অনেকেরই হয়ত জানা নেই প্লাষ্টিক সার্জারি নামের অস্ত্রপচারের ব্যবস্থা চালু হয়েছিল ভারতবর্ষে।
একসময় অপরাধীকে শাস্তি দেয়ার জন্য তাকে জনসমক্ষে হেয় করতে নাক কেটে দেয়া হত। তাকে দেখলেই লোকে জানত সে অপরাধ করেছে। এরই প্রতিকার করতে ওই প্লাষ্টিক সার্জারী। অবশ্য তখনকার প্রযুক্তি নতুন নাক লাগিয়ে দেয়ার মত উন্নত ছিল না, কপালের দিকের চামড়া কেটে তাকে উল্টো করে ঢেকে দেয়া হত কাটা নাকটি। অন্তত কিছুটা হলেও জনসমক্ষে মান রক্ষা পেত।
নাক কাটার মত কান কাটাও ছিল আরেক শাস্তি। ধরে নেয়া যায় তুলনামুলক কম অপরাধের জন্য কান কাটা হত। ছোট অপরাধের জন্য এককান, বড় অপরাধে দুকান। বড় অপরাধী যেহেতু বেশি নির্লজ্জ সেহেতু বাংলায় প্রবাদ চালু হয়ে রয়েছে, এককান কাটা পথের ধার দিয়ে চলে, দুকান কাটা পথের মাঝখান দিয়ে চলে। সাধারনভাবে কানকাটা শব্দের অর্থ লজ্জাহীন ব্যক্তি। কাজেই আরেক প্রবাদ, নিজের মান নিজে রাখি, কাটা কান চুল দিয়ে ঢাকি।
আজকাল অপরাধের জন্য কান কেটে লজ্জা দেয়ার প্রচলন নেই। সেটা বর্বরতা। সামাজিকভাবে লজ্জা দিয়ে অপরাধ কমানোর নীতিতেও মানুষ বিশ্বাস করে না। বরং সত্যিসত্যি কান কাটা না গেলেও অনেকেরই আচরন দুকান কাটা ব্যক্তির মত। তারা পথের মাঝখান দিয়ে চলেন। অন্যদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে।
একই কথা পুনরাবৃত্তি করতে হচ্ছে। প্রফেসর ইউনুস বিশ্বকে দেখিয়ে কিভাবে দরীদ্রের মধ্যে দরীদ্রতমদের কাছেও ব্যবসা করা যায়। যাদের দিকে ব্যাংক ঘুরে তাকায় না, সরকার তাকায় না তাদের কাছে অন্য ব্যাংকের চেয়ে দ্বিগুন-তিনগুন বেশি সুদ নেয়া যায়। পশ্চিমারা একে তুলনা করছেন বিল গেটস, ষ্টিভ জবস এর মত উদ্ভাবনী প্রতিভার সাথে। এভাবেই নতুন কিছু করে নাম কুড়াতে হয়। নোবেল কমিটিও পিছিয়ে নেই। তারাও স্বীকৃতি দিয়েছে শান্তি পুরস্কার দিয়ে। অবশ্য নোবেল শান্তি পুরস্কার নামের এই বিদঘুটে পুরস্কার নিয়ে আপনি আপত্তি তুলতে পারেন। অন্তত এই তালিকায় যখন সাধারনভাবে কৃখ্যাত ব্যক্তিদের নামও রয়েছে, মহাত্মা গান্ধি যেখানে পাত্তা পাননি। সেটা অন্য বিষয়।
কথা হচ্ছে, পশ্চিমারা যাকে একবার স্বিকৃতি দিয়েছেন, তাকে মাথায় তুলেছেন, তার অনুকরনে ব্যবসা শুরু করেছেন তাকে এত সহজে গালাগালি করা যায় না। লাভ মাত্র শুরু হয়েছে। কাজেই তাকে যখন গ্রামীন ব্যাংক থেকে অব্যবহি দেয়া হল সাথেসাথে তারা মুখ খুললেন।
আপনি প্রশ্ন করতে পারেন গ্রামিন ব্যাংক ২% সুদে ঋন দেয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে ৪০% এর বেশি সুদ নেয়ার দোষ একা তার কিনা, যেখানে ব্যাংক বহাল তবিয়তে রয়েছে এবং থাকবেও। এটা মানুষকে দারীদ্র থেকে ধনীতে পরিণত করছে। আর তিনি নিজে আর যাই করুন, ভোগবিলাসী জীবনযাপন করেন না। বরং তাকে বাদ দিয়ে সেই ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনাই তো প্রয়োজন ছিল। কিন্তু প্রয়োজন হিসেব করে কাজ করে কে ?
যাকগে সেসব কথা। ফ্রান্সের বাংলাদেশী প্রতিনিধি গর্বের সাথে বলছেন, প্রফেসর ইউনুসের সততা দেখেই বিশ্বসেরা ফ্রান্সের কোম্পানী বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে। তারা চান না তাকে হেনস্থ করা হোক। কথায় কথায় এটুকু জানাতে পারি, গ্রামীন বাংক ৪৬টি কোম্পানীর মালিক যারমধ্যে ফ্রান্সের সাথে যৌথভাবে দই তৈরীর কোম্পানীও রয়েছে। তাদের নামে ভেজাল খাবার তৈরীর অভিযোগে মামলা চলছে কোর্টে।
সেটাও যাকগে। পশ্চিমা কুটনীতিক বলে কথা। তারসাথে তাল না রাখলে দেশ কোন বিপদে পরে কে জানে। কাজেই অর্থমন্ত্রীকেও মুখ খুলতে হয়।
তিনি ঘোষনা দিলেন, গ্রামীন ব্যাংকের সুদের হার অন্য ক্ষুদ্রঋনদাতাদের থেকে গ্রহনযোগ্য। তারা যা করছে জনগনের ভালর জন্যই করছে। গ্রামীন ব্যাংকের কোনরকম ক্ষতি যেন না হয় সেদিকে সরকারের দৃষ্টি রয়েছে। অন্য যারা রয়েছেন তাদের দিকেই বা দৃষ্টি দেয়া যায় কিভাবে। আরেকজন সম্প্রতি নাইট উপাধি পেয়েছেন বৃটিশদের কাছে। একি যেমন তেমন কথা।
আর তো বলার কিছু নেই। এই অর্থমন্ত্রীই তাকে বিদেয় করেছেন গ্রামীন ব্যাংক থেকে। তখন নিশ্চয়ই জানা ছিল না ইউনুস এবং গ্রামীন ব্যাংক বাংলাদেশের জন্য কিংবা বিশ্বের জন্য কত উপকারি। সময় থাকতে জানা যখন গেছে তখন ...
এটাও যাকগে। সেই নাক-কানকাটার গল্পে ফেরা যাক। ব্যবস্থাটা মন্দ না। অন্তত এর গুনে যদি প্লাষ্টিক সার্জারীর মত প্রযুক্তি আবিস্কার হয়।
0 comments:
Post a Comment