গাছের তালও ভাল যতক্ষন না পিঠে কিংবা মাথায় পড়ে। কাচা-পাকা দুভাবেই কাজে লাগে। পিঠে পড়ার বদলে যদি তালের পিঠে বানাতে পারেন তাহলে তো কথাই নেই। খেতেও স্বাদ, দেশের সংস্কৃতি রক্ষা দুইই হয়। বিশেষ বিশেষ দিনে উৎসব করে খেতে হয়।
তাল যদি কোনভাবে টালে পরিনত হয় তাহলেই সমস্যা।
রিক্সা কিংবা সাইকেলের টালের কথা জানেন তো। গোত্তা খেতে খেতে চলে। টালের এটাই বৈশিষ্ট। কখনো সোজাভাবে, সরলপথে যেতে দেয়না। একবার এদিক আরেকবার ওদিক গোত্তা মারে। প্রতি মুহুর্তেই আপনাকে মনে করিয়ে দেয় আপনি টালের ওপর বাস করছেন।
কাজেই, ডিজিটালের টালও আপনাকে টালের কথা মনে করিয়ে দেবে এতে অবাক হবার কি ?
অনলাইন জিডির ব্যবস্থা চালু হয়েছে। পাড়ার মাস্তান টাকা চেয়েছে, ভাবলেন দেই একটা কেস ঠুকে। ট্রাফিক জ্যাম ঠেলে যেতে তো হচ্ছে না। ঘূসের ঝামেলা নেই। যার নামে মামলা সে জানার সুযোগ পাবে না।
বসলেন অনলাইনে, ঠুস করে বাত্তি অফ-
গেল ডিজিটাল মামলা। তখনই একবার ভাবলেন ডিজিটাল মামলায় পুলিশ যদি ডিজিটাল আসামী ধরে, ডিজিটাল তদন্ত হয়, ডিজিটাল রিমান্ড হয়, ডিজিটাল বিচার হয়, ডিজিটাল জেলে পাঠায়, এমনকি ডিজিটাল ফাসিও দেয় তাতে আমার কি। ধুত্তোর। ওসব মামলা-টামলায় কাজ নেই। তারচে অন্য কাজ করি।
রাস্তায় বেরলেন। সামনেই চোখে পড়ল ডিজিটাল রিকসা। মনটা খুশি হয়ে উঠল, বাহ বেশ তো। কি চমৎকার দেখা যায়। উঠেই দেখি না। কাঠের এনালগ রিক্সার বদলে লোহা আর প্লাষ্টিকের ডিজিটাল রিক্সা। নিশ্চয়ই দেশে তৈরী। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, ভাবতেই ভাল লাগে।
আপনার খুশিভাব কাটতে সময় লাগল না। কারন ডিজিটাল রিক্সার চালক এনালগ, চালানোর পদ্ধতিও অধিক পরিশ্রম-অধিক প্রসংশার দাবীদার সেই পুরনো পদ্ধতি, রাস্তাঘাটে যানজটও সেই এনালগ, বরং এনালগ থেকেও কিছুটা বেশি। প্রতিদিনই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। ডিজিটাল রিক্সার যাত্রা শেষে সবশেষ যা মনে করতে পারেন তা হচ্ছে, সবকিছু এনালগ হলেও ভাড়াটা ডিজিটাল।
ডিজিটাল ভাড়া মিটিয়ে মার্কেটে ঢুকতে গিয়ে দেখলেন ডিজিটাল পদ্ধতিতে তা বন্ধ। ডিজিটাল নিয়ম বলে দিয়েছে একেকজন একেক এলাকায় সাপ্তাহিক ছুটি কাটাবেন। কোন দিন কোন এলাকায় ছুটি আগে থেকে জানতে ডিজিটাল ডায়রি ব্যবহার করবেন। এবার এনালগ পদ্ধতিতে আরেক এলাকায় পৌছে দেখলেন সেটা ডিজিটাল টাইমে বন্ধ হওয়ার সময় হয়ে গেছে। আট বাজ গিয়া।
কাজেই এনালগ পদ্ধতিতেই বাড়ি ফেরত।
এখনও ডিজিটাল খাওয়াদাওয়া চালু হয়নি, ডিজিটাল আয়ের ঘোষনাও দেয়া হয়নি। কাজেই বাকি কাজগুলি এনালগ পদ্ধতিতেই সারতে হল।
ঘুমানোর প্রস্তুতি। মশা মারা ডিজিটাল ব্যাট ব্যবহার করে কিছু মশা মারলেন। তারপর মশারী গুজতে হল (ডিজিটাল হাত যেহেতু এখনও গজায়নি)। ফ্যান থেকে ফুরফুরে হাওয়া আসছে। চোখ বন্ধ হচ্ছে। হঠাৎ করে মাথার ওপর ফ্যানটা গোত্তা মারল। তারপর গতি কমাতে কমাতে একসময় স্থির হয়ে দাড়াল। এনালগ-ডিজিটাল কোন পদ্ধতিতেই সে আর চলবে না। মিনিট সেকেন্ড গুনে এক ঘন্টা।
এই টাল সামলাতে সেই তালপাতাই ভরসা।
ডিজিটালের সাথে তাল মিলিয়ে যারা সাইনবোর্ড লাগানো শুরু করেছেন, ব্যবসা শুরু করেছেন, তারা শিখে গেছেন কোন সুরে কি তাল দিতে হয়। এবার আপনার পালা।
ডিজিটালের টাল সামলান।
0 comments:
Post a Comment