দর্শককে কি করতে বলেন

Aug 20, 2011
জন রাসকিন নামে এক বৃটিশ ভদ্রলোক বহু বছর আগে একখানা বই লিখেছিলেন তার সময়কার অর্থনীতি বিষয়য়ে। অর্থনীতির বই না, অর্থনৈতিক সমাজব্যবস্থা নিয়ে। বর্তমানে বইটির খবর বের করা কঠিন। অন্তত যারা বাংলা বই পড়েন তারা সম্ভবত কোন সুযোগ পাবেন না।
বইটি সার্বিকভাবে কতটুকু আলোচিত হয়েছিল বলা কঠিন। তবে বিশেষ কিছু ব্যক্তির কাছে গুরুত্বপুর্ন ছিল তাতে সন্দেহ নেই। যেমন ধরুন মোহনদাস করমচাদ গান্ধি এবং লিও টলষ্টয়। একজন দক্ষিন আফ্রিকায় ব্যারিষ্টারী করছেন আরেকজন রাশিয়ার সবচেয়ে দামী লেখক। তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ করলেন বইটির বিষয়ে।
ফল যা হল তা বিশ্বে নতুন উদাহরন সৃষ্টি করল। গান্ধি শ্রমিকদের ধর্মঘটে যোগ দিয়ে শান্তিপুর্ন অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিলেন। টলষ্টয় বললেন তিনি প্রকাশকের কাছে তার বইয়ের টাকা নেবেন না। উপন্যাসই লিখবেন না বলে ঠিক করলেন। পরিবর্তে লিখতে শুরু করলে উপদেশমুলক উপকথা।
এসব কথা নিশ্চয়ই বর্তমানের রুপকথা। টাকাই যদি না কামাবেন তাহলে লিখবেন কেন ? সমাজে স্থান পাবেন কিভাবে ? আর হিংসাত্মক পথেই যদি না যান তাহলে আপনার কথা শুনবে কে ? চেষ্টা করেই দেখুন না। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেন বলে মুখে ফেনা তুলছেন। বঙ্গবন্ধুর নামে এয়ারপোর্ট করবেন বলে যায়গা দখল করছেন। অন্যদিকে এক জেলার সাথে আরেক জেলায় যাওয়ার পথ বাস চলাচলের অনুপোযোগি। মহাসড়ক পরিনত হয়েছে মহামড়কে। অহিংস আন্দোলন করে দেখুন তো কি ফল হয়। নিশ্চিত জেলে যাবেন। আদালত বসে আছে রিমান্ডে পাঠানোর জন্য। দেশের ভাবমুর্তি নষ্ট করবেন ? দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবেন ? কখনো হতে দেয়া হবে না।
কখনো কখনো ব্যতিক্রমি ঘটনা ঘটে। ওই ধরুন না হাজারের কথা। তারমত আরেকজনের দেখা নিশ্চয়ই হাজারে একজন পাবেন না। তিনি বলছেন দুর্নীতি বন্ধ না করলে না খেয়ে থাকবেন।
বাংলাদেশের খবর যদি রাখেন তাহলে আপনিও ভালভাবেই জানেন এর উত্তর কি হতে পারে। হানিফ ভাই কিংবা আবুল ভাই বলেই বসবেন, ওসব মুর্খের কথায় কান দেয় কে ? না খায় না কাক। খাবার কমবে। বানিজ্যমন্ত্রী বলেছেন খাবার কম করে খান।
রাজপথ বন্ধ করে অবস্থান নেবেন ? যোগাযোগমন্ত্রী বলেছেন বেশ তো। বাইরে কম বের হন। নিরাপদে থাকুন।
দেশটা যেখানে ভারত, দুর্নীতির তালিকায় যাদের নাম শতের কাছাকাছি, সেখানে কিছু ভিন্নতা হতেই পারে। সরকার অবশ্য চেষ্টা করেছিল বাংলাদেশের অনুকরন করতে। জেলেও ঢুকানো হয়েছিল। কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো। প্রচার আরো বেড়েছে। সাধারন মানুষও তার পক্ষ নিয়ে পথে নেমেছে।
সে যাকগে। পরের খবর নিয়ে কাজ কি। টিভিতে দেখায় তখন দেখে বেশ আনন্দ পাওয়া যায়। বাহারে, এতো নাটকের চেয়ে চমতকার। চাইকি মন্তব্যও করা যায়, আমরাও চাই অমুক কিছু। গ্যালারীর দর্শক মন্তব্য করতেই পারে। দর্শক নাহলে কি খেলা জমে।
মুল পার্থক্য যা সেটা থেকেই যায়। ক্লাইভ যখন সামান্য কয়েকজন সৈন্য দিয়ে মুর্সিদাবাদ যান, একটা উপমহাদেশকে দুশো বছর গোলামীর মধ্যে আনেন তখন হাজার হাজার মানুষ তাকে দেখতে ভীড় করেছিল। দেখি তো মানুষটাকে।
পলাশীর আমবাগানে যখন যুদ্ধ হয় তখন কয়েক গজ দুরে দাড়িয়ে বাঙালী চাষ করছিল। আর মনে মনে বলছিল, ব্যাটারা করে কি ? মরার ভয় না থাকলে কাছে গিয়া দ্যাখতাম!
সেই দেখা কখনো শেষ হয়নি। আদৌ কখনো হবে এমন লক্ষন নেই। মাঝেমধ্যে দুএকজন উদাহরন টেনে আনেন, ওই যে তাহরির স্কয়ার, ওই যে আরব বিশ্ব, আমরাও ওদের মত.... না-না, আমরা ওদের চেয়ে বড়। জানেন কতলক্ষ মানুষ জীবন দিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছে ? অন্যরা পারে এসব করতে ?
আমরা হলাম গিয়ে বর্তমানে দর্শক। সামনে খেলা দেখি। পছন্দ হলে হাততালি দেই। অপছন্দ হলে গালাগালি করি। দর্শককে আর কি করতে বলেন ?

0 comments:

 

Browse