যুদ্ধ শেষ হয়নি War For Peace

Mar 25, 2010
চেঙ্গিস খান যখন চীন জয় করেন তখন এত মানুষ মেরেছিলেন যে পিকিং শহরের পাশে নরকংকালের পাহাড় জমেছিল। এক বছর পর পর্যটকেরা যখন সেখানে যান তখনও রাস্তা ঢেকে ছিল মানুষের রক্তের আবরনে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন বর্বরতার তুলনা নেই। আর আধুনিককালে হিটলার যা করেছিলেন তা ইতিহাসের কলংক। ১ কোটি ২০ লক্ষ ইহুদি মারতে হবে, একজনের জন্য একটা করে গুলি খরচ করলেও ১ কোটির বেশি গুলি খরচ করতে হয়। আর যে হারে মারতে হয় তাতে বহু বছর লেগে যাবে। এটা ছিল আইখম্যানের হিসাব। তিনি পদ্ধতি আবিস্কার করলেন দ্রুত মারার। গ্যাস চেম্বার। প্রতি ঘন্টায় ২৪ হাজার মারা যাবে এই পদ্ধতিতে। কাজ হবে দ্রুত, খরচ কম।
এই ঘটনাগুলি যখন ঘটে তখন একধরনের প্রস্তুতি ছিল। যাদের মারা হচ্ছে কিংবা হবে তারা জানত এমন কিছু ঘটতে যাচ্ছে। প্রবাদ আছে, বড় মাছ ছোট মাছকে খায় কারন এই না যে সে জানতে পায় না। সে জানে সেটা ঘটতে যাচ্ছে, তার কিছু করার নেই।
১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকায় যা ঘটেছে তার কোন প্রস্তুতি ছিল না। মানুষ জানত না ঘুমের মধ্যে গুলি খেতে হবে, ট্যাংক এসে গুড়িয়ে দিয়ে যাবে সবকিছু। বঙ্গবন্ধু আচ করেছিলেন। বারবার বলেছিলেন এমন কিছু ঘটতে যাচ্ছে। তিনি নিজে পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে দিয়েছিলেন দুরে। কিন্তু তিনি যখন ২৫ মার্চ পর্যন্ত বৈঠক করছেন ইয়াহিয়া-ভুট্টোর সাথে তখন কে জানত কখন তাদের জীবন দিতে হবে ?
মানবইতিহাসের এই কলংকজনক ঘটনাটি ঘটেছে। হঠা করেই বন্য পশুর মত ঘুমন্ত মানুষ হত্যা শুরু হয়েছে।
সংখ্যায় কত ?
তাতে কিছু যায় আসে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক থেকে শুরু করে ফুটপাতে ঘুমিয়ে থাকা শিশু কেউ রক্ষা পায়নি।
তারপর ৯ মাসের যুদ্ধ। কয়েক লক্ষ মানুষের জীবনদান। অবশেষে স্বাধীনতা। এবং সেই স্বাধীনতা উযাপন। এতবড় একটা উপলক্ষ পালন করবে না কেন মানুষ! লাল-সবুজ পোষাক, গালে জাতীয় পতাকার চিহ্ন, হাতে লাল-সবুজ চুড়ি এসব তো এজন্যই। কয়েক লক্ষ মানুষের জীবনের বিনিময়ে এটাই তো আমাদের অর্জন।
আজকের পত্রিকার প্রধান খবর, বিয়েতে রাজী না হওয়ায় বাড়িতে ঢুকে বাবা-মাকে গুলি করে মেরেছে এলাকার মাস্তান। দর্প করে বলে গেছে, তোর বাবা-মাকে মারলাম। এখন একা থাক।
এটাও এক ধরনের স্বাধীনতা। পত্রিকার প্রতিদিনের খবর অমুক যায়গা দখল, তমুক বিল দখল, সমুক নদী দখল। এগুলোও স্বাধীনতা। অন্তত কেউ যখন বাধা দিচ্ছে না, টু শব্দ করছে না তখন স্বাধীনতা ছাড়া আর কি বলা যায়।
দেশের ৫১ ভাগ মানুষ দারীদ্রসীমার নিচে বাস করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কুশিক্ষার সুযোগও জোটে না। সেখানো , ক্ষমতার দাপট, দখলদারী, খুনোখুনি। পথে বেরলে গুতাগুতি-ধাক্কাধাক্কি, দশ মিনিটের পথ পেরতে দুঘন্টা, অফিস পৌছতে পৌছতে বাড়ি রওনা দেবার সময় উপস্থিত। এরই মধ্যে স্বাধীনতা পালন।
জাতি নিশ্চয়ই স্বাধীনতা পেয়েছে। কিন্তু মুক্তির জন্য যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ। সেই মুক্তি পায়নি। ক্ষুধা থেকে, দারিদ্র থেকে, সন্ত্রাস থেকে, দখলদারীর হাত থেকে। বরং ক্রমেই বেড়ে চলেছে দখলদারীত্ব। ক্রমেই নির্লজ্জ হয়ে উঠেছে এইসব হামলাকারী। ২৫ মার্চ যারা হামলা শুরু করেছিল তাদের সাথে দুরত্ব এখন সামান্যই। ৭১ এর রাজাকারের মত তাদেরও দোসরের অভাব নেই। দলে দলে, ঝাকে ঝাকে বাড়ছে।
মুক্তি মেলেনি। মুক্তির জন্য যুদ্ধ শেষ হয়নি। কিংবা শুরুও হয়নি। কারন, অভাব মুক্তিযোদ্ধার। নেতৃত্বের।

0 comments:

 

Browse