সহযোগি শিল্প Way to success

Aug 13, 2009

একসময় লোকে বাসে উঠতে, ভিড়ের মধ্যে হাটতে ভয় পেত সে ভয়ের নাম পকেটমার নিজের অজান্তেই হাত চলে যেত পকেটে যা আছে সেটা চেপে ধরার জন্য আর সেটাই নজরে পড়ত পকেটমারের কার পকেটে টাকা আছে জানতে বাকী থাকত না কিছুদুর অনুসরন করার পর সুযোগ না পেলে পকেট বিক্রি করে দেয়া হত আরেকজনের কাছে তখন সে পিছু লাগত এক টিভি সাক্ষাৎকারে পকেটমার বলেছিল তাদের গোপন রহস্য, পকেট যতদিন থাকবে ততদিন পকেটমারও থাকবে

কিন্তু বাস্তবতা সেকথা বলে না পাথর শেষ না হয়েও যেমন প্রস্তরযুগ শেষ হয়েছে তেমনি পকেট শেষ হওয়ার আগেই পকেমার শেষের পথে এখনও যে দুচারজন টিকে আছে তা শুধুমাত্র ঐতিহ্য রক্ষার কারনেই যতদিন এই গৌরবজনক শিল্প রক্ষা করা যায় শোনা যায় গুলিস্তানের পকেটমারের খুব নামডাক ইটালীও হার মানে একজন সেটা পরীক্ষা করার জন্য পকেটে একটা কয়েন নিয়ে কয়েক চক্কর ঘুরল তারপর হতাস হয়ে বলল, কোথায় পকেটমার আমার পকেটে কেউ হাত দেয়ার সুযোগই পেল না

পাশ থেকে একজন বলে উঠল, এক টাকার কয়েন লইয়া ঘুরলে পকেমার পাওয়া যায় না

সেই ঐতিহ্য এখন সত্যিসত্যি বিলুপ্তির পথে তাদের যায়গা দখল করেছে স্থুলবুদ্ধির ছিনতাই হাতে একটা ছুরি, কিংবা খেলনা পিস্তল, আর সত্যিকারের জাতে উঠলে সত্যিকারের পিস্তল তারপর রাস্তায় একজনকে থামিয়ে কি আছে আদায় করা কিছু না কিছু পাওয়া যাবেই। আরকিছু না থাকলেও অন্তত একটা মোবাইল ফোন তো থাকবেই দিনে দুবেলা খাবার না জুটতে পারে তাই বলে শখ থাকবে না।

কাজেই ব্যবসা রমরমা

পকেটের টাকা, মোবাইল ফোন এসব হচ্ছে ক্লাসিক ছিনতাই তবে সব শিল্পেরই সহায়ক শিল্প থাকে রয়েছে ছিনতাইয়েরও এবং এগুলি এখনও প্রবৃদ্ধির পথে দ্রুত প্রসারমান কারন একটাই, বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয় এতে

বিষয়টা শুরু হয় কর্মসংস্থানের পথ ধরেই যার বেচে থাকার কোন অবলম্বন নেই সে কোনমতে ঢাকা এসে পৌছে তারপর কোনমতে খুজে বের করে একজনকে যার সামর্থ্য আছে তাকে বেচে থাকার পথ দেখানোর কারন তার রয়েছে অভিজ্ঞতা এবং সম্পদ যার ফুটপাতে কয়েক ডজন দোকান একসময় সিটি কর্পোরেশন তাদের কথা ভেবেই হকার্স মার্কেট বানিয়েছে। তবে হকাররা দোকান মালিক হয়নি, হয়েছে দোকানের কর্মচারী। মালিকের রয়েছে রাজনৈতিক পরিচিতি। অনুসারী। তার অধীনে তারই কোন এক দোকানে একদিন মাথা গোজার যায়গা হয়ে যায়

কর্মসংস্থানের সাথেসাথে আসে বাসস্থানের প্রশ্ন। তার সমাধান দেয়ার জন্যও রয়েছেন নেতা। নেতা ছাড়া কি দেশ চলে ? তারা এইসব ছিন্নমুলদের জন্য মুলের ব্যবস্থা করে দেন। অনেকে বলেন এরা কয়েকফুট যায়গার জন্য যে ভাড়া দেয়, কয়েক বালতি পানির জন্য যে টাকা দেয়, কয়েক ওয়াট বিদ্যুতের যে দাম দেয় তা অভিজাত এলাকার খরচকেও ছাড়িয়ে যায়।

তা-তো যেতেই পারে। দেশকে টিকিয়ে রেখেছে এরাই। এরাই কর্মী, এরাই ভোটার।

যাকগে সেকথা। বলছিলাম সহায়ক শিল্পের কথা। এদের নানারকম সেবা দিয়ে যারা শিল্প পরিচালনা করছেন তারা শিল্পপতি তো বটেই।

এদেরকে নানারকম সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। ফলে আরেক শিল্প তৈরী হতে হয়েছে। এদের কাজ কোনমতেই যেন এই ব্যবস্থা ভেঙে না পড়ে সেটা দেখা। এদের হাত অনেক লম্বা। সেই হাতে ইউরোপ-আমেরিকা থেকে ডলার-ইউরো-পাউন্ড এসে জমা হয়। তবে কাজটি খুব সহজ না। ছবি উঠিয়ে বিদেশে প্রদর্শনী করতে হয়, রিপোর্ট লিখে দেখাতে হয়, সমসয়ে সময়ে রাস্তায় মিছিল পর্যন্ত করতে হয়। এতসব চাষবাসের পরই না ফসল ফলে।

আরো এক শিল্প যোগ দেয় এতে। কোন মেডিসিনে মোটা কমানো যায়, কিসে স্বর্গের অনুভুতি পাওয়া যায়, কিসে শিল্পবোধ-কল্পনাশক্তি-মেধা বাড়ানো যায় সেইসব খুজে এনে দোরে দোরে পৌছে দেওয়া। বিদেশি স্কুল-কলেজ হলে কাজ সহজ হয়। বেশি কথা বলতে হয় না। এরা অনেক খোজখবর রাখে। ইন্টারনেটে জানা যায়। তাদের হাতে টাকা পয়সাও অফুরন্ত। ফলে যত মানুষের কর্মসংস্থান হয় সেটাও বাড়তেই থাকে। একের থেকে এক, তার থেকে আরেক। ব্যবসা এবং কর্মসংস্থান বাড়তেই থাকে।

কোনমতে বিদেশে পা রাখলে দুচার বছর কষ্ট করতে হয়। তারপর পায়ের নিচে মাটি শক্ত হলে পরিবারের ভিসার চেষ্টা করতে হয়। ঢাকা নামক বিদেশেও একই প্রক্রিয়া। একসময় দেশ থেকে পরিবারকেও আনতে হয়। তাদেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হয়। ফলে চক্রবৃদ্ধিহারে শিল্পে প্রসার ঘটতে থাকে। নতুন নতুন সহায়ক শিল্প গড়ে ওঠে।

এইসব সহায়ক শিল্পে জোরে একদিন দেশ শিল্পোন্নত হবেই হবে।

0 comments:

 

Browse