভাবে বিশ্বের সম্পদ দিয়ে বিশ্বের সকলের খাদ্যপ্রয়োজন মেটানো সম্ভব, আগামী ৫০ বছর পর সেটা সম্ভব হবে না। নিশ্চিতভাবেই কোটি কোটি মানুষকে অনাহারে থাকতে হবে। ফল হলে মারামারি-কাটাকাটি-যুদ্ধ। সেইসাথে প্রাকৃতিক দুযোর্গ এবং ফিরে আসবে মহামারী। যেভাবে হু-হু করে মানুষ বাড়ছে তারচেয়েও দ্রুত মানুষ কমবে। অনেকে হিসেব করে বলছেন এই শতকের শেষে বিশ্বের জনসংখ্যা হবে ২০০ কোটি। বাকি ৬০০ কোটি উধাও।
এসব ভয়ংকর কথা নিয়ে কথা না বলাই ভাল। আর ৫০ বছর আসতে বহু দেরী। ততদিনে নিরাপদ বাড়ি, ব্যাংকে যথেষ্ট পরিমান টাকা জমা করলে অন্তত নিজের জন্য ভয় নেই।
অন্য ধরনের বক্তব্যও দিয়ে গেছেন অনেকে। জর্জ অরওয়েল নামে এক লেখক একটা উপন্যাস লিখেছিলেন, নাম ১৯৮৪। ১৯৮৪ সালে বিশ্ব কেমন হবে তার আগাম তথ্য। নতুন করে বলা প্রয়োজন নেই তিনি যখন সেটা লিখেছিলেন তখন ১৯৮৪ বহু দুরের বিষয়, বর্তমানে সেটা বহু পেছনের বিষয়। কই তেমন তো ঘটেনি!
যারা লেখাটি পড়েন তাদের জন্য একটি মুল বক্তব্য উল্লেখ করা প্রয়োজন। সেখানে বিশ্ব শাসন করবেন বিগ ব্রাদার। কে কখন কোথায় যান, কি করেন, কারসাথে কি আলাপ করেন সবকিছু পর্যবেক্ষন করা হয়। কি বলতে পারেন, কি করতে পারেন সেটা নির্দিষ্ট। তার বাইরে কথা বলে বিগ ব্রাদারের চোখ এড়িয়ে যাবেন সেটা সম্ভব না। কৈফিয়ত দিতে হবে। শাস্তি পেতে হবে।
মানুষ সেটা পছন্দ করে। একসময় তার ব্যবহার করে দুরের কারো সাথে কথা বলে মানুষ খুবই খুশি ছিল। এরপর তারছাড়া কথা বলার সুযোগ পেয়ে আরো খুশি। এখন তারছাড়া কথাবলাই না সরাসরি দেখাও যায়, কাজেই মহাখুশি। ছোটঘর থেকেও অন্যকে দেখাতে পারেন কি করছেন।
কাজেই নিজের চেহারাকে যদি বইয়ের মত অন্যের সামনে তুলে ধরা যায় সেটা করবেন না কেন ? ফেসবুক যখন সুযোগ দিয়েছে। সেখানে ব্যবহারকারীর সংখ্যা শতকোটির দিকে (বাপরে, তাহলে বিশ্বে দরীদ্র কতজন ?)।
কথা হচ্ছিল বিগ ব্রদার নিয়ে।
পশ্চিমা বিশ্ব ব্যক্তিস্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা এসব আবৃত্তি করতে খব পছন্দ করেন। মুলত তাদের দায়িত্ব বাকি বিশ্বকে এসব শেখানো। মিসরের মোবারক যখন ইন্টারনেট বন্ধ করলেন তখন সারা বিশ্বের প্রধান খবর সেটা। এমন খারাপ মানুষ আর হয় না।
বাংলায় একটা প্রবাদ আছে দুদিনের চাদ ঘরে বসে দেখা যায়। অন্যভাবে ব্যাখ্যা করলে বলতে পারেন, দুদিনের চাদ লুকিয়ে থাকতে পারে না। কাজেই চাদ যখন উঠেছে তখন একসময় দেখা দেবেই। একটু একটু করে দেখা দিতে শুরু করল সবখানেই।
