আপনি সবসময় ফার্মগেটের চিরাচরিত চেহারা দেখেই অভ্যস্থ্। একদিন দেখলেন অন্যরকম অবস্থা। এলাকায় কোন রিক্সা নেই, ফুটপাতে কোন দোকান নেই, রাস্তায় ধাক্কাধাক্কি নেই। একেবারে সুনসান চারিদিক। ঘন্টাখানেক পর আবারও যখন ফিরলেন তখন দেখতে পেলেন সেই নিত্যদিনের অবস্থা। পুলিশে-রিক্সাঅলায় ঠেলাঠেলি, মানুষে-মানুষে গুতোগুতি, দোকানী-ক্রেতায় হাতাহাতি।
এটা এক ধরনের ভেলকি।
কিংবা দোকান থেকে অনেক বাছাই করে, অনেক দরদাম করে প্যান্ট কিনলেন। রীতিমত যাহা চাহিবে তাহার অর্ধেক পদ্ধতিতে। গজ-ফিতে দিয়ে মেপে দেখলেন আপনার কোমড়ের সাথে একেবারে মানানসই। চৌত্রিশ-চৌত্রিশ। বাড়ি এসে ট্রায়ল দিতে গিয়ে দেখলেন প্যান্ট আর ওঠে না। ব্যাপার কি, হঠাৎ করে এত মোটা হয়ে গেলাম নাকি ?
অনেক কষ্টে গজ-ফিতে বের করে কোমড় মাপলেন। ঠিকই আছে। এবার প্যান্ট মাপলেন। সেটা দুইঞ্চি ছোট হয়ে গেছে।
এটা আরেক ভেলকি।
কিংবা পাড়ার যে মেয়েটিকে দেখে আপনি মনেমনে ভাবেন, মেয়েটা কত নম্র। কত ভদ্র। কত সাধারন ভাবে চলে। সাধারন পোষাক পড়ে। কত বুদ্ধিমান। তারপরই একদিন চোখ উল্টে দেখলেন তার পড়নের জিন্স হাটু পর্যন্ত উঠে গেছে। গায়ের জামা মনে হচ্ছে আঠা দিয়ে আটকানো। চুলের রং পাল্টে গেছে। চোখের রং পাল্টে গেছে। হাটার ভঙ্গি পাল্টে গেছে। এই হাটাকেই লোকে বলে বিড়াল হাটা। তার যে সঙ্গি তার মাথায় বেনি, হাতে চুড়ি, কানে দুল। পড়নে হাফপ্যান্ট। কাধের ব্যাগ বলে দিচ্ছে তাতে রয়েছে বই, এবং দুজনে বের হয়েছে বিদেশি সার্টিফিকেটের ক্লাশ করতে।
এটা আরেকটা ভেলকি।
কিংবা আপনার যে প্রতিবেসিকে খরচ বাচাতে সবসময় পাড়ার সাইকেলের দোকানে নিজের হাতে চাকায় হাওয়া দিতে দেখে অভ্যস্থ, দিনবদলের পালায় রাতারাতি তাকে দেখলেন কোটি টাকার গাড়িতে রাস্তা চষে বেড়াতে। যদিও খুব ভাল করেই জানেন তার নির্দিষ্ট কোন পেশা নেই দেশের সবচেয়ে বড় লটারীর প্রথম পুরস্কারের টাকায় এমন গাড়ির দাম হয় না।
এটা আরেক ভেলকি।
কিংবা একজন নেতা, যিনি চিরদিন একই পথ দিয়ে যাতায়াত করেন, একই দোকান থেকে সিগারেট কেনেন, তিনি একসময় জনগনের সমর্থন পেয়ে আরো বড় নেতা হলেন। এখনও সেই পথেই যান, সেই দোকানেই সিগারেট কেনেন। তারপর একদিন সাজসাজ রব পরে গেল। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে যাবেন ওই পথ দিয়ে। দুপাশের সব দোকান উঠিয়ে দেয়া হল (তার সিগারেটের দোকানটা সহ), দুপাশের দেয়াল থেকে সব নোংরা দুর কথা হল, ডজন ডজন পুলিশ দাড়িয়ে গেল সার দিয়ে। আর তিনি স্বর্গের দেবতার মত সকলের আশির্বাদ নিতে নিতে সেই পথে গেলেন।
এটা আরেকটা ভেলকি।
কিংবা যার প্রশংসায় সারা দেশ পঞ্চমুখ, জনগন তারহাতে দেশ তুলে দিতে একপায়ে খাড়া, ঋন নেয়ার সামর্থ্য যাদের নেই তাদের ঋন দিয়ে যিনি দেশে সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন এবং বিশ্বের স্বিকৃতি পেয়ে বিশ্ব নাগরিকে পরিনত হয়েছেন, হঠাৎ করেই দেখলেন তার পক্ষে ওয়েবসাইট। সারা বিশ্বের দরীদ্রদের পক্ষে সারা বিশ্বের কাছে হাত পাতা হয়েছে।
এটাও ভেলকি বইকি।
0 comments:
Post a Comment