ভাল ছবি মন্দ ছবি - In search of a good photograph

Aug 7, 2009

ভাল ছবি দেখতে ভাল, মন্দ ছবি মন্দ। ফটোগ্রাফার অথবা ছবির দর্শক সবার কাছে বিষয়টা এমনই। মন্দ ছবিকে ভাল বলা হবে আর ভাল ছবিকে মন্দ বলা হবে এমনটা ঘটে না। অবশ্য ফটোগ্রাফিক বিচারে ভাল ছবি তত গুরুত্ব নাও পেতে পারে, কিংবা আপাত দেখতে সুন্দর না হয়েও কোন ছবি ফটোগ্রাফিক বিচারে অমুল্য হতে পারে। একটা বিষয়ে অমত নেই তা হচ্ছে সুন্দর একটা ফুল, সুন্দর একটা পাখি, সুন্দর একজন মানুষ কিংবা সুন্দর প্রকৃতি, সকলেই একটু সময় নিয়ে দেখে।

একজন ক্যামেরা হাতে মানুষ কখন মনে করেন ছবিটা ধরে রাখি সেটা বুঝতেও সমস্যা হবার কথা না। তিনি কখনোই রাস্তা উপচে পড়া নর্দমা, কিংবা ডাষ্টবিন উপচে পড়া ময়লা, রাস্তায় মানুষে মানুষে ধাক্কাধাক্কি, রিক্সা-গাড়ির জট, কিংবা নাকের সামনে শরীর চুলকানো মানুষ এসবের ছবি তুলে সেই ছবি ঘরে রেখে দিতে চান না। এমন ছবি তুলতে আশা করেন যা দেখে চোখ জুড়াবে। বহু আশা করে টাকা জোগার করে ক্যামেরা কেনেন। তারপরই পড়েন বিপদে।

ছবি উঠাবেন কিসের ?

মানুষ টাকা খরচ করে হোয়াইট হাউসে যায়। ইচ্ছেমত ছবি উঠিয়ে আনে। সেখানে ছবি উঠাতে বাধা নেই, বঙ্গভবনে ছবি উঠানো মানা। নিশ্চয়ই সন্ত্রাসীরা সেই ছবি দেখে সেখানে আক্রমন করবে এই কারনে। নয়ত বেড়ানো এবং ছবি উঠানোর সুযোগ করে দিয়ে বহু টাকা কামানো যেত। সেতুলনায় সংসদ ভবন বেশ নিরাপদ। সময়ে অসময়ে সেখানে যাওয়া যায়। ক্যামেরা নিয়ে হাজির হলেন সেখানে। তবে,

হোয়াইট হাউসের ছবি উঠালে হোয়াইট হাউসই দেখা যায়। আশেপাশে বাড়ি দেখা যায় না। তারা নাকি বড় কোন বিল্ডিং তৈরীর আগে বিশেষজ্ঞ ফটোগ্রাফার এনে জিজ্ঞেস করে কিভাবে বানালে ছবিতে ভাল দেখা যাবে। শোনা যায় সংসদ ভবনের মুল পরিকল্পনায় আশেপাশে কোন উচু বাড়িঘর নির্মানে নিষেধাজ্ঞা ছিল।

সেসব মানলে কি চলে ? সাংসদরা থাকবেন কোথায় তাহলে। সকালে ঘুম থেকে উঠে জানালা দিয়ে দেখবেন সংসদটা দেখতে কেমন (যেহেতু অধিবেশনের সময় যাওয়া হয় না)। তবেই না গনতন্ত্র মাথার মধ্যে কিলবিল করবে। আর সংসদের সভাপতি, তার যায়গা হওয়া উচিত সংসদ ভবনের গা ঘেষে। থুথু ফেললে যেন সংসদ ভবনের গায়ে গিয়ে পড়ে। তবেই না সম্পর্ক থাকে সংসদের সাথে।

কাজেই যা হবার তাই। সংসদ ভবনে আবাসিক এলাকা, সন্ধ্যায়-রাতে পতিতা-ছিনতাইকারীর আখড়া।

ছবি উঠাবেন কিসের ?

বাঙালীর দেশপ্রেম প্রশ্নাতীত। আপনি সেটা ধরে রাখতে ক্যামেরা হাতে হাজির হলেন অপরাজেয় বাংলার সামনে। একেবারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে। ছবি উঠাতে গিয়ে থমকালেন। সারা গায়ে সরকারী-বেসরকারী দলের পোষ্টার। ছবি না উঠিয়েই বেরিয়ে এলেন সেখান থেকে।

আপনি গো ছাড়লেন না। অন্তত একটা বিল্ডিং এর ছবি উঠাবেনই। নয়ত অন্তত পরিচ্ছন্ন একটা রাস্তার ছবি। ইমেইল করে দেশের বাইরে পাঠাবেন। দেখাবেন বাংলাদেশ শুধু বণ্যা, ঘুর্নিঝড় বা ভিখারীর দেশ না। এখানে উচু উচু বিল্ডিংও দেখা যায়। রাস্তায়দামী দামী গাড়ি দেখা যায়। ছবি উঠাতে শুরু করলেন। যতবারই ছবি উঠান চোখে পড়ে সব দেয়ালে পোষ্টার আর লেখা, বিজ্ঞাপন আর বিজ্ঞাপন, তারের জঞ্জাল আর আবর্জনা, ভিক্ষুক আর ভবঘুরে, ডাষ্টবিন আর যানজট।

একসময় হার মেনে ঢুকলেন রমনা গ্রীনে। আরকিছু না হোক কিছু গ্রীন গাছপালা তো পাওয়া যাবে। ভীড় আছে তাতে কি, একসময় না একসময় ভীড় কমবে। একেবারে কাছ থেকে একটা ফুলগাছের ছবি উঠাবেন। কোনভাবেই যেন বাইরের আবর্জনা ধরা না পড়ে।

অপেক্ষা করতেই থাকলেন।

তারপর অবশেষে বাড়ি ফিরলেন। ক্যামেরা, মোবাইল, মানিব্যাগ সব খুইয়ে।

0 comments:

 

Browse