সিটি অব জয়

Apr 22, 2010
আনন্দনগর, কলকাতা সম্পর্কে এ নামেই বিশ্বখ্যাত বই লিখেছিলেন লাপিয়ের সাহেব। শুধু বইতেই না বইয়ের বাইরে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছিলেন একমাত্র সেখানেই জীবন দেখেছেন তিনি।
তা দেখারই কথা। খুব বেশিদিন আগের কথা না সেটা। পথের দুথারে জমে থাকত আবর্জনার স্তুপ, ঘরে ঘরে গোয়াল ঘর, পথে জানজট। কারেন্ট কখন আছে কখন নেই তা ভববানই বলতে পারেন। বাড়িতে বাড়িতে জেনারেটন নয় ইনভার্টার। বাসে বাদুর ঝোলা মানুষ।
সেই বাদুরঝোলা অবস্থায়ই আনন্দ। একজন রেগে বলছেন, দাত খুলে নেব। আরেকজনের উত্তর, দাতের ডাক্তার নাকি ?
আনন্দ আর কাকে বলে!
কিছু মানুষ ঢাকায় পা দিয়ে বলত, বাপরে! ইউরোপে এসে পড়লাম নাকি ? কি বড় বড় দালান, দামী দামী গাড়ি, ঘরে ঘরে জাপানী জিনিষ। আমরা বাপু ওসব জিনিষ চোখেও দেখিনা। বড়জোর চোরাই পথে কিছু ভিসিপি আসে।
দিন বদলায়। মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেচে থাকলে বদলায়। কারনে অকারনে বদলায়। বলে গেছেন মুনীর চৌধুরী। কাজেই দিন বদলেছে। এখন কলকাতায় নাকি পধের ধারে ময়লা নেই। জ্যোতিবাবুর জ্যোতিতে বদলে গেছে। দুমিনিটের সোজা পথ আধ ঘন্টায় ঘুরে আসতে হয়। কোনমতেই উল্টোদিকে যাওয়া চলবে না। সব আনন্দ কেড়ে নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে এখন আর ঢাকাকে কেউ ইউরোপের শহর মনে করে না। নট নড়নচড়ন ট্রাফিক। পানি নেই, বিদ্যুত নেই, গ্যাস নেই। বাসযাত্রীকে বাদুরের সাথে তুলনা করলে নিরীহ প্রাণীটিকে অসন্মান করা হয়। তারা অন্তত ডাল ধরেই ঝোলে, একজন আরেকজনকে ধরে ঝোলে না। রাস্তার দুপাশ পুরোটাই গাড়ি-রিক্সার গ্যারেজ। পুরো শহরটাই বাজার। দামাদামি করার অফুরন্ত সুযোগ। পর্যটন কর্পোরেশনের প্রচারপত্র খুলে দেখুন, এখানে দামাদামী করার সুযোগ পাবেন। আপনারা দলে দলে আসুন। অবশ্য একে দামাদামী বলেন না অনেকেই। বলেন মুলামুলি। শব্দটার উপত্তি সম্ভবত মলামলি থেকে। এটাও একধরনের কান মলামলিই। হাত দিয়ে কান না ধরে শব্দ দিয়ে কান মোচড়ানো।
আর আনন্দ! সে জিনিষটা ভরপুর। ওইতো, এক ভদ্রমহিলার সাথে রিক্সাচালকের তুমুল ঝগড়া। কেউ কারে নাহি ছাড়ে। তাদের ঘিরে উফুল্ল মানুষের ভীড়। হাতাহাতি লাগে না ক্যান। তাইলে তো মজাটা জমে।
আরেকটু দুরে হাতাহাতি চলছে। হাতাহাতি না বলে বরং গুতাগুতি কিংবা ঠেলাঠেলি বলাই ভাল। দুজন মাঝবয়সী ঠেলাঠেলি করে শক্তি পরীক্ষা করছেন। কে কাকে ঠেলে ফেলতে পারে। সেখানেও উসুক মানুষের ভিড়। একসময় একজন জয়ী হল। অপরজন উল্টে পড়ে ধাক্কা খেল রিক্সার সাথে। মাথা থেকে রক্ত বেরচ্ছে। ধরাধরি করে সেই রিক্সায় তুলেই নিয়ে যাওয়া হল হাসপাতালের পথে। অপরজন রেসলিংয়ে বিজয়ীর মত ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন সববেত জনতার দিকে, কেমুন খেলডা দেখাইলাম।
রাস্তায় মানুষ চলেছে পিলপিল করে। হাসতে হাসতে, গাইতে গাইতে। খুশিমনে এ ওকে ধাক্কা দিচ্ছে, তাকে কাতুকুতু দিচ্ছে, আরেকজনের বাপের শ্রাদ্ধ করছে, কানের সাথে মোবাইল ধরে হাসতে হাসতে বলতে বলতে চলেছে। রীতিমত স্বপ্নের দেশ।
লাপিয়ের সাহেব আনন্দের শহর নিয়ে লিখেছিলেন। মনে চাইলে স্বর্গের শহর নিয়েও লিখতে পারেন।

0 comments:

 

Browse