ঘোলাপানির ব্যবহার আসলে অনেক যায়গায়। দৃশ্যত পানি না থাকলেও, একেবারে স্বচ্ছ আবহাওয়ায়। এমনকি দিনে দুপুরে, একেবারে প্রকাশ্য রাস্তায়।
যেমন ধরুন ঢাকার রাজপথ। তাকালেই দেখবেন রিক্সার বহর। আকাশের তারা গোনা এরচেয়ে সহজ। অন্তত মানুষ সব তারা গুনেছে। কিন্তু ঢাকা শহরের রিক্সা গোনার সাধ্য সরকার কিংবা সিটি কর্পোরেশনের হয়নি। যা বলা হয় অনুমান। এই অনুমানের পার্থক্যও ৬ অংকের কোঠায়।
যাহোক, লক্ষ লক্ষ। এগুলি চালাচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষ। রীতিমত গাধার খাটুনি। ধর্মে বলেছে তোমরা পরিশ্রম কর, সেই ধার্মিক পরিশ্রম। ধর্মের প্রসংশা যেমন করতে হয় তেমনি তাদের পরিশ্রমের প্রসংশাও করতে হয়। অন্তত নিজের গাটের টাকা যতক্ষন না যায় ততক্ষন।
আর ফলাফল। লাখ দশেক কি লাখ পনের মানুষের কর্মসংস্থান। তাদের পরিবার এবং নির্ভরশীলদের সংখ্যা মিলিয়ে অর্ধকোটি পার। আর প্রতিদিন এই দেড় কোটি মানুষের শহরের মানুষকে তারা পৌছে দিচ্ছে যার যেখানে প্রয়োজন।
কথা একটুখানি। এই কাজ আরো কম পরিশ্রমে, কম সময়ে, কম খরচে করা যায়। অথাৎ যে যাত্রী রিক্সায় চড়ে হাওয়া খেতে খেতে যাচ্ছেন তিনি আরো কম সময়ে, কম খরচে, আরামে গন্তব্যে যেতে পারেন যদি যান্ত্রীক পদ্ধতিতে করা হয়। সারা বিশ্ব এই নিয়মেই চলে। বিশ্বখ্যাত যানজটও তৈরী হয়না। আরওপর এদেরকে অন্য কাজে লাগালে কি হত ?
তাজমহল তৈরী করেছিল ২০ হাজার মানুষ। বহু তাজমহল তৈরী হত।
তারপরও কেন হয়না!
ওই ঘোলাপানি। এই ঘোলাপানিতে লাভ অনেকের। সরকার কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের দায়মুক্ত। এদের পরিশ্রমের কথা বলে অনেকেই ডলার-ইউরো হাতে পান। আর সমিতিরও অভাব নেই। এই লক্ষ লক্ষ রিক্সা প্রত্যেকেই একটুকরো টিন লাগিয়ে ঘুরছে। মালিক সমিতি, শ্রমিক সমিতি, মালিক-শ্রমিক সমিতি, রিক্সাচোর প্রতিরোধ কমিটি, কর্মসংস্থান সমবায় সমিতি ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। মানে, পরোক্ষভাবেও বহু মানুষের কর্মসংস্থান। চাকুরেদের চাকরীও হয় আরামের। অফিসে যেতে যেতে ফিরতি রওনা দেবার সময় উপস্থিত। ঘোলাপানির উপকারীতা এখানেই।
যাতায়াত ছেড়ে আবাসের কথাই বলুন না কেন। প্রধানমন্ত্রী কয়েকবারই বলেছেন ঢাকা শহরের চারিদিকে উপশহর গড়ে তোলা হবে। শহরের কোনদিকে সেটা করার যায়গা আছে জানিনা। যতদুর জানি হাজার হাজার স্যাটেলাইট-মডেল-আদর্শ ইত্যাদি সিটি-টাউন এসব তৈরী হয়েই গেছে। তারপরও, প্রধামন্ত্রী বলে কথা। যেটুকু বাকি আছে সেটুকুও নিশ্চয়ই হবে। তখন সুযোগমত নিজের জন্য একটা-
সে গুড়ে বালি। এখানেও ওই ঘোলাপানি। সরকারী প্লট যায় মন্ত্রী-সাসংদ-নেতার নামে। প্লট পেলে সেখানে বাড়ি করা ইহজন্মে সম্ভব না, স্বাভাবিক আয় দিয়ে। আর হাউজিং কোম্পানী ঘরবাড়ি তৈরী করে ভরে ফেলবে এটা মনে করারও কারন নেই। তারাও জানে সরবরাহ যত কম চাহিদা তত বেশি। দাম ধরে রাখতে হলে ষ্টকে কিছু রাখতে হয়। নইলে বাড়ির দাম কমে যায়। ভাড়ার আয় কমে যায়। সরকারের মন্ত্রনালয় থাকতে পারে, তারা মাসমাস বেতনভাতা নিতে পারে, কিন্তু কোন বাড়ির ভাড়া কত হবে, ইলেকট্রিক বিল-গ্যাসবিল-পানির বিল কত হবে সেটাও ঠিক করেন ওই বাড়িঅলাই। পছন্দ না হলে পথ দেখেন।
আবাস ছেড়ে খাদ্যে যাবেন ? সবাই জানে কি খাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা রীতিমত হিসেব কশে বলেছেন অধিকাংশ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে যাচ্ছে। কিডনী রোগের তো কথাই নেই। দেশসেরা প্রতিষ্ঠানও জরিমানা দিচ্ছে ভেজাল খাবার বিক্রি করে। ২৫ টাকার একটা আইসক্রিম থেকেও বেরয় পচা পানি।
এই ঘোলাপানির উপকারিতাও কম না। এনিয়ে অভিযান চলছে। সেখানে কর্মসংস্থান। জরিমানার টাকা সরকারের ঘরে যাচ্ছে। এটা আয়। আবার কেউ কেউ কোথায়, কোন কৃতিত্ব দেখিয়েছেন, কত বুদ্ধি খাটিয়েছেন, কতজনকে কত জরিমানা করেছেন সেকথা টিভিতে প্রচার করে রীতিমত বিশ্বখ্যাতি লাভ করছেন। দেশের মুখ উজ্জ্বল হচ্ছে বৈকি। দেশের প্রতিভা বলে কথা।
ঘোলাপানিতে যারা বাস করে তাদের থাকতে থাকতে নিশ্চয়ই চোখ ঘোলা হয়। না হলেই বা কি যায় আসে ? চোখ খোলার কষ্ট করে কে ??
বেশ তো চলে যাচ্ছে।
0 comments:
Post a Comment