শেখা যায় দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই

Apr 7, 2011
ভোরবেলা দুই ব্যক্তি গেছে পুকুরঘাটে গোছল করতে। একজন সারারাত প্রার্থনা করেছে, অপরজন করেছে চুরি। কাজেই চোরের দৃষ্টিভঙ্গি, ব্যাটা সরারাত চুরি কইরা অহন আইছে গোছল করতে। গোছল করলে পাপ যাইব!
আর উপাসনাকারীর চিন্তায় কাজ করছে, আহা, বেচারার এখনও বেশি বয়স হয়নি। এখনই ধর্মচিন্তা করে সারারাত কাটিয়েছে।
এটা পুরনো গল্প। কমবেশি সবারই জানা। কমবেশি সবাই মেনেও চলে।
ওয়ে যে ধরুন না, বাংলায় ফেসবুক গড়ি প্রকল্প (বাংলায় হয়ত মুখবই হওয়ার কথা ছিল)। আপনারা দলে দলে যোগ দিন। সারা বিশ্বের ছড়িয়ে দিন আমাদের ভাষা। এই ভাষার জন্য মানুষ জীবন দিয়েছে। বিশ্ব পেয়েছে মাতৃভাষা দিবস।
তারপর! ছবি আপলোড করুন। তরে ওই ছবিতে খুব সুন্দর লাগতাছে। আরো কয়ডা আপলোড কর।
এটা একধরনের দৃষ্টিভঙ্গি। আরেক ধরনের দৃষ্টিভঙ্গিও রয়েছে। মিসরে তাহরীর স্কয়ারে লাখ লাখ মানুষ সমবেত হয়েছিল। তাদের দাবী, গনতন্ত্র চাই। মোবারক সরকারকে বিদায় নিতে হবে। মোবারকের লোকেরা সেখানে হামলা করেছে, পুলিশ হামলা করেছে কিন্তু তাদের টলানো যায়নি। দিনের পর দিন তারা যায়গা ধরে রেখেছে। বিবিসিও ক্যামেরা নিয়ে অবস্থান ধর্মঘট করেছিল বলেই দিনরাত সরাসরি দেখা গেছে তাদের। তাদের পরিচয়, ফেসবুক প্রজন্ম।  ফেসবুকের মাধ্যমে তারা নিজেদের সাথে যোগাযোগ করে ঠিক করেছে কিভাবে দেশকে ভালোর দিকে নিতে হবে। ফেসবুক কিংবা মুখবই ব্যবহারের আরেক দৃষ্টিভঙ্গির উদাহরন তো বটেই।
কিংবা ধরুন পত্রিকায় খবর বেরুল, অমুক তারকার নগ্ন ভিডিও ইন্টারনেটে প্রকাশ পেয়েছে। সাথেসাথে লাইন পরে গেল সিডির দোকানে, ওই ভিডিওডা আছে ? দ্যানতো। কত ট্যাকা লাগবো ?
এটা অবশ্যই একধরনের দৃষ্টিভঙ্গি। আরেক ধরনের দৃষ্টিভঙ্গিও রয়েছে। সেকথা বলার আগে বাংলাদেশের মিডিয়া সম্পর্কে একটা কথা বলে নেয়া উচিত। বিবিসি-র মত সংবাদ মাধ্যম সরাসরিই বলে তারা খবর বের করে চামড়ার ভেতর থেকে। আর বাংলাদেশের খবর অনেকটাই কান নিয়েছে চিলে শুনে চিলের পেছনে দৌড়ানোর মত। আর চিল যেহেতু সবসময়ই ওকাজ করে সেহেতু তাদের ছোটাছুটিরও কমতি নেই। একদিকে কয়েকপা দৌড়ে যাবার পরই খবর আসে আরেকদিকে আরেক খবরের। কাজেই সেদিকে ছুট। কোন খবরের চিলই ধরা দেয় না।
এখানে অবশ্য সেটা ঘটেনি। অন্তত সাম্প্রতিক সময়ে দুটি খবরের কথা মনে করতে পারি, দুজন তারকার নগ্ন ভিডিও প্রকাশের খবর যেমন ছাপা হয়েছে তেমনি তার ফলও ছাপা হয়েছে। দুজনেই কাজের সুযোগ হারিয়েছেন। যেহেতু তারকা ছিলেন সেহেতু বলতে পারেন তারকা আকাশ থেকে খসে পড়েছে।
বাকিটুকুর জন্য প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গি। তারা শুধু তাদের সেই পদ হারাননি, হারিয়েছেন বাকি জীবনের সমস্ত কাজের সুযোগ। তারা আর কখনোই তারকা হবেন না।
ইন্টারনেটে একটা ভিডিও প্রকাশের সুযোগ করে দেয়া আর বিনিময়ে সারা জীবনের জন্য পর্দার আড়ালে চলে যাওয়া কোনটি লাভজনক মাপার জন্য দাড়িপাল্লা প্রয়োজন নেই। দৃষ্টিভঙ্গিই যথেষ্ট।
অমুকে থমুকভাবে দুর্নীতি করে অতকোটি টাকা বানিয়েছে, এর দৃষ্টিভঙ্গিও দুরকম। আপনি ভাবতে পারে, আহা ওই টাকাগুলো সত্যিকার কাজে লাগালে দেশের কতটা উপকার হত। টাকাগুলোতো আসলে জনগনেরই। আমরাই তো ট্যাক্স দেই।
কিংবা অন্যদৃষ্টিতেও দেখতে পারেন। ওই ব্যাটা সুযোগ পাইল ক্যামনে ? ক্যামনে পথঘাট বাইর করছে, খোজ লাগা তো। দেহি আমি পারি কি-না। হ্যায় পারব আর আমি পারমু না এইডা কোন কথা। আমি কম কিসে ?
যা খুশি শিখতে পারেন। সে অনুযায়ী দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক করে নিন।

0 comments:

 

Browse