অভিযান

Apr 7, 2010
একসময় অভিযান নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি ছিল না। শতশত বই লেখা হয়েছে অভিযান নিয়ে। আফ্রিকার দুর্গম অঞ্চলে অভিযান থেকে শুরু করে উত্তর মেরুর তুষার অভিযান পর্যন্ত প্রতিটি বর্ননা মানুষ খুটিয়ে খুটিয়ে পড়ত। অন্তত কিশোর বয়সীরা তো বটেই। তারপর, জয় করলে যেমন আগ্রহ হারিয়ে যায় তেমনভাবেই আগ্রহ মিইয়ে গেছে। এখন আর জয় করার মত নতুন কিছু নেই। চাদ পর্যন্ত দেখা হয়ে গেছে। আর বাকি কি ?
কাজেই ওসব অভিযান-টভিযান বাদ। একেবারে বইয়ের পাতা থেকেও। এমনকি টিভি-সিনেমার পর্দা থেকেও। তারচেয়ে বরং জীবন নিয়ে ভাবা যাক। জীবন মানেই প্রেম। প্রেমই জীবন। গল্প-উপন্যাস-গান-নাটক-সিনেমা এসব তো তাই নিয়েই হবে। সাক্ষাকারে যখন টিভি নাট্যকর্মী বলেন নাটকে আমরা প্রেমঘটিত সমস্যার সমাধান দেই তখন সত্যকথাই বলেন। সব ধরনের শিল্পকর্ম-চিন্তাভাবনা-বক্তব্য-বিবৃতি এসব তো নিখুত প্রেম শেখানোর জন্যই।
কিন্তু কম্বলকে ছাড়লেও কম্বল ছাড়েনা। অভিযান নামে একটা শব্দ যখন তৈরী হয়েই গেছে তখন তাকে কি ভুলে যাওয়া যায় ?
এখানে সেখানে ব্যবহার করতেই হয়। প্রয়োজনে সেই ক্লাসিক অভিযানের বাইরেই অন্য কাজের নামকরন করা যায়। নামকরন বিষয়টি খুবই গুরুত্বপুর্ন। ওটাই সম্বল। একজন শিশু ভুমিষ্ঠ হওয়ার পর একটা নামের মালিক হয়। একদিন প্রাকৃতিক নিয়মে সে বিদায় হয় কিন্তু নাম থেকে যায়। ওটা পৃথিবীর বস্তু, পৃথিবীতেই থেকে যায়। ভাল কারনেই হোক আর অন্য কারনেই হোক।
কাজেই নামকরনের বিষয়টি গুরুত্বে সাথে দেখতে হয়। যেমন একসময় জেহাদ নামটা ব্যবহার করা হত নানা কাজে। অশিক্ষার বিরুদ্ধে জেহাদ, দারিদ্রের বিরুদ্ধে জেহাদ ইত্যাদি। কিন্তু তাতে অনেকেরই আপত্তি। বিশেষ করে ওই আমেরিকার। ওতে ধর্মের গন্ধ পাওয়া যায়। সন্ত্রাসের গন্ধ পাওয়া যায়। সাথেসাথে ক্রুসেড নামটা চলে আসে। তখন পাল্টাপাল্টি। আর আমেরিকার সাথে পাল্টাপাল্টিতে যাবে কে ? সেটা পাল্টাপাল্টি না হয়ে শুধু পাল্টা হয়ে থেমে থাকে। সেদিক থেকে অভিযান অনেক ভাল নাম। কেউ বাধা দিতে আসছে না।
কাজেই মশক নিধন অভিযান, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযান, বিলবোর্ড-সাইনবোর্ড ভাঙ্গা অভিযান, ভেজাল বিরোধী অভিযান, ফুটপাত মুক্ত অভিযান, নদী দুখলমুক্ত অভিযান।
তালিকা অনেক লম্বা। প্রতিদিন আরো লম্বা হচ্ছে। আর হবে না-ই বা কেন ? পক্ষ যে অনেক। কেউ দখল করছে, কেউ সহায়তা করছে, কেউ সমর্থন যোগাচ্ছে, কেউ মধ্যস্থতা করছে, কেউ বিরোধীতা করছে, কেউ মামলা করছে, কেউ মামলার গুনে দুপয়সা কামাচ্ছে, কেউ পরিবেশ রক্ষা করছে, কেউ মানবতা রক্ষা করছে, কেউ নির্দেশ দিচ্ছে, কেউ নির্দেশ মানছে। সকলেরই আয়। গড়লেও টাকা-ভাঙলেও টাকা। কাজেই ভাঙাগড়ার খেলা চলবে এতে আর অবাক হওয়ার কি আছে। এইতো, শুরু হল বিলবোর্ড ভাঙা। একদিন এই এলাকায় আরেকদিন আরেক এলাকায়। সাথেসাথে কিছু মানুষের আয় বেড়ে গেল। ভাঙার জন্য লোক প্রয়োজন, কিছু মানুষের কর্মসংস্থান। ভাঙার পর সেগুলি কি কাঝে লাগানো হবে, কে পাবে, এতে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান। কে এসব তদারকি করবে তাতেও কর্মসংস্থান। কাজ কতটুকু ঠিক হল বলাও কর্মসংস্থান, ঠিক হল না বলাও কর্মসংস্থান।
ভাঙার পর আবার গড়ার পালা। নতুন ডিজাইন, নতুন প্লান, নতুন বোর্ড-ইট-কঠি-লোহা-সিমেন্ট, নতুন কর্মী। আরো বহু মানুষের কর্মসংস্থান। আবারো নতুন করে শুরু।
আর ফুটপাত মুক্ত করার অভিযান!
সে আরো সহজ। ফুটপাত অনেক লম্বা। পুলিশের গাড়ি এসে আগের দিন জানিয়ে যায়, কাইলকা আমুনে। কয়দিন চুপচাপ থাক।
তা না জানিয়ে উপায় কি ? দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক খরচ তো ওরাই দেয়। বেতনের টাকায় সিগারেটের পয়সাও হয় না। কৃতজ্ঞতা বলে একটা কথা আছে। ধর্মেও কইছে তোমরা---
কাজেই অভিযান চলতেই থাকে। আজ এখানে, কাল ওখানে, পরশু সেখানে। চলছেই-চলবেই
প্রাচীনকালের মানুষ আসলেই বোকা ছিল। খামোখাই বনে-জঙ্গলে-মরুতে-মেরুতে প্রান দিতে গেছে। ঘটে বুদ্ধি থাকলে দিব্বি এই সমাজেই অভিযান চালিয়ে জীবন কাটাতে পারত।

0 comments:

 

Browse