চোর ভাল না ডাকাত

Aug 27, 2011
প্রতিযোগিতা খুব ভাল জিনিষ। আপনি অন্যকে ছাড়িয়ে যাবেন আর মেডেল-পুরস্কার জিতবেন। বোল্টের মত দৌড়েই হোক আর টাইসনের মত ঘুসি মেরেই হোক। ঘুসিতে না পারলে কান কামড়ে ধরবেন। প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকাই কথা।
চোরে চোরে নিশ্চয়ই প্রতিযোগিতা হয়। তাদের মধ্যেও খ্যাতিমান-নির্বোধের বিষয় আছে। যার প্রতিভা যত বেশি তার কদর বেশি। কোচিং সেন্টারে বেশি ছাত্র পান, বেশি বেতন নেন। ডাকাতির ক্ষেত্রেও হয়ত তাই। হয়ত বলতে হচ্ছে কারন তাদের প্রকাশ বা প্রচারনায় ঘাটতি। তারা যদি পত্রিকা বের করত কিংবা টিভি চ্যানেল খুলত, নিদেন পক্ষে ওয়েবসাইট চালু করত তাহলে জানতে সুবিধে হত।
সেটা যখন হচ্ছে না তখন অনুমান ছাড়া গতি কি ?
ছোটবেলায় অনেক অদ্ভুত বিশ্বাস ছিল। কিভাবে কে জানে, ধারনা ছিল ডাকাতের মাথায় শিং থাকে। বেতখাওয়া শব্দটার অদ্ভুত মানে ছিল। কারো গলার কাছে উচু দেখলে মনে করতাম সে বেত খেয়েছে, সেটার কোনা উচু হয়ে আছে গলার কাছে। গুলিখোর শুনলে অবাক হয়ে ভাবতাম ইচ্ছে করে গুলি খাবে কেন।
আজকাল নিশ্চয়ই শিশুরা এসব ভাবে না। শিশুকালেই একজন জানে তার বাবা ঘুষ খায়। ওতে দোষের কিছু নেই। ঘুষ খায় বলেই তো ঈদের সময় হাজার টাকার জামা কিনে দেয়। ঘুষ জিনিষটা যে খাওয়ার না, নেয়ার সেটা তারা জন্মথেকেই শেখে।
সেই চোর-ডাকাতের কথা ফেরা যাক। শরীরে কাটা ফুটলে একটা অদ্ভুত পরীক্ষার প্রচলন ছিল শিশুদের মধ্যে। কাটা বের করে হাতের তালুতে রেখে জানার চেষ্টা করা সেটা চোর না ডাকাত। পরীক্ষাও সহজ। চোখের পাপড়ি থেকে একটা লোম খুলে তাতে খোচা দেয়া। যদি সেটা আটকে থাকে তাহলে ডাকাত, যদি ছুটে যায় তাহলে চোর। ব্যাখ্যা হচ্ছে, ডাকাত ভয় পায় না, চোর ভয়ে পালিয়ে যায়।
বাস্তবে যদি চোর ডাকাতের শনাক্তকরনে এধরনের পরীক্ষা থাকলে কত ভালই না হত। অনায়াসে বলে দেয়া যেত কে চোর কে ডাকাত। কিংবা ডাকাতের মাথায় যদি শিং থাকত তাহলে কত সুবিধেই না হত।
বর্তমানে চিনতে হয় সত্যিকারের খোচা না মেরে। লক্ষন দেখে। কাজটা জটিল। আরো জটিল করে দেয় ওই শিং না থাকা।
যেমন ধরুন বিএনপি ক্ষমতায় থেকে চুরি করেছে। অনেকের কাছে এটা প্রকাশ দিবালোকের মত সত্য। যেভাবে সুর্য ওঠে ঠিক তেমনই। সবাই জানে কত টাকা কিবাবে কোথায় পাচার করা হয়েছে। বাড়িতে চুরি হলে যেমন জানেন কে চুরি হয়েছে ঠিক তেমনভাবেই। চোরের অন্তত চক্ষুলজ্জা বলে কিছু থাকে। সামনে চুরি করে না, চুরি করেই চুরি করে।
আপনি জানার সুযোগ পান চুরি হওয়ার পর। আগেই বলে দিতে পারেন না কি চুরি হবে। ডাকাতির হিসেব কিছুটা আলাদা। তারা বুকদর্পে সামনে থেকে নিয়ে যা যাকিছু নেয়ার। অনেকে বলছেন বর্তমানে সেটাই হচ্ছে। সরকার ঘোষনা দিয়েছে চাকরী দেয়া হবে আওয়ামী লীগের ভেতর থেকে, টেন্ডার দেয়া হবে যারা গত সরকারের সময় বঞ্চিত ছিল তাদের। আপনি কথা বলার কে ?
যদি লীগের খাতায় নাম থাকে তাহলে পুলিশ পেটান, ডিসি-এসপি পেটান কোন আপত্তি নেই। যদি আওয়ামী পুলিশ হন ইচ্ছেমত খুন করুন তাতে কিছু যায় আসে না। ছাত্র হোক, ব্যবসায়ী হোক, আইনজীবি হোক তাতে কি ? কার বাপের সাধ্য আছে বাধা দেয়। শত্রু  বিদায় করুন।
সমস্যা হচ্ছে চুরি-ডাকাতি বিষয়টি শুধুমাত্র চোর-ডাকাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, সমাজের অন্যদের মধ্যেও তার প্রভাব পড়ে। ডাকাতি যদি বন্ধ করাই না যায় তাহলে ডাকাতের দলে যোগ দেয়াই উত্তম, এই নিয়মে আগ্রহি হতে শুরু করে। বিরোধী দল দেশের শত্রু, ওদের মরাই উচিত একথা বলতে শুরু করে।
কথা বলা বিষয়টি শুরু হয়, শেষ হয় না। বিএনপি যে চুরি করেছে তার জের ৫ বছরে কাটেনি একথা যে জ্ঞানীজন বলছেন তিনি নিশ্চতভাবেই আগামীতে বলবেন আওয়ামী লিগ যে ডাকাতি করেছে তার জের ১০ বছরে কাটবে না। বর্তমান সরকার নিয়ে কথা বলবেন কেন ? আগে সেটা অতীত হোক তারপর না বলবেন।
পাশ্চাত্যের দেশে একটা নিয়ম মানা হয়। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে প্রথম কাজ তাকে সেই দায়িত্ব থেকে সরানো। সেই পদে নতুন যিনি আসবেন তাকেও মনে রাখতে হয়, অভিযোগ আসা চলবে না। সাথেসাথে বিদায়। ওরা আসলে বোকা। আমরা ওদের চেয়ে কত ভাল বুঝি। অর্থমন্ত্রী পদত্যাগ করলে কি  শেয়ারবাজারের উন্নতি হবে ? বানিজ্যন্ত্রী পদত্যাগ করলে কি জিনিষের দাম কমবে ? স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী পদত্যাগ করলে কি অপরাধ কমবে ? যোগাযোগ মন্ত্রী পদত্যাগ করলে কি রাস্তা ঠিক হবে ? ওরা থাকলেই তবেই তো ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা।
সেই ছোটবেলার চোর ডাকাতের পরীক্ষার কথায় আসি। ছোট হলেও পরীক্ষার পদ্ধতি জেনে ফেলেছিলাম। খোচা দিলে আটকে থাকবে নাকি ছুটে যাবে সেই পদ্ধতি বুঝেছিলাম। শুধু বুঝিনি চোর ভাল নাকি ডাকাত।

0 comments:

 

Browse