রাজনীতির উপহার

Apr 1, 2010
পত্রিবার খবর, এই দুটি শব্দই মুখ ঘুরিয়ে নেয়ার জন্য যথেষ্ট। বলে দেয়া প্রয়োজন নেই সেখানে কি থাকতে পারে। খুন, চাদাবাজি, দখলদারী আর সরকারী বক্তব্য, বিরোধীদলের বিবৃতি। দুভাগে ভাগ করলে একদিকে মানুষের দুর্ভোগ আরেকদিকে কৃতিত্বের বর্ননা। দুইই বাড়ছে সমানতালে।
কথা বলবে কে ? আর বললে শুনবে কে ? সৃষ্টিকর্তা কান দিয়েছেন দুটি, চোখ দিয়েছেন দুটি, আর মুখ দিয়েছেন একটি। হয়ত ইঙ্গিতে বলেছেন তোমরা বেশি দেখ, বেশি শোন, কম কথা বল। ফল হয়েছে উল্টো। চোখ-কান মুলত বন্ধই থাকে। অন্যভাবে বললে আমরা তাকাই, দেখিনা। বাংলায় শোনার বিষয়ে এমন অর্থবোধক শব্দ আমার জানা নেই। ইংরেজিতে আছে জানি। যার অর্থ দাড়ায় শব্দ কানে প্রবেশ করে, অর্থ বুঝি না।
যাক সেকথা। বরং মুখের ব্যবহার নিয়ে কথা বলা যায়। পক্ষে-বিপক্ষে, দুপক্ষে, কোনপক্ষ না নিয়ে কথা বলতে কোন আপত্তি নেই। যা মুখে আসে বলে যান। সকালে এক বিকেলে আরেক, তাতেও কিছু যায় আসে না। সবই ছাপা হবে খবরের কাগজে। শুধু বিজ্ঞাপন ছাপলে পত্রিকা বলা যায় না। কাজেই খবর ছাপতে হয়। সেকারনেই, কে কি বলেছে সেটা সংগ্রহ করতে হয়। তারপর যাচাই-বাছাই, বহুরকম হিসেব-কিতেব, তারপর ছাপা। কোন কথা ছাপলে আবার কে বিরাগভাজন হয় তারতো ঠিক নেই। রাজনৈতিক মামলা হতে পারে, মানহানির মামলা হতে পারে, বিজ্ঞাপন বাদ পরতে পারে, এমনকি রাস্তাঘাটে গনপিটুনিও জুটতে পারে। হিসেব করে ছাপাই ভাল।
ফল, একই খবর দুকাগজে দুরকম। এক খবরে মনে হবে অমুক পক্ষকে ভেজাবেড়াল পেয়ে তমুক পক্ষ যাচ্ছেতাই করেছে। আরেক কাগজে পাবেন তমুকপক্ষের কুকীর্তি থামাতে অমুক পক্ষ সমাজ রক্ষার দায়িত্ব পালন করেছে। ঘটনা এক, দৃষ্টি দুই। হায়রে, দুই চোখের এটাই বিপদ।
যারা মধ্যপন্থি কিংবা সর্বপন্থি তারা দুখবরই রাখেন, দুটোই বিশ্বাস করেন, দুপক্ষেই সায় দেন। পুলিশ ধরে দায়িত্বপালন করেছে, ছেড়ে দিয়ে আরো বড় দায়িত্ব পালন করেছে। দুটোই ঠিক। মাঝখানে লাভ একটাই, পুলিশ নামের নির্জিব বস্তুকে ভয় পাবার কিছু নেই। নিতান্তই কিছু টাকাপয়সা কিংবা মানী দুচারজনের সাথে যোগাযোগ রাখাই যথেষ্ট। যাদের নাম শুনলে পুলিশের পা কাপে। আদালত নামের বিল্ডিংকেও ভয় পাবার কারন নেই। কেউ কেউ বলে ওখানকার দেয়ালের ইটগুলোও ঘুষের জন্য হাত পেতে থাকে।
কাজেই, ফরচুন ফেভারস দ্য ব্রেভ। সাহসী হও। ভাগ্য তোমার সাথে। জোর যার সবই তার। শুধু টাকাপয়সা, টেন্ডার, জমি, বাড়ি, খালবিল এসব নির্জিব বস্তু কেন, অমুক মেয়েকে আমার পছন্দ, তাকেও আমার চাই। বাধা দেবে কোন বাপের ব্যাটা। খুন কইরা ফালামু না।
যদি ভেবে থাকেন এবিষয়ে পুরুষ সমাজ কিংবা ছেলেরা এগিয়ে তাহলে ভুল করবেন। কুরুচিপুর্ন প্রেম সম্পর্কে শতর্ক করা ছাত্রীর হাতে শিক্ষক খুন, এমনটাও ঘটে। পত্রিকা বলছে।
একসময় এসব খবরের জন্য মানুষ হুমড়ি খেয়ে কাগজ কিনত। আজকাল এসব খবরে কেউ অবাক হয় না। পত্রিকা কাটতি বাড়ে না। এমনকি ধারাবাহিকভাবে লিখলেও নিতান্তই মফস্বলের গেয়ো লোকেরাই কিছুটা আগ্রহ দেখায়। বরং এরচেয়ে তারা আগ্রহ দেখায় এমন কিছু লেখা ভাল। খবরের কাগজের সাথে ফাও হিসেবে রঙিন মিনি পত্রিকা। কোন সময়ে কোন ফ্যাসন, নিজেকে আকর্ষনীয় করে তুলে ধরার পদ্ধতি, নতুন প্রেমিক প্রেমিকার টিপস, মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেট চ্যাটিং এর কলাকৌশল, দেশেই বিদেশী ক্যারিয়ান গঠন, ... 
হঠাত করে একদিনে বটগাছ গজায়নি। দিনেদিনে একটু একটু করেই গজিয়েছে। প্রতিদিনই তারা দেখে এসেছে, শুনে এসেছে, পড়ে এসেছে সব ধরনের সাফল্যের কথা। কম সময়ে কোটিপতি হওয়ার কথা। অর্থপ্রাপ্তিই বড় কথা। আনন্দলাভই জীবন। অপরাধ করে, দুনীতি করে কোটিপতি হয়ে কেউ শাস্তি পেয়েছে একথা একবারও শোনা যায়নি। ধরা পরেছে এমন কথাও না। কাজেই আমি করলে দোষ কোথায়। আমাকে ধরবে কে ? হলিউডের ছবি দেখি না! হিটম্যান গেম খেলি না!
বাংলাদেশের পুলিশ, ওরা তো ফুটপাতের দোকান থেকে ৫ টাকা করে চাদা উঠায়।
এটাই মুল কথা। সারাদেশে এত অপরাধ হচ্ছে আর আমি একটাকিছু করতে পারব না। শিক্ষাপ্রতিস্ঠান নাকি ছাত্রী পাঠায় নেতাকে খুশী করতে। তাও আবার দেশসেরা শিক্ষাপ্রতিস্ঠান। আমি কম কিসে ? আমার কি অধিকার নেই ?
সমাজের জন্য আমাদের রাজনীতির সবচেয়ে বড় উপহার এটাই। নিয়মকানুন-আইন-পুলিশ মানার প্রয়োজন নেই। ক্ষমতা লাভ কর। ক্ষমতা ব্যবহার কর। এটাই জীবন। জীবন উপভোগ কর।

0 comments:

 

Browse