এনালগ বাংলাদেশ চাই

Apr 23, 2011
নির্বাচনের আগে বারাক ওবামার জনপ্রিয়তা ছিল অসাধারন। নির্বাচনের আগেই অনেকে ধরে নিয়েছিলেন তিনি আমেরিকার প্রথম কালো প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন। এর কারন নিয়েও অনেক কথা বলা হয়েছে। যেদেশে নেতাদের প্রতিটি পদক্ষেপ মাইক্রোস্কোপে দেখা হয় সেখানে সেটা স্বাভাবিক। তিনি যদি ফেসবুকের অফিসে বেড়াতে যান তাহলেও লোকে আলোচনা করে সেখানে কেন গেলেন। তারসাথে মিল খুজে পান নির্বাচনের আগের সময়ের।
তাদের কথা উড়িয়ে দেয়া যায় না। নির্বাচনের আগে ফেসবুক-মাইস্পেস-টুইটারে ওবামার ছড়াছড়ি। তার ধারেকাছে কেউ নেই। তরুন প্রজন্মের ভোটাররা তখনই ইঙ্গিত পেয়েছে তাদের ভবিষ্যত ওই ডিজিটালে। এবং বারাক ওবামা পারেন সেই স্বপ্ন পুরন করতে।
তারপর বহু পানি গড়িয়েছে। বারাক ওবামার সেই জনপ্রিয়তা নেই। যেসব কথা বলেছিলেন তার ধারেকাছেও যাননি। তবে সামনের বছর আবার নির্বাচন। কাজেই প্রস্তুতি নিতে হয় এখনই। আবারও সেই ফেসবুক, সেই জুকারবার্গ। সেই কথাগুলিরই পুনরাবৃত্তি, ধনীদের ওপর ট্যাক্স বাড়ানো হবে, সামাজিক নিরাপত্তা বাড়ানো হবে।
ধুর, এসব জানার জন্য পৃথিবীর অর্ধেক ঘুরে আসা প্রয়োজন আছে না-কি! এই বাংলাদেশই বা উদাহরনে কম কিসে ? দেশের নামই তো দেয়া হয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ।
ডিজিটাল বাংলাদেশের বিবরনও নেতারা কম দেননি। কৃষকের কাছে ইন্টারনেট পৌছে দেয়া হবে। তারা সব ধরনের পরামর্শ পাবে ইন্টারনেট থেকে। আপনি নিতান্ত গাধা গলেই প্রশ্ন করতে পারেন চাষাবাদ মানুষ করে আসছে কয়েক হাজার বছর ধরে, একজন কৃষকের পুত্র জন্ম থেকে দেখে কিভাবে চাষ করতে হয়, তাকে কোন কোট-টাই পড়া ভদ্রলোক এসিরুমে বসে কৃষির পরামর্শ দেবেন!
সবাই আপনার মত গাধা নন বলে ওপ্রশ্ন করেন না। সরকার যখন বলেন টেলিমেডিসিন পদ্ধতিতে চিকিতসা দেয়া হবে সবাই হাততালিই দেন। মৃতদেহ ইনটেনসিভ কেয়ারে রেখে লাখদশেক টাকা নেয়ার পর লাশ ফেরত দেয়া হয়েছে, ওসব গুজব। জন্মমৃত্যু আল্লার হাতে। ওসব নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন না। পাড়ায় পাড়ায় ক্লিনিক তৈরী হচ্ছে, সেখানে যান। কিংবা পাড়ায় পাড়ায় বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় তৈরী হচ্ছে সেখানে যান।
কথা হচ্ছে, ডিজিটাল দেশে ইন্টারনেটের ব্যাপক প্রসার ঘটাতে হবে। ওইযে সবাই বলছে, আউটসোর্সিং হবে এদেশের প্রধান আয়ের উতস। গার্মেন্টস শিল্পকে ছাড়িয়ে যাবে। আপনারা দলেদলে কাজ পাবেন। এখন কয়েক কোটি বেকার আছে ঠিকই, এক ফুয়ে সব দুর হয়ে যাবে।
আবারও সেই গাধার প্রশ্ন, ইন্টারনেটের প্রসার ঘটবে কার কাছে যখন ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য অন্য দেশের তুলনায় কয়েকগুন বেশি টাকা দিতে হয়। কিংবা ইন্টারনেট দিয়ে করবেই বা কি যেখানে অনলাইনে লেনদেন করা অপরাধ। কেনা যাবে না, বেচা যাবে না, কাজ করে টাকা পাওয়া যাবে না। আয়-ব্যয়ের সাথে যার সম্পর্ক নেই সেই ইন্টারনেট কি তবে পাইরেসি আর পর্নোগ্রাফির প্রচারের জন্য ...
ওই পাইরেসির কথা আর বলবেন না। ওটা আছে বলেই তো টিকে আছি। নইলে সফটঅয়্যার কিনবেন কোথায় শুনি ? সবাই ইন্টারনেটে সফটঅয়্যার রেখে বসে আছে। তারমানে সেই অনলাইনে টাকা দেয়া, বিদেশে অর্থ পাচার।
যাকগে গাধার কথা কান দিতে নেই। কাজের কথা হচ্ছে, রিক্সা যদি কাঠের তৈরী হয় তারনাম রিক্সা, যদি লোহার তৈরী হয় তারনাম ডিজিটাল রিক্সা। ডিজিটাল চাষ, ডিজিটাল মাছের খামার, এভাবেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলুন।
লোকে বলাবলি করছে বারাক ওবামা আবারও সেই একই পথ ধরেছেন। যদি আবারও সাফল্য পাওয়া যায়। এখানে হয়ত জীবনের ঝুকি নিয়ে কেউ ওকথা বলতে যাচ্ছে না, ওখানে কেউ বলতেও পারে, অমন ডিজিটাল দরকার নেই। বরং এনালগ দেশ চাই।  

0 comments:

 

Browse