গা জ্বালা The Ugly Words

Mar 17, 2010
গায়ে জ্বালা অনেক কারনে হয়। আমি চৈত্রের দিনে বা রাতে লোড সেডিং-এর কথা বলছি না। সেটা গা সওয়া হয়ে গেছে। বলছি তাদের কথা যাদের দিনরাত এসিরুমে থাকার পরও গা-জ্বালা করে। রোগতত্ত্ব হিসেবে বলতে পারেন এটা রোগ। শারীরিক বা মানষিক যে কোনটাই হতে পারে। অতিমাত্রায় বার্গার-কাবাব খেলে তাদের নাকি শারীরিক গা-জ্বালা তৈরী হয়। আবার কেউ যদি অসন্মান করে, যদি গালাগালি করে তাহলে মানষিক গা-জ্বালা তৈরী হয়।
বকারামের পাঠকেরা এত বোকা নন যে একথা ব্যাখ্যা করে বুঝাতে হবে। সরাসরি সোজা কথাতেই যাই।
জিয়াউর রহমান স্বাধিনতার ঘোষক, বিএনপির এই কথায় আওয়ামী লীগের গা-জ্বালা। যদিও ইতিহাস বলে আমি মেজর জিয়া বলছি একথা দিয়ে শুরু করে তিনি স্বাধিনতার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছিলেন সবাইকে।
রেডিও-টিভি অথবা মাইকে এমনকি খালি গলায় যখন কেউ কিছু জানান দেয় তাকে ঘোষক বলে। জিয়া এই যুক্তিতে ঘোষক। একমাত্র মিথ্যাচারনই পারে এটা অস্বিকার করতে। বিএনপি জিয়াকে ঘোষক-ই বলে। তাকে আওয়ামী লীগের আদর্শিক নেতার বিকল্প হিসেবে দাড় করিয়েছে বলে কখনো শোনা যায়নি। অন্তত জাতির পিতা- এই শব্দ নিয়ে কখনও টানাটানি করেনি। সেটা একজনের জন্যই নির্দিষ্ট।
কিন্তু গা-জ্বালা যখন শুরু হয় তখন কান্ডজ্ঞান লোপ পায়। কোথায় কোন যুক্তি আছে টেনে বের করতে হয়। জিয়া যদি স্বাধীনতার ঘোষনাই দিয়ে থাকেন তাহলে স্বাধিনতা দিবস ২৭ মার্চ হল না কেন ? তিনি তো ঘোষনা দিয়েছিলেন ওদিনই। আসলে স্বাধিনতার ঘোষনা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনেই দেয়া হয়েছে। এবারের সংগ্রাম স্বাধিনতার সংগ্রাম, এরচেয়ে বড় ঘোষনা আর কি হতে পারে ?
তবে যুক্তি বলে কথা। এইসব যুক্তিবাদীদের কেউই একবারও বলেননি স্বাধিনতা দিবস আসলে ২৬ মার্চ না হয়ে ৭ মার্চ হওয়া উচিত। কারন ঘোষনাটা সেদিনই দেয়া হয়েছিল। অবশ্য সেটা ভবিষ্যত পরিকল্পনা হলে অন্য কথা।
পৃথিবীর কোন দেশে স্বাধিনতার ঘোষক নামে কেউ পরিচিতি পেয়েছেন কিনা জানিনা। কিছুদিন আগে পর্যন্ত জিয়া মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন একথাই লোকে জানত। জেড ফোর্সের প্রধান ছিলেন। (আজকাল শোনা যায় তিনি পাকিস্তানের চর ছিলেন। অনেকের কাছেই প্রমান আছে। তারা ৪০ বছর ধরে অতিযত্নে গোপনে সংরক্ষন করে রেখেছেন)। তিনি মুক্তিযুদ্ধে কি ভুমিকা রেখেছেন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে কি ভুমিকা রেখেছেন, দেশের উন্নতির জন্য কি পরিকল্পনা করেছেন এসব ভুলে তিনি স্বাধিনতার ঘোষক এই একটিমাত্র বিষয়কে আকড়ে ধরতে আগ্রহী বিএনপি।
তাতে সমস্যা কোথায় ?
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফাদার অব নেশন বলে একটি শব্দ পরিচিত। জাতির জনক। যিনি জাতিকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করেন তিনি এই সন্মান লাভ করেন। এজন্য যুদ্ধ করে স্বাধিনতা পেতে হবে এমন কথা নেই। আমাদের নিকটতম প্রতিবেশি দেশে গান্ধীকে এই মর্যাদা দেয়া হয় যদিও তিনি সবধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে ছিলেন। এমনকি স্বাধিনতার জন্য যুদ্ধেরও। কেউ আবার জাতির জনক হন সরাসরি যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে। শত্রুকে পরাজিত করে। জর্জ ওয়াশিংটন, মাও সে তুং কিংবা  ফিডেল ক্যাষ্ট্রো নিশ্চয়ই এই দলে। কেউ আবার যুদ্ধের পর দেশ গঠন করেও জাতির জনকের সন্মান পান। আমেরিকায় ওয়াশিংটনকে যতটা ভক্তি করা হয় জেফারসন-লিংকনকে তারথেকে বিন্দুমাত্র কম করা হয় না। মাও নিজে সবচেয়ে বেশি মানুষের ছন্নছাড়া এক দেশের অর্থনীতি ৫ বছরে দ্বিগুন করতে পেরেছিলেন। বলতে গেলে একেবারে খালি হাতে। যেখানে খরা-বন্যা-পঙ্গপাল ছিল নিত্যসঙ্গি।
বঙ্গবন্ধু জাতির জনক নিশ্চয়ই প্রথম কারনে। সেটা তার প্রাপ্য। এনিয়ে বিএনপি তো দুরের কথা সরাসরি স্বাধিনতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়া জামায়াতের নেতারাও কিছু বলার সাহস পান না। এদেশের সব মানুষের কাছে বিষয়টি চিরসত্য। 
কিন্তু কথা একটাই, আমার নেতা স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছেন। সেকারনেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। নইলে কক্ষনো এদেশ স্বাধীন হত না। যে লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন দিল, যারা সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করল তারা এই ঘোষনার কাছে তুচ্ছ। ঘোষনাই সব।
প্রশ্ন করতে পারেন জিয়া-মুজিব বিরোধ লাগল কেন ? জীবিত অবস্থায় তারা বিরোধে জড়িয়েছিলেন এমন খবর তো নেই। মৃত্যুর পর একে অন্যের বিরুদ্ধে লাগলেন কেন ? যেখানে তারা অবস্থান করছেন সেখানেও কি হাতাহাতি করছেন ? নাকি এটা একেবারে পার্থিব বিষয় ? এখানেই বা একের সাথে অন্যের তুলনার বিষয় সামনে এল কেন ??
এপ্রশ্নের উত্তরের জন্য জাতিকে অপেক্ষা করতে হবে বহুদিন। হয়ত কয়েক প্রজন্ম। যখন এই নেতাদের বর্তমান রাজনীতিতে ব্যবহার করা হবে না। তাদের নাম বিক্রি করে নিজের চামড়া বাচানো যাবে না। এরই মধ্যে তাদের নাম প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বিক্রি হয়ে গেছে।
ইতিহাস কখনো বদলানো যায় না। সত্যিকারের ইতিহাস একসময় লেখা হবে। আপাতত একের কথায় অন্যের গা-জ্বালা এবং তার প্রতিক্রিয়া দেখা ছাড়া গতি নেই।

0 comments:

 

Browse