সুইসাইড না হোমিসাইড

Apr 4, 2010
বখাটে তরুনের উপাত সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে কিশোরী, এধরনের খবর ছোট করেই ছাপা হয়। খবরের কাগজে যায়গার অনেক দাম। বিজ্ঞাপন ছাপলে ইঞ্চি হিসেবে টাকা পাওয়া যায়। কারো পক্ষে-বিপক্ষে লিখলে রীতিমত অক্ষর গুনে। খবর লিখে যায়গা ভর্তি করে লাভ আছে! তাছাড়া এতে নতুনত্বই বা কি ? কদিন আগেই তো একই খবর ছাপা হয়েছিল। তারো কদিন আগে আরো একটা। এমন তো ঘটেই। এনিয়ে হাউকাউ করার কি আছে ?
কদিন আগে এক পশ্চিমা ভদ্রলোক বলেছিলেন সরকারী দলের লোক ধর্ষন করেছে জানার পরও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, এটা দুঃখজনক। তারা দুঃখ প্রকাশ করতেই পারেন। তাতে তো পয়সা লাগে না। ক্ষমতায় থাকলে মানুষ একটু আধটু অমন করেই। আর আজকাল এসব সেকেলে বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায় কে ? সমাজ-সভ্যতা উন্নত হয়েছে। ফ্রি সোসাইটিতে ছেলেমেয়ে একসাথে চলবে এটাই তো স্বাভাবিক। টিভি দেখেন না ? ডিভিডি দেখেন না ? ইন্টারনেট দেখেন না ?
আসলে দোষটা ওই মেয়েরই। একটু মানিয়ে নিলে কি ক্ষতি ছিল। বন্ধুত্ব করলেই সব মিটে যেত। খবরের কাগজে যায়গা দখল করত না। আর কিছু লোক বসেই আছে সরকারের ভাবমুর্তি, দেশের ভাবমুর্তি নষ্ট করতে। দেশকে হেয় করতে একপায়ে খাড়া।
প্রশ্ন করবেন ? কাকে ? যারা দেশ চালাচ্ছে, সমাজ চালাচ্ছে তাদের ?
তাদের মুখে তৃপ্তির হাসি লেগেই রয়েছে। সাফল্যের বর্ননায় কথার ফুলঝুড়ি ছুটে চলেছে। ওইসব ছোটখাট ব্যাপার ছাইড়া বড় বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দ্যান। জানেন দ্যাশ কত উন্নত হইছে। কয়দিন পর মধ্যম আয়ের দ্যাশে পরিনত হইব। সবাই কইতাছে।
কি কন! হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুষ নিরবে চাকরী হারাইতাছে ? কারখানা মালিক-ব্যবসায়ী চক্ষে অন্ধকার দ্যাখতাছে ? গ্যাস-বিদ্যুত-পানির অভাবে মানুষের নাভিস্বাস উঠতাছে ?
ওইসব বাজে কথা। খারাপ ছাইড়া ভালর দিকে চান। ওইযে ডাষ্টবিনের পাশের ন্যাংটা পোলাডারে দ্যাখেন জাতিয় পতাকা হাতে পাইয়া কেমুন হাসতাছে। মাথায় লাল-সবুজ টুপি লাগাইছে। এইডারে কয় স্বর্গিয় সুখ। এইজন্যই তো স্বাধিনতা। এইজন্যই তো চল্লিশ বছর আগে দ্যাশ স্বাধিন করছি। স্বাধীনতার মুল্য বোঝেন। আর সেইসময় যারা রাজাকারী করছে তাগো বিচার করতাছি। এইসময় এইসব ফালতু কথা কইয়া ডিসটার্ব কইরেন না।
কিছুই বলার নেই।
যদি বিবেক বলে কোনকিছুর অস্তিত্ব থেকে থাকে তাহলে নিজেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, একটা সমাজ কতটা অসভ্য হলে একজন মেয়ে বখাটের অত্যাচারে বিরক্ত হয়ে আত্মহননের পথে যেতে পারে। পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সমাজ, প্রশাসন, রাষ্ট্র কেউ তাকে এই অত্যাচার থেকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনা, সামান্যতম নিশ্চয়তা দিতে পারেনা। যার সামনে একটাই পথ, জীবন দেয়া। মাথা নত না করা। সমাজ নিজেই যখন মেরুদন্ড হারিয়ে মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে তখন তার পাশে দাড়াবে কে ?
রবীন্দ্রনাথের নায়িকা জীবন দিয়ে প্রমান করেছিল সে মরেনি। তাকে জীবন দিয়ে প্রমান করতে হল সমাজ কতটা মেরুদন্ডহীন। কতটা বিকৃত।
এটা আত্মহত্যা না, খুন। বিকৃত সমাজ তাকে হত্যা করেছে।

0 comments:

 

Browse