রাজনীতির জামা

Aug 22, 2011
বাংলাদেশে আলোচনার বিষয় একটাই। কে বেশি দুর্নীতিবাজ, বিএনপি না বর্তমান সরকার। আপনি এর বাইরে যাবেন কিভাবে ? আবর্জনার মধ্যে বাস করবেন আর নাকে দুর্গন্ধ লাগবে না তা-কি হয় ?
কাজেই অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে আপনিও সুর ধরুন, আগের সরকার দেশের সর্বনাশ করে গেছে, কিংবা বর্তমান সরকার দেশকে শেষ করে দিচ্ছে। অবশ্যই কোন একপক্ষ নেবেন। চোখ যখন একটা।
কোন মন্ত্রী কি বলেছেন সেকথা বলে আর কতই বা আবর্জনা ঘাটা যায়। বরং কেন বলেন সেপ্রশ্ন করার সময় হয়েছে। অনেকের কাছেই সেটা রহস্য, ওই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ওই অর্থমন্ত্র, ওই বানিজ্য মন্ত্রী, ওই যোগাযোগ মন্ত্রী যাদেরকে প্রতিমুহুর্তে বলা হচ্ছে দয়া করে নরম গদিটা ছাড়ুন, তারা তত জেকে বসছেন। এটা সম্ভব হচ্ছে কিভাবে। আরো নতুন নতুন মন্ত্রী যোগ দিচ্ছেন তাদের দলে। রেলমন্ত্রী নতুন করে যোগ দিয়ে বলেছেন রেলে যা উন্নতি হয়েছে তা গত ১০০ বছরে হয়নি। আর পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে এক-তৃতিয়াংশের বেশি রেল ষ্টেশন বন্ধ। এর বেশিরভাগ বন্ধ হয়েছে গত আড়াই বছরে। রাজপথে খানাখন্দ দেখে যারা রেলে যাতায়াতের কথা ভেবেছিলেন তাদের সেগুড়ে বালি। রেল পরিস্কার জানিয়েছে বাড়তি ব্যবস্থা নেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব না (সপ্তাশ্চর্যের মতই ঘটনা যেখানে কেউ এধরনের কথা স্বিকার করে)।
সেই গল্পটা মনে আছে কি ? এক মাতাল মারা গেছে। এলাকার লোকজন তার ছেলেকে বলল, তোমার বাবার সুনাম তো কেউ করেনি। তুমি এমন কিছু কর যেন লোকে তার সুনাম করে।
সেটা কাজে করতে খুব সময় লাগল না। কদিন পরই লোকজন বলতে শুরু করল, ওই লোকটা ভাল ছিল। সে মাতাল হলেও সবাইকে গালাগালি করত না। তার ব্যাটা মাতাল হয় আবার সবাইকে গালাগালি করে।
ইদানিং গল্পটা ভালভাবেই শিখেছে বাঙালী। বিএনপি খারাপ ছিল তাইবলে রাজপথে পুকুর হয়ে রাস্তা বন্ধ হয়নি। মন্ত্রী বলেনি আপনারা কম খান, পথে কম বেরন। সর্ববিষয়ে সংযম দেখান। অর্থমন্ত্রী প্রতিদিনই বলছেন শেয়ার বাজারে গেছে ওই লোকগুলো ফটকাবাজ। দেশের লোকগুলো সব পাগল আর ছাগল। কেউ অর্থনীতির কিছু বোঝে না শুধু আবোল-তাবোল বকে। সাংবাদিকগুলোও তেমন, ভালমন্দ বোঝে না, যাখুশি লেখে। আরে বুদ্ধিমান হলে এসব লিখত নাকি। কতরকম রসালো খবর আছে লেখার। মানুষ আনন্দ পেত।
মুল কথায় ফিরি। এসব কেন ঘটছে সেই রহস্যের বিষয়ে। অনেকেই বলছেন এইসব লোকের কারনেই বর্তমান সরকারের সব কৃতিত্ব ধুয়েমুছে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দেশকে ডিজিটাল বানাবেন, জাতিকে টুয়েন্টি-ওয়ানের ভীষন দিয়েছেন, দেশ ধনী দেশে পরিনত হবে। ওই লোকগুলোর কারনে তার স্বপ্নপুরন হচ্ছে না। তারা সবসময় কুমন্ত্রনা দিচ্ছে। সাধারন মানুষের খবর তারকাছে পৌছচ্ছে না।
অনেকের কাছে সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। প্রধানমন্ত্রীকে যারা কাছে থেকে চেনেন তারা বলছেন, উনি তো কারো কথায় চলেন না। সব সিদ্ধান্ত নেন নিজের ইচ্ছেয়।
যদি দুটি বিষয় একসাথে করা যায় তাহলে যা দাড়ায় তা হচ্ছে ওই লোকগুলিকে চারিদিকে রাখার দায়িত্ব তিনি নিজেই নিয়েছেন। মন্ত্রীসভা তৈরীর সময় যখন হাসিমুখে বললেন, সবাই নতুন মুখ দেখতে পছন্দ করে, আপনাদের নতুন মুখ দেখার ব্যবস্থা করেছি, তখন অনেকেই  খুশি হয়েছিলেন। সেই নতুন মুখ যে নতুন জামা সেকি তখন জানা গেছে ?
সরকারের অর্ধেক সময় পেরিয়ে গেছে। একজন মন্ত্রী স্পষ্ট করেই বলেছেন আগামী নির্বাচন কিভাবে হবে। খালেদা জিয়া দুর্নীতির কারনে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষিত হবেন। সেটা তিনি টের পেয়েছেন বলেই  ওইসব আন্দোলন-টান্দোলনের কথা বলছেন। ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র পাচার কোনকিছু দায় তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এড়িয়ে যেতে পারেন না। 
বর্তমানের কোনকিছুর জন্য প্রধানমন্ত্রী দায়ী নন। তার চারিদিকে যারা এসব করছে তারা দায়ী।
যদি কোন কারনে পরিকল্পনার বাইরে অন্যকিছু ঘটে, যদি সত্যিসত্যিই নির্বাচনে জনগনের মতের বিষয় থাকে তাহলে ?
রাজনীতির জামাটা বদল করলেই তো সমাধান হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর গায়ে সামান্যতম দাগ লাগেনি। যাকিছু লেগেছে তা ওই জামার গায়ে। তাদেরকে ঝেড়ে ফেললেই তো সব সমাধান হয়ে গেল। মুহুর্তে সব ভোটার খুশী, যাক অকর্মাগুলো বিদেয় হয়েছে। এবার দেশ ডিজিটাল না হয়ে যায় না।
সেটা না হওয়া পর্যন্ত লোকগুলোকে আরো বেশি কথা বলার সুযোগ দিন। তারা এমন এমন কথা বলবেন যেন আপনাকে খাওয়া-ঘুম বাদ দিয়ে গালাগালি করতে হয়। তাদের মুল দায়িত্ব তো সেটাই।

0 comments:

 

Browse