ঝুলি যখন শুন্য

Apr 14, 2011
রবীন্দ্রনাথের তখন যথেস্ঠ বয়স হয়েছে। একদিন দেখা করতে গেছেন লেখক বনফুল। দেখলেন তিনি উবু হয়ে বসে লিখছেন। একটাই ঝুকে বসেছেন যে তিনি প্রশ্ন না করে পারলেন না, আপনি এতটা ঝুকে বসেছেন কেন ?
কবির উত্তর, পাত্রের পনি যখন কমে যায় তখন তাকে বেশি ঝুকাতে হয়।
রবীন্দ্রনাথের লেখার পাত্র কমে গিয়েছিল একথা তার পরম শত্রুও বলবেন না। এবিষয়ে তিনি বিশ্বে অপ্রতিদ্বন্দি। তারপরও, একটি চরম সত্য তিনি বলে গেছেন। পাত্রের বস্তু একসময় কমে যায়, একসময় শুন্য হয়।
নেতাদের ক্ষেত্রে একথা চিরসত্য। তাদের যাকিছু বলার তা তারা সহজেই বলে ফেলেন। একসময় আর দেয়ার কিছু থাকে না। এমন না যে তারা বলা বন্ধ করেন, বরং কথার পরিমান আরো বৃদ্ধি পায়। তাতে কোন বক্তব্য থাকে না। কিংবা এমন বক্তব্য তুলে ধরেন যেখানে বেশি শোকে পাথরের মত অবস্থা হয়।
ধরুন ওই শেয়ার বাজার কেলেংকারীর কথাই। কতকিছুই না ঘটে গেল। রাজপথ রণক্ষেত্র। লক্ষ লক্ষ মানুষ সর্বশ্রান্ত। ঢাকঢোল পিটিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার ব্যবস্থাও হল। তদন্ত করা হল, রিপোর্ট তৈরী হল। এদিক-ওদিক থেকে রিপোর্টের টুকরো-টাকরা খবরও বাইরে এল। কিন্তু মুল রিপোর্টের খবর নেই। একবার বলা হচ্ছে প্রকাশ করতে সময় লাগবে, তারপর মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখে আরেকবার বলা হচ্ছে এই তো এক সপ্তাহের মধ্যেই হবে। ওই হল বলে।
উত্তর শেষ হয় কিন্তু প্রশ্ন আর থামে না। শেষমেশ অর্থমন্ত্রী বলেই দিলেন, এক সপ্তাহে প্রকাশ করা যাবে না। কারন সেটা করতে বহুকপি প্রিন্ট করতে হবে।
মোক্ষম যুক্তি। এতকপি প্রিন্ট করতে সময় তো লাগবেই। আপনারা হাউকাউ করছেন কেন ? সংবাদপত্রের কর্মীরা বাহাদুরী নিতে পারেন নিজেদের কৃতিত্বে। তারা রাত ১২টা পর্যন্ত খবর সংগ্রহ করেন তারপর সকালের মধ্যেই লক্ষ লক্ষ কপি পৌছে দেন পাঠকের হাতে। কিন্তু ভুলে যাবেন না, এটা খবরের কাগজ না। এরসাথে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভাগ্য জড়িত। কাজেই
আরো তদন্ত করতে হবে।
আপনি নাছোরবান্দা হলে প্রশ্ন করতে পারেন, তারমানে কি এই যে এই তদন্ত কমিটি যা করেছে সেখানে গলদ রয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনীতি এবং আইনের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা কখনো আক্রমনাত্মক ভাষায় কথা বলেন না। অসভ্যতা করেন না। আপনি মিথ্যে বলছেন একথা বলা অসভ্যতা। বরং আপনি অসত্য বলছেন এটা সভ্যতা। তাকে মিথ্যেবাদি বলা হল না, আবার তার বক্তব্য মিথ্যে সেটাও বলা হল।
কাজেই, তাদের তদন্ত নিয়ে আমাদের প্রশ্ন নেই। তারা খুব ভাল কাজ করেছেন। আমরা আরেকটু খতিয়ে দেখতে চাই। এনিয়ে ফৌজদারী মামলা করা যায় কি-না এসব বিষয় আরকি। ভাববেন না, সামান্য পরিবর্তন হলেই সাথেসাথে সেটা প্রকাশ করা হবে। কার কার যেন নাম লেখা হয়েছে। আমরা নিশ্চিত না হয়ে কারো নাম প্রকাশ করতে চাই না।
নিন্দুকেরা নানাকথা বলেন সবসময়ই। অনেকেই বলেন অর্থমন্ত্রী জলে বাস করে কুমিরের সাথে লাগতে যাবেন না। তিনি মন্ত্রী ৫ বছরের, আর এইসব কুমিরের বাস যুগ যুগ ধরে।
কাজেই তার বক্তব্য সরাসরিই, সরকারের বাইরে থেকে মনে করতাম সিন্ডিকেট রয়েছে। সরকারে এসে দেখি এসব বিষয় এত সোজা না।
সাজানো বক্তব্যের ঝুলি সম্ভবত শেষ।

0 comments:

 

Browse