অমুক দেশ তমুক দেশের ওপর ইন্টারনেটে খবরদারী করছে। চীনারা আর উত্তর কোরিয়রা সবচেয়ে দায়ী। তারা এসব জঘন্য কাজ করে। প্রযুক্তি পশ্চিমাদের, তাদের বিপক্ষে মত দেবে কে ?
কিছু মানুষ আবার আপনপর বোঝেন না। তারা বলছেন একাজ সবচেয়ে বেশি করে পশ্চিমারাই। তারা রীতিমত শতকোটি ডলার ব্যয় করে অন্যান্য দেশের ওপর নজরদারী করেন। যে যাকগে- ওসব রাজকীয় কারবার।
খবর প্রকাশ পেল এপল, গুগল এরাও খবরদারী করছে সাধারন মানুষের ওপর। কে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে কিবাবে, কখন কোথায় যাচ্ছে এইসব। তার সত্যিকারের আচরন জানলে তবেই না তারকাছে ব্যবসা করা যায়।
এটাও যাকগে। এদের টার্গেট বড়জোর পকেটের টাকা।
বরং হোসনি মোবারকের কথায় ফেরা যাক। ব্যাটা খুব খারাপ লোক ছিল। ইন্টারনেট বন্ধ করার মত খারাপ কাজ করতে দ্বিধা করেনি। কিন্তু, এর ভাল দিকও আছে। ভালকে অনুকরন করতে সমস্যা কোথায় ?
সানফ্রান্সিসকোয় পুলিশের গুলিতে একজন মারা গেছে। প্রতিবাদে মানুষ পথে নেমেছে। মোবাইল ফোন বন্ধ করে দাও। তাহলেই যোগাযোগ বন্ধ, আন্দোলন খতম। একে দোষ দেবেন কেন ? তারা তো জনগনের নিরাপত্তা রক্ষা, শান্তিশৃখলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত।
বৃটেনেও পুলিশের হাতে একজন মারা যাওয়ার খবরে তোলপাড়। মানুষ রীতিমত দাঙ্গা বাধিয়ে বসল। এখানে আগুন সেখানে লুটপাট। যোগাযোগ করল ওই মোবাইল ফোন, ফেসবুক ব্যবহার করেই। এটা হতে দেয়া যায় না।
কাজেই জেমস বন্ডের মত বিশ্বসেরা গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৫ সরাসরি হাত লাগাল। ফেসবুক-টুইটারে কে কখন কি লিখেছে জানতে হবে। কে জননিরাপত্তার হুমকি তৈরী করেছে তাদের ধরতে হবে। ওই যে ২০ বছর বয়সি একজন লিখেছে পুলিশের দিকে পানি ছুড়তে হবে, এটা ২০০৭ সালের আইনে ভয়াবহ অপরাধ। অন্যকে আক্রমনে উতসাহ দেয়া। ওকে আগে গ্রেপ্তার কর।
অরওয়েল যেযুগে লিখেছিলেন সেযুগে ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন, জিপিএস, সিসি ক্যামেরার স্বপ্ন দেখাও সম্ভব ছিল না। ১৯৯৪ সালে কি ঘটবে বর্ননা করা ছিল অকল্পনীয় বিষয়। ১৯৮৪ সাল পেরিয়ে গেছে আগেই। তখন তার বর্ননা অনুযায়ী সেসব ঘটেনি বলে যারা আক্ষেপ করছেন তাদের জন্য সুখবর, বেটার লেট দ্যান নেবার। দেরিতে হলেও সেটা ঘটছে।

0 comments:

 

Browse