নিয়তির হাতে দেশ

Aug 14, 2011
সৃষ্টিকর্তার হুকুম ছাড়া গাছের পাতাও নড়ে না। এরচেয়ে খাটি কথা বোধহয় বাংলাদেশে নেই। এর আগের সরকারের সরকারের একজন মন্ত্রী তো লঞ্চ দুর্ঘটনার পর বলেই বসলেন, জীবন-মৃত্যু আল্লার হাতে। তার সমালোচনা এখনও থামেনি, সুযোগ পেলেই তখনকার বিরোধীদল, বর্তমানের সরকারীদল সেকথা শুনিয়ে দেন।
মানুষ দিনবদলের জন্য ভোট দিয়েছে মহাজোটকে। ভোটে দিয়ে একেবারে পাহাড়ের চুড়ায় উঠিয়েছে। আর দিনবদল তারা করেছেন। এখন দেশ চলছে নিয়তির নির্দেশে। মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাবে কিনা নেটা নির্ভর করে তার কপালে মৃত্যু আছে কিনা। কদিন আগে একদল স্কুলশিশু জীবন দিল। সারা দেশে ৩ দিনের শোক। খবরে জানা গেছে কোন এক স্কুল শোক পালন করতে স্কুল বন্ধ না করায় শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আরকিছু না থাক জয় বাংলার লোক না হলে শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা সরকারের আছে। অনেকে হয়ত ভাবতে শুরু করেছিলেন কিছু একটা ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু লাউ সবসময়ই কদু। কয়েকটা মহাসড়কে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন বাস মালিকেরা। কারন রাস্তা চলাচলের উপযোগি না। এরই ওপর খবর এল বাংলাদেশের দুজন খ্যাতনামা ব্যক্তি মারা গেছেন গাড়ির ধাক্কায়।
এই মৃত্যু নিয়ে উল্লেখ করার প্রয়োজন ছিল না। প্রতিদিন বহু মানুষ মারা যাচ্ছে। আরো যাবে। কিন্তু এই দুজন এমনই ব্যক্তিত্ব যারা নিজেদের পরিচিতি তৈরী করেছেন নিজের কীর্তি দিয়ে। এমন ব্যক্তির সংখ্যা বাংলাদেশে খুব বেশি নেই।
আপনি প্রশ্ন করতে পারেন (যদি এখনও প্রশ্ন করার মানষিকতা থাকে, বাস্তবে বাংলাদেশের মানুষ প্রশ্ন করতে ভুলে গেছে), রাস্তার এই দশা কেন ?
উত্তরটাও আপনি জানেন। তাহলেও আরেকটু স্মরন করিয়ে দেই।
সরকারের বাজেটের সবচেয়ে বড় বরাদ্দ হচ্ছে উন্নয়ন কাজে। উন্নয়ন বলতে বুঝানো হয় রাস্তা তৈরী বা মেরামত, ব্রিজ তৈরী ইত্যাদি। অর্ধাত দেশের সবচেয়ে বেশি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে এদিকে। সেটা কি কমে গেছে ?
না কমেনি, বরং বেড়েছে। বর্তমান সরকার দিনবদলের লক্ষে অনেককিছুই পরিবর্তন করেছেন। বিরোধীদলের হাতে দেশ নিরাপদ না, প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা দিয়েছেন। কাজেই যাকিছু কন্ট্রাক্ট সেগুলি চলে গেছে লীগের হাতে। সরকার আরো বদল করেছেন। টেন্ডার পাওয়ার জন্য আগে কাজের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই (একমাত্র দলীয় অভিজ্ঞতা ছাড়া)। মন্ত্রী ফোন করেন টেন্ডারদাতাদের কাছে, আমাদের ছেলেদের কাজ দেন। ওরা ইলেকসনে খেটেছে কি এমনি।
এটা তারই ফল। টাকা যাচ্ছে, খচর হচ্ছে। রাস্তা পরিনত হচ্ছে নর্দমায়। অন্তত চক্ষুলজ্জার খাতিরে যেটুকু করা প্রয়োজন সেটুকু করার উদাহরনও নেই। ওসব গ্রাম-মফস্বল নিয়ে কথা বলার দরকার নেই, খোদ রাজধানীতে কত যে এধরনের নর্দমা আছে গুনে শেষ করতে পারবেন না।
এরসাথে যদি যোগ হয় স্বাধীন বাঙালীর গাড়ি চালানোর স্বাধীনতা আর ঘুষখোর ট্রাফিক পুলিশ তাহলে মৃত্যুর জন্য আজরাইল প্রয়োজন হয় না।
বাংলাদেশের একজন খ্যাতনামা চলচ্চিত্র অভিনেতা তার পরিবারকে হারিয়েছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায়। বহু বছর আগে। তখন থেকে তিনি এ নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। তার বক্তব্য, এমন কোন ধরনের সরকার নেই যারকাছে ধর্না দেইনি, ফল একই। সবগাছে একই ফল ধরার এমন উদাহরন বোধহয় দ্বিতীয়টি নেই।
আর বর্তমান নিয়ে যদি কিছু বলতে চান, তাহলে ধর্মে বিশ্বাস রাখুন। লোডসেডিং হবে কিনা সেটা নির্ভর করে বৃষ্টি হবে কিনা তার ওপর। পথে বেরিয়ে আপনি পুলিশের গুলিতে মারা যাবেন কিনা সেটাও ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিন। মারা গেলে আপনি ডাকাত হিসেবে মারা যাবেন, বেচে থাকলে ডাকাতির মামলা সামলাবেন।
মুখ খুলবেন না। সর্বশক্তিমানের বিরুদ্ধে মুখ খোলা যায় না। নিয়তি মেনে নিন।

0 comments:

 

Browse