একেবারে পানির দামে

Apr 3, 2010
একসময় লোকে বলত পানির দাম। তারমানে এর দাম এতই কম যা প্রায় পানির মত বিনামুল্যে পাওয়া যায়। বঙ্গবাসি, বিশেষ করে ঢাকাবাসি খুব ভাল করেই জানেন পানির মুল্য কতটা। মাস মাস টাকা দেবেন, পানি পাবেন সে নিশ্চয়তা কেউ দেয়নি। যা পাবেন তাতে কেচোর মত জীবন্ত প্রোটিন থাকতে পারে। কোন আপত্তি করবেন না। আর যদি পছন্দ না হয়,
পত্রিকায় কফিনের ছবি দিয়ে কার্টুন ছাপা হয়েছে, মরিয়া বাচিলাম। পানি-বিদ্যুত-গ্যাস সঙ্কট হইতে-
আর যাই হোক অন্তত পানির সাথে তুলনা একেবারেই বেমানান। তাই বলে বিনামুল্যের কিছু নেই এটাও একেবারে বাড়িয়ে বলা। কথার বাড়াবাড়ি। কপিরাইট আইনে বলেছে আপনি যাই সৃষ্টি করুন না কেন তার কপিরাইট আপনার। অনুমতি ছাড়া ব্যবহারে জেল-জরিমানা হইতে পারে। কোন লেখা থেকে দুলাইন টুকলি করবেন, সাথেসাথে মামলা। বিনামুল্যে ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই।
বিনামুল্যে একটা কাজ নিশ্চয়ই করতে পারেন। উপদেশ বিতরন। কারো লেখা থেকে উপদেশ নিয়ে যদি ইচ্ছেমত বিতরন করেন সেই অপরাধে লেখক-প্রকাশক তেড়ে আসবেন না। বরং খুশিই হবেন। বক্তব্যের সুচনাও সেকারনেই।
আমরা উপদেশ পছন্দ করি। বলতে এবং শুনতে। আজকাল ঈশপ-বিশপের যুগ নেই। এমনকি বিদ্যাসাগর যে মনে করেছিলেন শিক্ষার শুরুতে হিতোপদেশ শিখাতে হয় সে চলও নেই। ওসব সেকেলে ধ্যানধারনা দিয়ে ডিজিটাল রাষ্ট্র চলে না। ডিজিটাল রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজন ডিজিটাল উপদেশ। এবং সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী সে দায়িত্ব পালন করবেন বইকি!
তিনি বলেছেন আপনারা বিদ্যুত ব্যবহারে মিতব্যয়ী হোন। বিদ্যুত সাশ্রয় করুন। সরকার দুঘন্টা করে লোড সেডিংএর ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে, আপনারা বাকি দুঘন্টা নিশ্চিত করুন। ধৈর্য্য ধারন করুন। ধৈর্য্য মহত গুন। আপনারা মহত্বের পরিচয় দিন। দেশকে এগিয়ে নিন। চীনদেশে নাকি প্রতি ৩ দিনে একটা করে নতুন বিদ্যুতকেন্দ্র চালু করা হয়। আমরাও করছি। এইতো, সিলেটে বেসরকারীভাবে ভাড়া করা বিদ্যুতকেন্দ্র উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এটা শুরু। এরপর হবে শতশত, হাজার হাজার, লাখে লাখে। ঘরেঘরে বিদ্যুতকেন্দ্র-
বিদ্যুত-পানি-গ্যাস ছাড়াও মানুষের প্রয়োজন অনেক। তারমধ্যে খবরের কাগজ একটি। সকলেই যে বিদ্যুতের অভাবে হাতপাখা বানানোর জন্য মোটা দেখে কাগজ কেনেন এমন তো-না। বরং সেটা যা খেয়ে মোটা হয়েছে সেখানেও দরকারী তথ্য থাকে। বাড়িভাড়া, মাসিক কিস্তিতে বাড়ি, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি, পাত্রি চাই, গ্রীষ্মকালীন অফার সবই ছাপা হয়। কাজেই এর মাধ্যমে বহু মানুষের কাছে পৌছানো যায় সহজেই। জনপ্রিয় সংবাদপত্রের সম্পাদকসাহেব বাকি দায়িত্বটুকু পালন করলেন সম্পাদকীয় লিখে।
সরকার সম্ভাব্য সবকিছু করছে। জনগনের উচিত ধৈর্য্য ধারন করা। সরকার সময় চেয়েছে এরচেয়ে যুক্তিসঙ্গত বক্তব্য হতেই পারে না। আর চারদলীয় সরকার দেশের বিদ্যুত-গ্যাস-পানি ধ্বংশ করে গেছে এরচেয়ে সত্য আর কি হতে পারে। আপনারা ধৈর্য্য ধারন করুন। অকারনে গোলযোগ করবেন না।
উপদেশের চেয়ে রায়ের সাথে মিল বেশি মনে হতে পারে। তথ্য-উপাত্ত-সাক্ষী-প্রমান বিশ্লেষন করে রায় ঘোষনা করা হইল,
কিন্তু সেটা ভুল। আসলে এটা উপদেশই। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য পরামর্শও বলতে পারেন। কিংবা দেশের মংগলের জন্য আহ্বানও বলতে পারেন। সবাই সচেতন হোন। নিজেকে বদলান, সমাজ বদলান, দেশ বদলান।
খটকা একটুখানি। উপদেশ বিনামুল্যের এই যুক্তি বোধহয় পুরোপুরি টেকে না।

0 comments:

 

Browse