বিষ্ফোরন

Apr 18, 2010
একসময় বামপন্থীদের ভাল অবস্থা ছিল। মানে, আমি বামপন্থী একথা বলে বেশ আসর জমানো যেত। রীতিমত কদর পাওয়া যেত। কেউ কেউ আবার এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সেই বামপন্থী মতবাদ প্রচারের কাজেও লেগেছিলেন। একেবারে সহজ সরল ভাষায় তাদের বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের বই লেখা হোত। ছাপা হোত। বিক্রিবাট্টাও হয়ত ভালই ছিল। উদাহরন দিয়ে দেখানো হোত কেমন করে, কতদিনে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।
যেমন ধরুন পদার্থবিদ্যার উদাহরন। আজকাল অনেকেই যে গুনগত পরিবর্তনের কথা জোরেসোরে বলেন তার উদাহরন।
একটি পাত্রে পানি রাখিয়া মুখ বন্ধ করিয়া উত্তপ্ত করুন। তাপ প্রয়োগের সাথেসাথে পানির উষ্ণতা বৃদ্ধি পাইবে। ইহা পরিমানগত পরিবর্তন। তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রীতে পৌছাইলে পানি বাষ্পে পরিনত হইবে। ইহা গুনগত পরিবর্তন। যদি বাষ্প বাহির হওয়ার পথ না থাকে তাহা হইলে পাত্রটি বিষ্ফোরিত হইবে। বিষ্ফোরন ঠেকাইতে হইলে বাষ্প বাহির হওয়ার পথ করিয়া দেওয়া প্রয়োজন, অথবা উত্তাপ কমানো প্রয়োজন।
বাস্তবের সাথে মিল করে দেখানো হত এই সুত্র। শাসক যদি এমন আচরন করেন যারফলে মানুষ অসন্তুষ্ট হয় তাহলে তাদের সেই অসন্তুষ্টি তাপমাত্রার মতই বাড়তে থাকে। এইই পরিমানগত পরিবর্তন। অসন্তুষ্টি বিশেষ পর্যায়ে পৌছালে সেখানেও বিষ্ফোরন ঘটে। বিষ্ফোরন এড়ানোর জন্য পাত্রে ফুটো করার উপযোগি ক্যাডার বাহিনী ব্যবহার করতে হয়। অথবা সন্তুষ্টি বাড়ানোর কাজ করতে হয়।
আজকাল কিছু মানুষ অসন্তুষ্ট হয়ে পথে নামছে। মানববন্ধন করছে, মিছিল করছে, শ্লোগান দিচ্ছে। কে জানে, হয়ত এটা পরিমানগত পরিবর্তন। পরিমান হয়ত বাড়তির দিকে। সরকার বলছেন ধৈর্য্য ধারন করুন। প্রধানমন্ত্রী বলছেন তিনি নিজের হাতে সুইচ বন্ধ করেন, আপনারাও সুইচ বন্ধ রাখুন। ধৈর্য্যহারা হয়ে পথে নামবেন না।
বাঙালীর ধৈর্য্য সবসময় প্রশংসনীয়। সাত চড়েও রা কাটে না। একগালে চড় দিলে আরেক গাল এগিয়ে দেয়। ৯ বছর আন্দোলন করে, বহু জীবন দিয়ে এরশাদ সরকারকে সরানো হয়েছে। সেদিন কারো ওপর রাগ দেখানো হয়নি। এককথায় তাদের মাফ করে দেয়া হয়েছে।
কিন্তু ওইযে গুনগত পরিবর্তন। সেটা ভয়ের কারন বৈকি। সেটা যে এখনো বাকি।
ট্যাপে পানি নেই, বিদ্যুতের অভাবে বাতি জ্বলে না, ফ্যান ঘোরে না, গ্যাসের অভাবে চুলা জ্বলে না, এগুলো বাঙালীর ধৈর্য্যচ্যুতির কারনে সহায়তা করতে পারে কিন্তু মুল কারন অন্যখানে। তাদের সামনে একজন রাতারাতি শতকোটি টাকার মালিক হচ্ছে, কোটি টাকার গাড়ি হাকাচ্ছে, খুন করে নিজেই খুনের মামলা তুলে নিচ্ছে, এসব ঘটছে তাদের চোখের সামনেই। কোন রাখঢাক নেই। পত্রিকায় খবর দিয়েছে প্রতি ৮ সেকেন্ডে একটা এই হারে মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। এগুলি দৈর্য্যচ্যুতির তাপমাত্রা বাড়াতেই পারে। একসময় তা বিষ্ফোরন ঘটাতেও পারে।
আর একবার ক্ষমা করার ফল যখন জানা তখন আরেকবার বিষ্ফোরনের সময় ফল অন্যরকম হতেও পারে। গুনগত পরিবর্তনের কথা যখন বলছে সকলে।

0 comments:

 

Browse