নববর্ষে ঢাকার হালখাতা

Apr 18, 2011
একসময় চীনাদের নিয়ে কেউ মাথা ঘামাত না চার হাজার বছরের পুরনো সভ্যতা তাতে হয়েছে কি ? ওরা খেতে পায় না সাপ-ব্যাঙ, তেলাপোকা-টিকটিকি সব খায় তার ওপর কম্যুনিষ্ট এখন অবশ্য সেই দুর্নাম ঘুচে গেছে চাইনিজ মানে অভিজাত খাবার তারওপর আবার অর্থনীতিতে জাপানকে ছাড়িয়ে আমেরিকা ছুইছুই করছে ওদের খবর না রাখলে কি চলে ওরা কিভাবে নববর্ষ পালন করে সেটা এখন বিশ্বখবর আর তারাও সেটা পালন করে ঘটা করেই রীমিতমত সপ্তাহজুড়ে তাদের নাকি সবচেয়ে বড় উতসব
নতুন বছরের হিসেব অন্যদেশেও হয় বাংলাদেশেও দেশের বহু স্থানে মেলা হয় এই সময় কাঠের, মাটির, পাটের তৈরী নানারকম জিনিষপত্র বিক্রি হয় গান-বাজনা হয় নাগরদোলা-চড়কি কতকিছু ব্যবসায়ীদের জন্য মহাখবর সারা বছরের বকেয়া ফেরত পাওয়া যায় হালখাতার নামে আবার নতুন হিসেব শুরু হবে নতুন খাতায়
ঢাকাবাসীরাই বা বাদ থাকবে কেন ? আমরা কম কিসে ??
কাজেই, উতসব করা চাই সবার আগে খাওয়া দাওয়া পান্তা খেতে হবে ইলিশ দিয়ে একেবারে অভিজাত যায়গায়, আমেরিকান ইতালিয়ান কাড়ির নিয়মে পিজাহাট-কেফসিতে ১৪১৮ সাল বরন করবেন ১৪১৮ টাকার পান্তা ইলিশ খেয়ে খুব সস্তা হয়ে গেল কি ? বছরপ্রতি ১ টাকা তা হোক, বছরে একটা দিন তো!
খান বা না খান, বৈশাখী পোষাক তো পড়বেন মেয়েদের জন্য শাড়ি, ছেলেদের ধুতি লাল পাড় সাদা শাড়ি পড়ার ধরনও গ্রামের মেয়েদের মত সাথে নাকে-কানে-হাতে-পায়ে-গলায়-চুলে যতকিছু লাগানো যায় লাগাবেন তারপর ঘুরবেন ঘোরার জন্য নির্দিস্ট যায়গা যখন নেই তখন রাস্তায় শতশত, হাজার-হাজার, লাখে লাখ বৈশাখি মিছিল দিস টাইম ফর আফ্রিকা বাজারে এনেছে প্লাষ্টিকের বাশি দল ধরে প্যা-পো করে বাজাতে বাজাতে এদিক থেকে ওদিক কেউ কেউ রাত বারোটাতেই নতুন বছর ধরে নিয়ে পটকা ফুটাতে শুরু করেছেন সেটাও চলে যতক্ষন চালানো যায়
এই করে অবশ্য দিন চলে না লাভক্ষতির হিসেব কিছুটা হলেও করতে হয় লাভের হিসেব আবার একেজনের একেক রকম কারো বাংলা লাভ, কারো ইরেজি লাভ কারো বেচে লাভ কারো কিনে লাভ কারো লাভ দুইয়ের মধ্যস্থতা করে বৈশাখী কনসার্টের ডিজে একধরনের লাভ করে, আয়োজক করে আরেক ধরনের লাভ, দলেদলে ভীড়করা মানুষ করে আরেক ধরনের লাভ যে খায় তার এক ধরনের লাভ, যে খাওয়ায় তার আরেক ধরনের লাভ বেশ দুপয়সা কামানো যায় এইসময় বিক্রি বাট্টা ভালই নববর্ষ উপলক্ষে দোকান দিলেই লাভ। কারো আবার দোকান বন্ধ রেখে লাভ বছরে একটামাত্র দিন, পালন না করলে চলে!
স্যাটেলাইট টিভির কল্যানে আরো বহু মানুষের লাভের ভাগ্য খুলে গেছে এবছর বৈশাখী পোষাকে জাতিয় পতাকা কিভাবে তুলে ধরা হয়েছে জানিয়ে গেলেন একজন ফ্যাশন ডিজাইনার, তারপরই একজন শিল্পী দেখালেন কিভাবে দেশের সংস্কৃতিকে বিদেশী সংস্কৃতির সাথে মিশিয়ে বিদেশে পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে তারপরই হাজির বিপরীতমুখি বক্তব্য নিয়ে আরেকজন ওসব পান্তা-ইলিশ, রঙ চঙ এসব ব্যবসায়ীদের কারবার, শহুরে মানুষের সৃষ্টি এরসাথে হাজার বছরের বাঙালী সংস্কৃতির কোন সম্পর্ক নেই আজকাল এসব বলেও বেশ কামানো যায়
গ্রামাঞ্চলে হালখাতার বিষয়টি বোঝা সহজ যাকিছু বাকি জমেছে সেটা শোধ করবেন, বদলে মিষ্টিমুখ করবেন, হাতে একটা মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে বাড়ি ফিরবেন কথা একটাই, এক বছরের বাকি যেন আরেক বছরে না যায়
ঢাকা শহরের হালখাতার হিসেব মেলানো কঠিন কোনটা যোগ হয় কোনটা বিয়োগ হয় কে জানে    

0 comments:

 

Browse