যে শ্লোগানে কাজ হয়

Apr 8, 2011
আর কোন দাবী নাই, ফুটপাতে থাকতে চাই। পুলিশের অত্যাচার, মানি না, মানব না। জয় বাংলা।
সকলের হয়ত এমন শ্লোগান শোনার সুযোগ হয় না। তাহলেও বুঝতে অসুবিধে হওয়ার কথা না। এই শ্লোগান এসেছে ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের মিছিল থেকে। সংখ্যায় কম না, হাজার হাজার।
যদি দেখার অভিজ্ঞতা না থাকে তাহলে একটু বর্ননা দিলে বুঝতে সুবিধে হতে পারে। ধরুন ফার্মগেট এলাকা। ফার্মভিঋ সুপার মার্কেট থেকে শুরু, এরপর ইন্দিরা রোড ধরে যতদুরই যান, ফার্মগেট বাজার। শাক-সবজী, মাছ-মাংশ, হাস-মুরগি, জামাকাপড়-জুতো, খেলনা, ঘড়ি-চশমা যা প্রয়োজন সবই পাবেন এখানে। সত্যি বলতে কি এরা একটু সৌভাগ্যবানই। পাশের মার্কেটগুলিতে যখন ঘন্টায় ঘন্টায় লোডসেডিং হয় তখনও তাদের আলো জ্বলে। সাপ্লাই আসে জেনারেটর থেকে। তার সেবার মান বিদ্যুত বিভাগের থেকে ভাল। দাম একটু বেশি নেয় ঠিকই, কিন্তু কখনোই লোডসেডিং হয়না। ক্রেতারাও কেনাকাটা করেন বেশ আরামে। মার্কের ভেতরের ভ্যাপসা গরম নেই, রীতিমত ফুরফুরে হাওয়ায় হেসেখেলে বাজার-সওদা করেন।
চাদের একপিঠে যতটা আলো অন্যপিঠে নাকি ততটাই কালো। এর খারাপ দিকও আছে। যেমন ধরুন ব্যবসায়দের কথা। পাশের মার্কেটের মত তাদের মাসমাস দোকান ভাড়া দিতে হয়না ঠিকই, কিন্তু দৈনিক ভাড়া, পুলিশের চাদা এসব হিসেব করলে ওই দোকানদের খরচ ছাড়িয়ে কয়েকগুন বেশি। ক্রেতাদেরও অভিযোগ রয়েছে। দিব্বি নেড়েচেড়ে দেখে ভাল জিনিষ কিনলেন, বাড়ি দিয়ে দেখলেন প্যাকেট থেকে বেরল ছেড়া-ফাটা। ফেরত গিয়ে অভিযোগ করবেন সে সুযোগ নেই। দেখলেই সেই বিক্রেতা সেই জিনিষ নিয়েই আছে কিন্তু আপনাকে সে এই জীবনে দেখেনি। আর আপনার হাতের জিনিষ সে জীবনেও বিক্রি করেনি। বেশি তর্ক করলে হাতাহাতি। জীবনের ঝুকি কে নেয় ...
সত্যিকারের অভিযোগ আসলে যারা ওইপথ দিয়ে চলাফেরা করেন তাদের। ধাক্কাগুতো না দিয়ে ওই যায়গাটুকু পেরনো যায় না। একমাত্র শক্তসমর্থ ব্যক্তিরাই যাতায়াত করেন ওই পথে। কেউ কেউ বলেন ওই যে রেলিংএর বাইরে যে রাস্তা রয়েছে সেখানদিয়ে কিছু মানুষ গেলেই তো এই গিট্টুটা কমে যায়। কিন্তু সেটা হবার না। ঢাকা শহরে আর কোথাও ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন না করুন, ওই রেলিং এর মাথায় দুএকজনকে সবসময় পাবেন। তারা কখনোই আপনাকে জীবনের ঝুকি নিয়ে রাস্তার পাশে যেতে দেবে না। নিতান্তই যদি নাছোরবান্দা হন তাহলে অবশ্য কষ্ট সহ্য করে একপাশে দাড়িয়ে সেই দায়িত্বশীল ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালনের নমুনা পর্যবেক্ষন করতে পারেন। দেখবেন সেই রাস্তায় রিক্সা চলার কোন সুযোগ নেই, বহুপথ ঘুরে রাজাবাজার হয়ে যেতে হয়, সেই পথ দিয়েই রিক্সা পার হচ্ছে। যাবার সময় খুশী হয়ে ট্রাফিক পুলিশের সাথে হ্যান্ডশেক, তারপরই পুলিশের হাত চলে যায় পকেটে।
যাহোক, বলছিলাম অভিযোগের কথা। এসব অভিযোগের কারনে কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে হয়। দেশ পরিচালনার দায়িত্ব যখন তাদের হাতে। জনগন ম্যান্ডেট দিয়েছে। তারওপর ক্রিকেট বিশ্বকাপ। সারা পৃথিবীর মানুষ দেখবে ঢাকা শহরের এই অবস্থা, তা-কি হয়!
কাজেই ফুটপাতের দোকান বন্ধ।
ক্রিকেট খেলা শেষ। আবারও দোকান চালু হওয়ার কথা, ব্যবসার চাকা ঘোরার কথা, পুলিশের আয় হওয়ার কথা। সেটা না হওয়াতে ওই মিছিল।
আপনি হয়ত বলতে পারেন, আহা বেচারা, এতকিছু থাকতে ফুটপাতেই থাকার আগ্রহ। কেন-রে বাবা, সরাসরি বললেই তো পার চাকরী চাই। সেজন্যই তো এত বাহাদুরী করে ক্ষমতায় গেছ। নিজেরা শতকোটি-হাজারকোটি টাকা পকেটে ঢুকাচ্ছ আর গলাবাজি করছ। দেশকে একেবারে বিদেশ বানিয়ে ফেলেছ আর দেশে কয়েক কোটি মানুষ বেকার। আমাদের ভাগ কোথায়। বসে বসে টাকা চাইনা। কাজের যায়গা দেখিয়ে দাও কাজ করি।
বাঙালী সেকথা বলতে ভুলে গেছে। তাদের দাবী একটাই, ফুটপাতে থাকতে চাই।
দাবীতে কাজ হয়। কারন পরদিনই পুরোদমে বাজার চালু হয়ে গেছে।

0 comments:

 

Browse