ভালমন্দের দিনবদল

Aug 24, 2011
অনেকে বলেন আধুনিক গনতন্ত্রের প্রবক্তা ইতালীর মেকিয়াভেলী। গনগন্ত্রের সংজ্ঞা তৈরী করে দিয়েছেন তিনি। সেই ইতালীর মুসোলিনি যখন বিশ্ব দখল করতে লিবিয়া যান তখন একজন সাধারন মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। ২২ বছর ধরে তারসাথে পেরে ওঠেনি আধুনিক সমরাস্ত্রের পশ্চিমা বাহিনী। তারপর, একসময় তিনি ধরা পড়েন, ফাসিতে ঝুলানো হয় তাকে।
এনিয়ে হলিউড একটা ছবি তৈরী করেছে লায়ন অব দ্য ডেজার্ট নামে। বিশ্বখ্যাতি লাভ করেছে সেই ছবি। আর গনতন্ত্রের প্রবক্তা ইতালীতে সেই ছবি আজও দেখানো হয় কিছু অংশ বাদ দিয়ে।
অনেকের মতে আসলে গনতন্ত্রের কথা বলার কৃতিত্ব বৃটেনের বেকনের। তিনিই বিশ্বকে জানিয়েছেন রাষ্ট্রব্যবস্থা কেমন হওয়া উচিত। খুব বেশিদিনের কথা না যখন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার গাদ্দাফির তাবুতে নৈশভোজ খেলেন। মুল আলোচনার বিষয় ছিল গাদ্দাফি তাদের যুদ্ধবিমান টর্নেডো-টাইফুন কিনবেন। সেটা হয়নি। তারপর যখনই কিছু মানুষ গাদ্দাফির বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নিল সাথেসাথে সেই টর্নেডো-টাইফুন মিসাইল ছুড়তে শুরু করল লিবিয়ায়।
কালে বহুকিছু হয়। বলা হচ্ছে গাদ্দাফি সরে গেলে তেলের দাম কমবে। কে জানে গাদ্দাফি তেলের দাম কিভাবে বাড়িয়ে রেখেছেন। হয়ত তখন নিজের হাতে তেল আনা যাবে। সাদ্দামকে সরানোর সময়ও তেলের কথা বলা হয়েছিল। বাস্তবে ওপেক এর বেধে দেয়া ২২ থেকে ৩০ ডলারের তেল সাদ্দাম পরবর্তী সময়ে দেড়শ ডলারে গেছে।
গাদ্দাফি ভাল কি মন্দ এবিচার তার দেশের মানুষেরই করা উচিত। তার বদলে তারচেয়ে ভাল কেউ এলে সেদেশের উপকার, জনগনের উপকার। কিন্তু, তারচেয়ে ভাল আসার সম্ভাবনা কতটুকু এপ্রশ্ন করা কি খুব অন্যায় ? যদি অন্য উদাহরনের দিকে দৃষ্টি দেয়া যায়।
সাদ্দাম হোসেন না থাকলে বিশ্ব নিরাপদ, ইরাক গনতান্ত্রিক দেশ এসব কথা শুনতে শুনকে কান ব্যথা হয়ে গেছে। কোথায় সেই গনতান্ত্রিক ইরাক ?
এদেশ যখন বৃটিশদের অধীন ছিল তখন মানুষ আক্রমন করতে তাদের ওপর। দেশকে স্বাধীন করতে হবে। মহাত্মা গান্ধী এর বিরুদ্ধে ছিলেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেছিলেন, আজ যারা স্বাধীনতার কথা বলে বিদেশীদের দিকে বোমা ছুড়ছে আগামীকাল তারা নিজেদের দিকে বোমা ছুড়বে। তারদিকে বোমা ছোড়া হয়নি, পিস্তলের গুলিতে জীবন দিতে হয়েছে তাকে।
আর কি আশ্চর্য, ইন্দিরা গান্ধি, রাজীব গান্ধি, শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, বেনজির ভুট্টো সবাইকে প্রান দিতে হয়েছে অস্ত্রের মুখে। এই তাহলে স্বাধীনতা ? এই তাহলে গনতন্ত্র ??
গত কয়েকমাসে বেশকিছু আশ্চর্যজনক রাজনৈতিক পরিবর্তন আমরা দেখেছি। টিভিতে দিনরাত তাহরীর স্কয়ার দেখানো হয়েছে। মিসরের জনগন আন্দোলন করে হোসনি মোবারককে সরিয়েছে। অনেকেই সাবাস সাবাস করেছেন। এখন দেখা যাচ্ছে আসলে সংকট কোথায়। নেতা বলে কেউ নেই। বর্তমান ক্ষমতা মিলিটারীর হাতে। তাদের অধিকাংশ টাকা আবার আসে আমেরিকা থেকে।
আরবের অন্যান্য দেশে যখন মানুষ শাসকের বিরুদ্ধে পথে নামল তখন বঞ্চিত মানুষ সাহস যুগিয়েছে। উতসাহ দিয়েছে। লিবিয়ায় সেই উতসাহ এমন মাত্রায় গেছে যেখানে তারা মুহুর্তে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে। অস্ত্র-অর্থ আসতে শুরু করেছে পশ্চিমা দেশ থেকে। খবর অনুযায়ী গাদ্দাফি এখনো মারা যাননি বা ধরা পড়েননি। যুদ্ধ করছেন। এরই মধ্যে তাদের সরকারকে স্বিকৃতি দেয়া হয়ে গেছে। গুগলের ম্যাপে যায়গার নাম পরিবর্তন করা হয়ে গেছে। যদিও যে প্রকাশ্য যুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধিন হয়েছে সেই স্বাধীন বাংলাদেশের স্বিকৃতি পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে কয়েক বছর।
লিবিয়ার বিদ্রোহিরা জয়লাভ করলে নেতৃত্ব কার হাতে যাবে ?
হয়ত কারজাই এর মত কোন বীরকে খুজে বের করা হবে। কলকাঠি নড়বে ওপার থেকে। গাদ্দাফি কতটা খারাপ সেটা তার দেশের মানুষেরই জানার কথা। বিশ্বখবরে যতদুর জানা যায় কিছুদিন আগে তিনি দেশে গোটা তিরিশেক বিশ্বমানের ইউনিভার্সিটি সহ অনেককিছু করার কথা জানিয়েছিলেন। ১০ লক্ষ বিদেশি শ্রমিক নেয়ার কথা বলা হয়েছিল। সবচেয়ে বড় শ্রমিক সরবরাহের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ নড়েচড়ে বসেছিল। সরকারী পর্যায়ে যোগাযোগ শুরু হয়েছিল। গাদ্দাফির পরিকল্পনা ভাল ছিল না-কি মন্দ ছিল কে জানে ?
দার্শনিকেরা বলেন ভালমন্দ বলে কিছু নেই। বিষয়টা দৃষ্টিভঙ্গির। হয়ত ইতিহাসবিদরাও এরসাথে সুর মিলিয়ে বলবেন, ভালমন্দ বলে কিছু নেই, সবই সময়ের ব্যাপার। আজ ভাল কাল মন্দ। পক্ষে থাকলে ভাল বিপক্ষে গেলে মন্দ।
অন্তত পশ্চিমা গনতন্ত্র একথা বহুবার প্রমান করেছে।

0 comments:

 

Browse