ঝাড়া দিলেই টাকা Money Machine

Aug 24, 2009

ঝাড়া দিলেই টাকা কথাটার ব্যবহার ব্যাপক। সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য সম্ভবত মাটির ব্যাংকের ক্ষেত্রে। সেখানে ছোট্ট একটা ফুটো থাকে যা দিয়ে ঢুকাতে পারবেন, বের করবেন না। অর্থপ্রাপ্তির যখন আর কোন পথ থাকে না তখন নিয়ম ভেঙে সেই ছোট্ট ফুটো দিয়েই বের করতে হয়। কাজেই ঝাড়াঝাড়ি।

পকেট কিংবা মানিব্যাগ ঝাড়লে সেখান থেকে টাকা বেরয়, যদি থাকে। কারো কারো জন্য মানিব্যাগটা অনেক বড়। তাকে মানিব্যাগ না বলে মানি বস্তা বলাই যুক্তিসঙ্গত। ব্যাংকে টাকা রাখার ঝামেলা অনেক, লোকে জেনে যায়। আবার মাটির ব্যাংকঅলারা অতবড় ব্যাংক বানায় না। কাজেই নিজের প্রয়োজনে নিজেকেই সুবিধেমত ব্যাগ বানিয়ে নিতে হয়। বালিশ দিয়ে হোক আর জুতার বাক্স, কাগজের প্যাকেট বা অন্যকিছু দিয়েই হোক। তারপর যখন টাকা প্রয়োজন তখন ঝাড়াঝাড়ি।

ঝাড়া দেয়ার বিষয়টা অন্যক্ষেত্রেও লাগসই। যেমন ধরুন মিনিবাস। ভেতরে লোক ঢুকে খাচায় ঢোকানো মুরগির মত এটেসেটে রয়েছে। গেটে ঝুলছে। রাস্তায় তখনো শতখানেক। তখন একটু ঝাড়াঝাড়ি করুন। দেখা যাবে আরো ডজন খানেক ঢোকার মত যায়গা হয়ে গেছে। মুড়ির টিন কথাটাও মানানসই। টিনে যতই মুড়ি ঢুকান না কেন একটু ঝাকাঝাকি করলেই আরো কিছুটা যায়গা পাওয়া যায়।

সব ঝাড়াঝাড়ি আবার এক ধাপে সম্পন্ন হয় না। যেমন ধরুন ফুটপাত ঝাড়াঝাড়ি। আমি ঝাড়ুদারের কথা বলছি না, তাদের কাজ তারা একবারই করে (যদি করে থাকে)। একবার ঝাড়ু চালিয়ে এগোতে থাকবে। তার ফল কি হল তাতে কিছু যায় আসে না। বলছি যারা ফুটপাতের দখলদারি পরিস্কার করার জন্য ঝাড়ু চালান তাদের কথা। তারাও কখনো কখনো এই পদ্ধতেই কাজ করেন। একবার উঠিয়ে দিয়ে উঠাতে উঠাতে এগিয়ে যান। তাদের তার তারা করেছেন। আবার যদি দখল হয় তাহলে আবার করবেন। শতবার করতেও আপত্তি নেই। কারন-

কারন ঝাড়া দিলেই টাকা। ফুটপাতের দোকানীকে উঠাবেন ? সে হাতে টাকা ধরিয়ে দেয়। গাড়ি রাখায় কেস করবেন। সেও টাকা ধরিয়ে দেয়। ভিক্ষুককে উঠাবেন, সেও টাকা বাড়িয়ে দেয়। যত ঝাড়া তত টাকা।

এটা স্বাভাবিক একস্তর ঝাড়াঝাড়ি। বহুস্কর বিশিষ্ট ঝাড়াঝাড়ি অনেক পরিকল্পিত। যেমনটা দেখিয়ে গেছেন ইউ আহমেদগন। আপনার বাড়ি রাস্তার দখল করেছে, ভেঙে দেয়া হবে। আপনার বাড়িতে গ্যারেজ নেই, নিচতলা ভেঙে দেয়া হবে । আপনার গাড়ি আছে কি-না তাতে কিছু যায় আসে না, কিংবা থাকলে গাড়ি রাস্তায় রাখুন তাতেও আপত্তি নেই। বাড়ির নিচতলায় যায়গা খালি রেখে সেখানে গ্যারেজ লেখা থাকতে হবে।

শুরু হল এই স্তরে। তারপর ধাপে ধাপে ভাগ হল কাজ। ভাঙাভাঙি, ঝাড়াঝাড়ি।

সবসময় জরুরী আইন দেখানো যায় না। তখন স্বাভাবিক আইনেই কাজ করতে হয়। যেমন ধরুন, সব অনিয়মের হিসেব নেয়া। স্বাধীনতার পর রাজুক যত দুর্নীতি করেছে তার সব হিসেব দুমাসে জমা দিতে হবে সংসদিয় কমিটির কাছে। এটা সবচেয়ে উচু স্তরের ঝাড়াঝাড়ি। প্রায় ৪০ বছরের দুর্নীতির হিসেব কার কাছে জমা আছে সে প্রশ্ন করবেন না। লোকে বলে এদেশে সরকারী চাকরীর মেয়াদ নাকি এই সময়ের চেয়ে কম। হবেও বা। যারা ৩০ বছর আগে চাকরী ছেড়েছে তাদেরও হিসেব দিতে হবে। যারা মারা গেছে তারাও বাদ যাবে না।

পরিস্কারের জন্য ঝাড়াঝাড়ি করতেই হয়। তার ফলে যদি সেখান থেকে কিছু বেরয় সেটা অতিরিক্ত লাভ।

0 comments:

 

Browse