বিচিত্র - This Is Miracle

Mar 11, 2010
আলেকজান্ডার যখন ভারত জয় করতে আসেন তখন তিনি নাকি তার সেনাপতিকে বলেছিলেন, কি বিচিত্র এই দেশ।
সেই কথা সাক্ষী কে ছিল সেপ্রশ্ন না করেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারে, কথাটা আমরা নানাসময় নানাভাবে ব্যবহার করি। বিচিত্র দেশ, বিচিত্র প্রকৃতি, বিচিত্র ফলমুল-গাছপালা। এবং বিচিত্র মানুষ। বিচিত্র চালচলন। বিচিত্র নীতি। বিচিত্র আইন।
কথা না বাড়িয়ে সরাসরি প্রসঙ্গে যাওয়া যাক। জরুরী সরকার কয়েকদিনের মধ্যে দেশকে অত্যাধুনিক দেশে পরিনত করতে চেয়েছিলেন বিচিত্র পদ্ধতিতে। তার একটি হচ্ছে, কেউ বেওয়ারিশ থাকবে না। সবাইকে জন্মসনদ নিতে হবে, মৃত্যুসনদ নিতে হবে এবং পরিচয় পত্র নিতে হবে। একাজ যদিও শুরু হয়েছিল ভোটকে সামনে রেখে ভোটার আইডি নামে, এখনও এর দায়িত্বে থেকে গেছে নির্বাচন কমিশন, তারপরও- এটা দেখালেই পাসপোর্ট মিলবে, ব্যাংক থেকে টাকা পাওয়া যাবে, বিনামুল্যে সার পাওয়া যাবে, ছিনতাইকারীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে, অনাহার-রোগ-মহামারি থেকে বাচা যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। জোরেসোরে কাজ শুরু হল, একসময় শেষও হল। দেখা গেল একজনের পরিচয়ের সাথে আরেকজনের ছবি গিয়ে লেগেছে। একজন বললেন তার ছেলেমেয়ের নাকি কার্ড জ্বর এসে গেছে। ভোটার আইডি কার্ড (নাকি এনআইডি!) দেখে ছবিকে ভুত মনে করেছে। অনেক সৌভাগ্যবান অবশ্য যাকিছু করা প্রয়োজন ছিল সবই করার পরও সেই ভৌতিক কার্ডের দেখা পাননি। আমি নিজে একজন।
আরেকটা ঘটনা ঘটে গেছে একই সময়ে। যারা কয়েক বছর ধরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে তাদেরকে সেই কার্ড দেখিয়ে, নয়ত পাসপোর্ট দেখিয়ে, নয়ত অন্যকিছু দেখিয়ে সেগুলি নতুনভাবে রেজিষ্ট্রেশন করাতে হবে। কয়েক বছর ধরে ফোন ব্যবহার করার অপরাধে তারা অপরাধী। হয় রি-রেজিষ্ট্রেশন করুন, নয়ত ওটা ফেলে দিয়ে ফুটপাত থেকে নতুন আরেকটা কিনে নিন।
বাস্তবে হয়েছে সেটাই। একেজনের পকেটে ৫-৭টা মোবাইল সিম। কারন একেক কোম্পানীর অফার একেকরকম। একেক জনের একেকরকম সুবিধে। যখন যেটা কাজে লাগে।
পরিসংখ্যান বলে প্রতিবেশি সব দেশ থেকে একটামাত্র বিষয়ে আমরা এগিয়ে, সেটা মোবাইল ফোনের ব্যবহার। পথের দিকে তাকিয়ে দেখুন, যত অসুবিধেই হোক অন্তত অর্ধেক মানুষ একহাতে কান ধরে হাটছে। যদি সেটাও সম্ভব না হয় অন্তত কাধ আর মাথার বাকানো ভঙ্গি বলে দিচ্ছে সেখানে মোবাইল সেট গোজা। কিংবা কাউকে যদি একা একাই অনবরত গালাগালি করতে করতে যেতে দেখেন তাহলেও জানবেন সে পাগল হয়নি। কানে হ্যান্ডস-ফ্রি গোজা রয়েছে।
আশেপাশের সব দেশকে ছাড়িয়ে যাওয়া এই আমিত্ব আবারও হুমকিতে পরেছে। স্বরাষ্টমন্ত্রী বলেছেন, আইডি কার্ড ছাড়া কেউ সিম কিনতে পারবে না। সত্যায়িত করা আইডি কার্ড জমা দিতে হবে, বিক্রেতা সেটা নির্বাচন কমিশনে পাঠাবেন, তারা সেটা আসব বলে নিশ্চিত করবে, তারপর সিম বিক্রি।
বাপরে! নির্বাচন কমিশনের অফিস কতগুলো ? তাদের লোকবল কত কোটি ??
সে যাকগে। কথা শেষ হয়নি। কথা হচ্ছে আইডি কার্ড থাকতে হবে (না থাকলে ফোনের কথা ভুলে যান), সাথে একজন সাক্ষী আনতে হবে, বয়স ১৮ বছরের ওপর হতে হবে (তারমানে ১৮ বছরের নিচেও যদি ভোটার আইডি পেয়ে থাকেন তাহলে সিম পাবেন না)।
আর যদি ফুটপাতে বসে সিম ব্যবসা করতে চান আগে এসএসসি পাশ করে আসুন।
এই সবকিছু করা হচ্ছে জনগনের স্বার্থে। হুমকি-সন্ত্রাস-চাদাবজি বন্ধ করার জন্য।
কাজেই যদি সন্ত্রাস-চাদাবাজি-ছিনতাই-ডাকাতি এসব থেকে মুক্ত থাকতে চান তাহলে মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ করুন।

0 comments:

 

Browse